ঢাকা: গাছগাছালি ঘেরা সবুজ প্রকৃতির এক দ্বীপ। নাম নিঝুম দ্বীপ।
জেসমিন পাপড়ি বাংলানিউজের ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট। বিশেষ অ্যাসাইনমেন্টে এখন ঘুরছেন দেশের উপকূল অঞ্চলে। রাজধানী থেকে কয়েক শ কিলোমিটার পথ কোথাও গাড়িতে কোথাও লঞ্চ, কোথাও ট্রলার চেপে পাড়ি দিয়ে অতঃপর সমুদ্র ঘেঁষা দ্বীপটিতে পৌঁছেছেন তিনি। সেখানে প্রকৃতি যেমন সবুজ, জনজীবন যেমন সহজ-সরল ততটা স্বাভাবিক নয় এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিচ্ছিন্ন বলেই হয়তো সেখানে দস্যুদের অভয়ারণ্য। তাতে ঝুঁকিটা বড়। কিন্তু তারও মাঝে স্রেফ পেশাগত টানে, কিছু ভালো রিপোর্টের সন্ধানে সেই নিঝুম দ্বীপে অবস্থান করছেন এই নারী সাংবাদিক। সঙ্গে রয়েছেন, বাংলানিউজের ফেনী থেকে কর্মরত স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ডালিম হাজারি।
মায়াকাড়া হরীণের বনে ঘুরে ঘুরে এক বেলাতেই নিঝুম দ্বীপের মায়ায় পড়ে গেছেন পাপড়ি। টেলিফোনে আলাপকালে সেকথাই বলছিলেন, এখানকার দ্বীপের সৌন্দর্য, ঝিম ধরা একটা ভালোলাগা সময় আর হরীণগুলোর পালে পালে ছুটে বেড়ানো দেখে কারোই আর ফিরতে মন চাইবে না।
দ্রুতই বাতলে দিলেন কিভাবে যেতে হবে। হাতিয়া থেকে ট্রলারযোগে ৩০ মিনিটের যাত্রা। এরপর মুক্তাদিয়ার ঘাটে নামলে আর কোনও বাহন নেই মোটরবাইক ছাড়া। সড়কটি ছুটে গেছে মাইলের পর মাইল দুই ধারে পানি। সৌন্দর্য্য যার চোখ আটকে রাখার মতো। এভারে যেতে যেতে হঠাৎই চোখে পড়বে দুই দিকে জঙ্গল। কোথাও ভারি, কোথাও হালকা। সুন্দরী কেওড়া, গড়াই। সুন্দরবনের অন্যরুপ। কংক্রিটের ব্লক বসানো এই সড়ক পথে এগিয়ে যেতে হবে আরও কিছু দূর। এরপরই আপনার চোখে পড়বে লোকালয়। শুরুতেই নামার বাজার। এরপর ধীরে ধীরে জনবসতি চোখে পড়বে।
৩৯ বর্গকিলোমিটারের নিঝুম দ্বীপে ৬০ হাজার মানুষের বসবাস। পুরো দ্বীপেই সৌন্দর্য্য ছড়িয়ে রয়েছে। তবে যে ১৫ হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমি তা দেখার মতো, বলেন জেসমিন পাঁপড়ি। আর বন পেরিয়ে সমুদ্র সৈকত আপনার মন ভরিয়ে রাখবে।
পাঁপড়ি জানালেন, দেখতে পেয়েছেন এখানে সেখানে ঘুরছে হরীণের পাল। ওদের কেউ ধরতে চেষ্টা করে না, বিরক্তও করে না। তবে মূল শত্রু কুকুরগুলো। হরীণকে কামড়ে দিলে অসুস্থ হয়ে পড়ে আর ধীরে ধীরে মারা যায়।
মানুষগুলো সহজ সরল। এরা মাছ ধরে। বিক্রি করে। দুইবেলা দুইমুঠো খেতে পেয়ে শান্ত জীবন যাপন করে। কিন্তু এরপরেও নেই তাদের শান্তির জীবন। যার অন্যতম কারণ জলদস্যুর দল। একেকবার দস্যুর কবলে পড়ে সর্বস্ব হারান একেকজন জেলে। ফের ঘুরে দাঁড়ানো সংগ্রাম চলে। তবে দস্যুর ভয় কাটে না।
জেলে পাড়ায় শিশুদের লেখা-পড়ার বালাই নাই। অনেকেই জেলের জীবনকেই ধরে নিয়েছে ভবিষ্যতের পথ হিসেবে। দিনভর এখানে ওখানে শিশুদের মাছ কিংবা কাঁকড়া ধরতে ব্যস্ত দেখা গেলো। তবে তার মধ্যেও কিছু কিছু পরিবারে শিশুরা এখন স্কুলে যায়, তার সংখ্যা অবশ্য কম, বলেই মনে হয়েছে জেসমিন পাঁপড়ির।
সংবাদ-কর্মী দেখে সাধারণ মানুষগুলো তাদের দুঃখ দুর্দশা নিয়ে বেশি বেশি লেখার জন্য অনুরোধ জানালেন। কিন্তু জলদস্যুদের কারণে নিঝুম দ্বীপের সাধারণ মানুষের চোখে মুখে আতঙ্ক লেগেই থাকে।
নিঝুম দ্বীপে এই কারণেই পর্যটকদের আনাগোনা কম। নিরাপত্তার ব্যবস্থা যতটা তার চেয়ে এই দস্যুদের শক্তি অনেক বেশি এমনটাই জানালেন সেখানকার মানুষগুলো।
একজন নারী সাংবাদিক এই ভীতির দ্বীপে, ভয় লাগছে না? এমন প্রশ্নে জেসমিন পাপড়ির উত্তর, ভয়ের উর্ধ্বে উঠেই কাজ করতে হয়। দস্যু দলের একজন সদস্যের সঙ্গে দেখা হবে এবং কথা বলে জানার চেষ্টা করবেন, কেনই তারা এমন সব অপকর্মে লিপ্ত, জানান তিনি।
নিঝুম দ্বীপের সবুজ গাছ-গাছালিকে আরও সবুজ করে তুলতে হবে, হরীণগুলোকে রক্ষা করতে হবে কুকুরের আক্রমন থেকে, শিশু-কিশোরদের মাছ বা কাঁকড়া ধরতে নয়, পাঠাতে হবে স্কুলে, আর জেলেদের রক্ষা করতে হবে দস্যুর হানা থেকে। তাহলেই এখানে নেমে আসবে সুন্দর জীবন, একদিন নিঝুম দ্বীপের এখানে ওখানে ঘুরে দেখে এমনটাই মনে হয়েছে জেসমিন পাপড়ির।
বাংলাদেশ সময় ১৮০৭ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৬
এমএমকে