ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

ঢাকা-নারিতা ফ্লাইটের প্রচারণা

জাপান যাবেন ৭৯ অতিথি, সরকারের খরচ ২০ কোটি টাকা!

মাছুম কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২৩
জাপান যাবেন ৭৯ অতিথি, সরকারের খরচ ২০ কোটি টাকা!

ঢাকা:  আগামী ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ-জাপান সরাসরি বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট চলাচল শুরু হচ্ছে। এ উপলক্ষে উদ্বোধনী ফ্লাইটে ৭৯ জনের মতো অতিথি নিচ্ছে বিমান।

পাঁচদিন জাপান থাকবেন সবাই। এ সময়ের জন্য বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ বিমান সূত্রে, এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ও অধীনস্থ কোম্পানিগুলোতে দেওয়া কৃচ্ছ্রসাধনের নির্দেশনা উপেক্ষা বাংলাদেশ বিমানের এই ভ্রমণের খবর নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।  
 

যে রুটে যাওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা:

বিমান সূত্রে জানা গেছে, জাপানের নারিতায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট চলাচল চূড়ান্ত করা হয়েছে। সপ্তাহে তিন দিন ঢাকা থেকে নারিতায় ফ্লাইট আসা-যাওয়া করবে। ইতোমধ্যে ওই রুটের টিকিট বিক্রিও চলছে।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৫ জুলাই থেকে এ রুটের টিকিট বিক্রয় শুরু হয়েছে। ঢাকার পাশাপাশি কাঠমান্ডু, দিল্লি ও কলকাতা থেকেও যাত্রীরা বিশেষ মূল্যে ওই রুটের টিকিট কিনতে পারছেন। ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট মূল্যে টিকিট বিক্রি হয়েছে। অফার ছাড়া ঢাকা থেকে এ রুটের একমুখী সর্বনিম্ন ভাড়া ৭০ হাজার ৮২৮ থেকে শুরু এবং রিটার্ন টিকিটের মূল্য শুরু জনপ্রতি ১ লাখ ১১ হাজার ৬৫৬ টাকা।

ঢাকা থেকে সপ্তাহে প্রতি শুক্র, সোম ও বুধবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিট বিমানের ফ্লাইট নারিতার উদ্দেশে যাত্রা করবে এবং নারিতা থেকে সপ্তাহে প্রতি শনি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে। ১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার, বিমানের ফ্লাইট বিজি-৩৭৬ স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে জাপানের নারিতা পৌঁছবে স্থানীয় সময় শনিবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে। নারিতা থেকে প্রথম ফ্লাইট বিজি-৩৭৭ নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আগামী ২ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল ১১টায় উড্ডয়ন করে ঢাকায় পৌঁছাবে শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর ৩টায়।

যে কারণে সমালোচনা:

গত ২ আগস্ট বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবদুল আউয়াল স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং আওতাধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, পাবলিক সেক্টর, করপোরেশন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিসমূহের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। সেখানে স্বাক্ষর করেছেন বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী শফিউল আজিম।  

এমন পরিপত্রের পরও বিমান এ সময়ে ৭৯ জনের বিশাল বহর নিয়ে নারিতায় যাওয়ায় এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, অতিথিদের মধ্যে কেউ ‘তদবির’ করে নাম লিপিভুক্ত করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। নারিতায় যাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়, বিমান, বেবিচক কর্মকর্তা ও মিডিয়াকর্মীরা তদবির করেছেন। মোট ৭৯ জনের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।  

এর মধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের ২০ জন কর্মকর্তা সফরে যাচ্ছেন। এছাড়া, বিমানের এমডি ও সিইওসহ বিমানের ২৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল—যার মধ্যে বিপণন, বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য বিভাগের পরিচালক ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও রয়েছেন।  

সাংবাদিক প্রতিনিধিদলে ২১ জন সদস্য এবং ১০টি ট্রাভেল এজেন্সি, বিমানের টিকিট বুকিংসহ অনলাইনভিত্তিক পরিষেবার কাজ পাওয়া জিডিএস (গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম) কোম্পানির ৪ জন মিলে মোট ১৪ জন প্রতিনিধি থাকবে।

বিমানের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বিমান কর্তৃপক্ষ ২১ আগস্ট ৭৯ জনের প্রাথমিক তালিকা বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। তালিকাটি প্রস্তুত বিমানের মহাব্যবস্থাপক (রাজস্ব) মোহাম্মদ মিজানুর রশীদ এবং মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন তালিকা তৈরি করেছেন। তালিকা প্রস্তুতে তারা ‘অনিয়ম’ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।  

একটি ট্রাভেল এজেন্সি এই মর্মে অভিযোগ করেছে যে, তারা বিমানের লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও তাদের পরিবর্তে শীর্ষ ১০টি এজেন্সির বাইরের একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘অর্থের বিনিময়ে’ নারিতায় যাওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে কি বলছেন সংশ্লিষ্টরা:

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের অর্থ ও রাজস্ব শাখার মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, এটা একটা মিথ্যা অভিযোগ। আমি ওই তালিকা প্রণয়ণের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। থাকলে তো আমি আমার নামটাই আগে দিতাম। আমার তো বিভাগই ভিন্ন। এটা আমাকে হেয় করার জন্য বলা হয়েছে। একটা কমিটি করা হয়েছে এ সংক্রান্ত। সেখানেও আমি নেই। এগুলো মূলত পরিচালন বিভাগ এবং মার্কেটিং, জনসংযোগ বিভাগ দেখেন।

পরে, এ বিষয়ে জানার জন্য বিমানের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা চালালেও তিনি তার ‘চিরাচরিত নিয়ম’ মেনে কল রিসিভ করেননি।

সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিম বাংলানিউজকে বলেন, জাপান এমন কোনো জায়গা না যেখানে আপনি দু'জন নিয়ে গেলেন, আর ফ্লাইট পরিচালনা করে চলে আসলেন। এটা নিয়ে কেনো এত কথা হচ্ছে আমি জানি না। আমরা একটা প্রাথমিক তালিকা করেছি। এটা কমতেও পারে, বাড়তেও পারে। সেটি রোববার (কাল) জানা যাবে। যারা এ নিয়ে না জেনে নিউজ করেছে, তাদের এভিয়েশনের নিউজ বাদ দিয়ে ঠেলাগাড়ি ঠেলতে বলেন।

একটি ট্রাভেল এজেন্সিকে বাদ দিয়ে অন্য এজেন্সিকে অনিয়ম করে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি কেন ওই এজেন্সির কথা বলছেন। আরও একজন বলেছেন। ওরা একটি বেসরকারি এয়ারলাইনসের র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। ওদের নিলে ওরা আমার ব্যবসায়ের স্ট্র‍্যাটেজি জেনে যাবে। আমার যাকে দিয়ে লাভ হবে, আমি তো তাকেই নেব।

জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে জাপানের টোকিও রুটে ফ্লাইট চালু করেছিল বিমান। ১৯৮১ সালে সাময়িক বিরতির পর ঢাকা-নারিতা রুটে প্রথম ফ্লাইট শুরু করে বিমান। পরে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক না হওয়ায় ২০০৬ সালে জাপানের সঙ্গে বিমানের সরাসরি এ ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। ১৭ বছর পর ১ সেপ্টেম্বর আবার চালু হতে যাচ্ছে এ রুট।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২৩
এমকে/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।