সিলেট: পাথরের সঙ্গে স্বচ্ছ জলরাশির মিতালী, প্রকৃতির অপরূপ মায়াজালে বার বারই পর্যটকদের কাছে টানে সিলেটের সাদা পাথর।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে ভারতের সীমান্তঘেষা এলাকায় অবস্থিত সাদা পাথরের পরশ নিতে এবারও ভিড় করছেন ভ্রমণপিপাসুরা।
কেবল সাদা পাথর নয়, জল-পাথরের কলতানে মুখর বিছানাকান্দি ও পান্থুমাই ঝর্ণার অপরূপ সৌন্দর্যেও মুগ্ধ পর্যটকরা। আর জাফলংয়ের পিয়াইনের স্বচ্ছ জলে সাঁতার কাটতে কার না মন চায়। এই ঈদেও সিলেটের এসব পর্যটন কেন্দ্রে ঢল নেমেছে পর্যটকদের।
এছাড়া জলার বন রাতারগুল ও সবুজের শীতলপাটি চা বাগান এবং গোলাপগঞ্জের আনারস বাগানের সৌন্দর্য বার বার যেন ভ্রমণপিপাসুদের টেনে আনে। তাইতো এবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতেও বেড়ানোর জন্য সিলেটকেই বেছে নিয়েছেন পর্যটকরা। যে কারণে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর সিলেট।
ঈদের পরদিন থেকেই বিপুলসংখ্যক পর্যটক সিলেটে অবস্থান করছেন। আর সিলেটে আসার অন্যতম কারণ ঘুরাঘুরি ছাড়াও ৩৬০ আউলিয়ার শিরোমনি হযরত শাহজালাল (র.) ও শাহপরান (র.) মাজার জিয়ারত এবং গোলাপগঞ্জে শ্রী চৈতন্যের লীলাভূমি দর্শন।
সিলেট নগর থেকে মাত্র ৩৩ কিলোমিটার দূরে সাদাপাথর ধলাই নদীর শীতল পানির স্পর্শ পেতে পর্যটকরা ছুটে আসেন সারা বছর। একদিকে ভারত,অন্যদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বয়ে গেছে ধলাই নদী। নদীর দুই পাড়ে সারি সারিভাবে অসংখ্য সাদা রঙের পাথর। নীল আকাশ ও সবুজ পাহাড় বরাবরই পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
রাজধানী ঢাকার ওয়ারি থেকে সাদাপাথর ঘুরতে আসা সুহেল আহমদ ও সায়মন আবিদ বলেন, সাদাপাথরের অপরূপ সৌন্দর্য কার না ভালো লাগে? এখানে এলে প্রকৃতির শীতল পরশ মনকে চাঙ্গা করে, রাজ্যের ব্যস্ততা ভুলিয়ে দেয়।
এদিকে, সাদা, পাথর, বিছানাকান্দি, পান্থুমাই, জাফলং, রাতারগুল জলারবন, খাদিমনগর জতীয় উদ্যান, ইকোপার্ক, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মিনি কক্সবাজার খ্যাত হাকালুকি , মৌলভীবাজারের মাধবকুন্ড, শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া উদ্যান, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, নিলাদ্রিসহ সব কটি পর্যটন কেন্দ্রে ঈদের ছুটেতে ঘুরতে এসেছেন ভ্রমণপিপাসুরা।
বিছানাকান্দিতে কুমিল্লা থেকে বেড়াতে আসা শিক্ষিকা দিলরুবা আক্তার বলেন, বেড়ানোর জন্য সিলেট আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দ। কেননা, এখানে পরতে পরতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। শহর কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চল সব জায়গায় দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সাদা পাথর, জাফলংয়ে পর্যটকদের সীমাহীন ভিড়। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সিলেট যেন ভ্রমণপিপাসুদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে।
এসব পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। সিলেট রিজিয়নের পুলিশ পরিদর্শক আখতার হোসেন বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। সাদাপাথরে এই ঈদে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোক ঘুরতে আসছেন। আমাদের কয়েকটি টিম সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে। পর্যন্ত পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করছেন।
তিনি বলেন, কেবল সাদা পাথর নয়, পবিত্র ঈদুল ফিতরে অধিকসংখ্যক পর্যটক আসাতে সিলেটের সবকটি পর্যটন কেন্দ্রে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ঈদ মৌসুমে সিলেটে হোটেল-মোটেলে আবাসন সংকট দেখা দিয়েছে। তিল ধারণের ঠাঁই নেই হোটেল-মোটেলে। এবার বৃহত্তর সিলেটে অন্তত ১০ লাখ পর্যটক এসেছেন ধারণা হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষের। আর পর্যটকরাও বেড়ানোর জন্য সিলেটকে সবদিক থেকে নিরাপদ মনে করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৪
এনইউ/এসএএইচ