ফয়’স লেক (চট্টগ্রাম) থেকে: রিসোর্টের বাইরে পা রাখতেই সামনে বিশাল লেকে মাছের খেলা। ঠিক পেছনেই পাহাড়ের নিবিড় জঙ্গলে পাখির কিচিরমিচির শব্দ আপনার সকালটাকে করে তুলবে সতেজ।
শুধু কি সতেজ সকাল, রাতটাই বা কম কিসে! চারদিকে সুনশান নীরবতা। ঝিঝিপোকা আর ব্যাঙের বিরামহীন ডাক, মাছের লাফালাফি আর রাতচরা পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ ছাড়া আর কিছুই আপনার কানে আসবে না। এমনকি নিজের শ্বাস-প্রশাসের শব্দও প্রতিধ্বনিত হবে।
বলছিলাম চট্টগ্রাম শহরের নান্দনিক ফয়’স লেক রিসোর্ট ও বাংলোর কথা। নগর জীবনের শব্দ আর যান্ত্রিকতায় যারা অতিষ্ঠ, একটু নিরিবিলিতে খানিকটা একান্তে সময় একান্তে কাটাতে কিংবা বুক ভরে নির্মল বাতাস নিতে চান; তাদের জন্য আদর্শ রিসোর্ট হতে পারে এটি। তবে সেখানে পায়ে হেঁটে পৌঁছাবার উপায় নেই, যেতে হবে রোমাঞ্চকর নৌ ভ্রমণের মধ্য দিয়ে।
এ রিসোর্টে কী কী আছে না বলে কী নেই প্রশ্নটাই তাই যথার্থ। কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিশাল লেকের স্বচ্ছ জলরাশি আপনার শরীর-মনকে চনমনে করে তুলবে। চাইলে নৌকায় করে ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে লেক, চারপাশের প্রকৃতি।
নৌকায় লেকে ঘুরতে গিয়ে দেখা মিলবে ঘন নিবিড় অরণ্যে ঢাকা সারি-সারি পাহাড়। তাতে হরেক রকম পাখির বিচরণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো কাছে টানবে। মন চাইবে নৌকা থেকে নেমে পাহাড়ের গা ঘেঁষে হাঁটতে। অবশ্য, সে ব্যবস্থাও রয়েছে। চাইলে ট্রেইল ধরে ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে মায়ারী পাহাড়ও। যেখানে অংসখ্য প্রজাতির বনজ, ফলদ আর ভেষজ বৃক্ষরাজির সমাহার।
এছাড়াও টিলাগুলোতে ঘোরাঘুরির সময় উন্মুক্ত বানরদের শারীরিক কসরত আপনাকে মুগ্ধ করবে। এখানে সারাদিন একা কিংবা সঙ্গীসহ হাঁটলেও আপনার রোমাঞ্চ ব্যাহত করার কেউ নেই। পুরো এলাকাতেই রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ঘোরাঘুরির সঙ্গে এখানে রয়েছে শাহী খানাপিনার ব্যবস্থা। পর্যটকদের চাহিদামতো খাবার সরবরাহের পাশাপাশি বাংলা, ইন্ডিয়ান ও চাইনিজ খাবারের নানান পদ রয়েছে ফয়’স লেক রিসোর্টে।
প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি রয়েছে বেশকিছু খেলাধুলার ব্যবস্থা। ওয়াটার পার্কে ওয়েব পুল, ড্যান্সিং জোন, চিলড্রেন পুল, ফ্যামিলি পুল, ডম স্লাইট ও মাল্টি স্লাইডে সারাদিন মেতে থাকার সুযোগ।
নৌকায় লেক পারাপার করা যাবে বিনামূল্যে যতো খুশি ততোবার। শর্তসাপেক্ষে পাওয়া যাবে গাছের ছায়ায় বসে হুইল দিয়ে মাছ শিকারের অনুমতি। ফলে ব্যতিব্যস্ত আপনার দিনগুলো এখানে কেটে যাবে অনেকেটাই নিমিষেই।
শিশুদের জন্যও রিসোর্ট এলাকা উপযোগী করে তোলা হয়েছে। রয়েছে শিশুদের উপযোগী সুইমিং পুল, বাইসাইকেল রাইডিং।
রিসোর্টে কক্ষ রয়েছে ৩৬টি আর বাংলোতে ১২টি। এগুলোর মধ্যে সুপেরিয়র লেক ভিউ ৪ হাজার ৯৪৫ টাকা, ডিলাক্স ৫ হাজার ৫০০ টাকা, সুপার ডিলাক্স ৬ হাজার ৮০০ টাকা। সুইট ১০ হাজার ৫০০ টাকা। ভিন্ন টিলার চূড়ায় অবস্থিত বাংলোতে সিলভার, গোল্ড ও প্লাটিনাম ক্যাটাগরির পৃথক কক্ষ রয়েছে রাতযাপনের জন্য।
রয়েছে বিশাল হলরুম। যেখানে ১০০ থেকে ১২০ জন একত্রে সারতে পারেন আলোচনা। পুরো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই হলরুমটির জন্য ভাড়া গুণতে হবে ২৫ হাজার টাকা।
নগরীর কোলাহল ছেড়ে মুক্ত বাতাস সঙ্গে অফিসিয়াল গ্রুপ মিটিং সারতে অনেকেই আসছেন ফয়’স লেকে। আবার পারিবারিক ট্যুরে আসা অনেকেই এখন আর চট্টগ্রাম বন্দরনগরীতে অবস্থান করছেন না। জিরো পয়েন্ট থেকে ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন ফয়’স লেক রিসোর্ট ও বাংলোতে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৬
এসআই/এসআর