ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

পঞ্চগড়ের আকাশে উঁকি দিয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২৪
পঞ্চগড়ের আকাশে উঁকি দিয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা আজ সকালে পঞ্চগড় সদরের সাতমেরা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী টিটিহিপাড়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবিটি তুলেছেন সোহাগ হায়দার

পঞ্চগড়: আকাশে মেঘ ও কুয়াশার পর দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের মেঘমুক্ত আকাশে উঁকি দিতে শুরু করেছে হিমালয়ের দ্বিতীয় উচ্চতম ও পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা।  

জেলা শহরসহ তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ছবির মতো ভেসে উঠছে এ পর্বতশৃঙ্গটি।

আর তা দেখতে পর্যটকদের ভিড় লেগে গেছে এ জেলায়। অনেকেই আবার পর্বতশৃঙ্গটির মোহনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করতে কয়েকদিন আগেই সীমান্ত জেলা ও পর্যটন নগর তেঁতুলিয়ায় এসে আছেন।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে ৭টা পর্যন্ত মেঘমুক্ত আকাশে পর্বতশৃঙ্গটি দেখা গেছে। তেঁতুলিয়া উপজেলার ডাকবাংলো পিকনিক কর্নারসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পর্যটকদের কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখা গেছে। পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়াই খালি চোখে এমন দৃশ্য দেখতে পেয়ে খুশি তারা।

হেমন্ত ও শীতের এ সময়ে দেশের শুধুমাত্র পঞ্চগড় থেকে খালি চোখে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা।  

মাউন্ট এভারেস্ট ও কে টু এর পরে এর স্থান। পর্বতের কিছু অংশ ভারতের সিকিম ও কিছু অংশ নেপালে অবস্থিত। পঞ্চগড়ের প্রায় সব জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা খালি চোখে দেখা গেলেও সবচেয়ে ভাল দেখা যায় সীমান্ত নদী মহানন্দা তীরের ঐতিহাসিক তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো পিকনিক কর্নার থেকে।

সূর্যের আলোর সঙ্গে কখনও শুভ্র, কখনও গোলাপী আবার কখনও লাল রঙ নিয়ে হাজির হয় বরফ আচ্ছাদিত এ পর্বত চূড়াটি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা ঝাপসা হয়ে এলে রঙ হয় সাদা। আর এ সৌদর্য উপভোগ করার মোক্ষম সময় ভোর, সকাল ও বিকেল বলে জানান স্থানীয়রা।

নওগাঁ থেকে বাইক নিয়ে ঘুরতে আসা সুমন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সকালে বাইক নিয়ে বন্ধুরা তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসেছি। তবে এখানে আসার সঙ্গে সঙ্গে ডাকবাংলো পিকনিক কর্নারে মহানন্দা নদীর তীর থেকে পর্বতটি দেখতে পেয়েছি। আমাদের এ যাত্রা সফল হয়েছে।

একই কথা জানান আবির হোসেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বছরের শুরু থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার জন্য তেঁতুলিয়া আসার পরিকল্পনা ছিল। তবে আজ দেখা না গেলে আমাদের রাত থাকার প্লান ছিল। যেহেতু দেখা হয়েছে, তাই অন্য স্থানগুলো ঘুরে আবার বাড়ি ফিরে যাব।

তবে ঢাকা থেকে আসা রাজিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে পৌঁছাতে একটু দেরি হওয়ায় দেখার সৌভাগ্য হয়নি। অন্য পর্যটক ও স্থানীয়রা জানালেন যে সকালে দেখা গেছে। যেহেতু আজ দেখা হয়নি, তাই আগামীকাল দেখার জন্য তেঁতুলিয়ায় থাকব।

চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কিছুক্ষণের জন্য কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। যখন পর্বতটি লুকিয়ে যাচ্ছিল, তখন আমরা পৌঁছাতে পেরেছি। তাই কিছুক্ষণের জন্য দেখতে পেরেছি। সঙ্গে তেঁতুলিয়ার মানুষ অনেক আন্তরিক হওয়ায় বিষয়টি আরও ভালো লেগেছে।

খুলনা থেকে ঘুরতে আসা ফাহিম হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ফেসবুক ও টিভিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা অনেক দেখেছি। বাস্তবে এবারই প্রথম দেখার সুযোগ হলো। টিভির চেয়ে সরাসরি আরও সুন্দর।

স্থানীয় লোকজন জানান, কেবল মেঘমুক্ত ও কুয়াশামুক্ত গাঢ় নীল আকাশ থাকলেই দেখা যায় হিমালয়ের এ পর্বতশৃঙ্গ। গত কয়েকদিন অবয়ব দেখা দিলেও বৃহস্পতিবার সকালে পরিষ্কারভাবে আকাশে দেখা দিয়েছে। ভোরে সব থেকে ভালো দেখার কারণ হচ্ছে আলো ফুটতেই তা গিয়ে পড়ে ঠিক কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায়। তাই পর্যটকরা ফজরের আজানের পর পরই পৌঁছালে অনেক সময় ধরে পর্বতটি দেখতে পারবেন। নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত মেঘমুক্ত আকাশে দেখা দেবে কাঞ্চনজঙ্ঘা।

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বী বাংলানিউজকে বলেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা আমাদের তেঁতুলিয়া থেকে দেখা যায়। আর এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন। যেহেতু একদিকে তেঁতুলিয়া পর্যটন এলাকা অন্যদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার মৌসুম। তাই পর্যটকদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব বিষয়ে আমরা নজর রেখেছি। তারা যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে নজর রাখছি। আবাসিক হোটেল থেকে শুরু পরিবহনের লোকজনের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে, যাতে পর্যটকদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তারা দেখেন। আর থানা পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন মিলে আমরা তৎপর রয়েছি। পর্যটকরা কোনো সমস্যায় পড়লে আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২৪
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।