কক্সবাজার থেকে: চার-পাঁচ দিনের জন্য বুকিং দিয়ে আসেন। ভাড়াও জমা দেন।
এই প্রবণতা পঞ্চাশ-ষাট শতাংশ মানুষের বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজার হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ওমর সুলতান।
তিনি প্রথম শহরের খানিকটা বাইরে এসে কলাতলিকে আবাসিক হোটেল ‘জিয়া গেস্ট ইন’ নির্মাণ করেন।
তিনি বলেন, লোকজন কক্সবাজারে এসে বিচ দেখার পর আর কিছু না থাকায় হতাশ হচ্ছেন। সে কারণে দ্রুত চলে যাচ্ছেন। অথচ মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্বে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দ্বীপ সোনাদিয়ার অবস্থান। সেটাকে আমরা তুলে ধরতে পারছি না। তবে ইদানিং পরিস্থিতি কিছুটা বদলে যাচ্ছে বলেও দাবি করেন ওমর সুলতান।
তিনি বলেন, কক্সবাজারে কী কী দেখার আছে অনেকেই জানেন না। আমরা এগুলোকে তুলে ধরতে পারছি না। সবকিছু দেখতে হলে এক মাসেও বেড়ানো শেষ হবে না।
হোটেল মালিক সমিতির এই নেতা সরকারের ওপর কিছুটা আক্ষেপ ঝেড়ে বলেন, সরকার কিছুই করছে না। সেন্টমার্টিনের থেকে হাজারগুনে সুন্দর সোনাদিয়া দ্বীপ। স্পিড বোর্টে যেতে সময় লাগে মাত্র পাঁচ থেকে ছয় মিনিট। সেখানে একদিকে রয়েছে স্যান্ডি বিচ, অন্যদিকে প্রজাপতি পার্ক ও মাকড়সার বন।
বছরের একটা বিশেষ সময়ে (ডিসেম্বর) প্রজননের জন্য সাগরপাড়ি দিয়ে প্রজাপতিরা এখানে আসে বলেও দাবি করেন তিনি। বিশ্বের কোথাও এমন সুন্দর দ্বীপ নেই বলেও মন্তব্য তার। আর সেই দ্বীপটি পড়ে রয়েছে অবহেলায় অনাদরে। সরকারকে অনেকবার বলা হলেও সোনাদিয়াকে উন্মুক্ত করা হয় নি।
এসব কারণে কোন ফোরামেও আর তেমন একটা যান না তিনি। আক্ষেপ করে বলেন, গিয়ে লাভ কী? শুধু চা খাওয়া আর কতখন বকবক করা। কোনো লাভ তো হয় না। তাই বলাও ছেড়ে দিয়েছি।
সোনাদিয়া নিয়ে একই রকম মতামত প্রকাশ করেন কক্সবাজার হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদারও।
তিনি বলেন, সোনাদিয়া যাওয়ার পথে মহেষখালী-সোনাদিয়া চ্যানেলে দেখতে পাবেন হাজার হাজার পাখি। এই সৌন্দর্যটাকে আমরা কাজে লাগাতে পারছি না।
আবুল কাশেম সিকদার মনে করেন, এখন কক্সবাজার বদলে যাচ্ছে। আগে সন্ধ্যার পর কিছুই থাকতনা। এখন রাত বারোটা পর্যন্ত সুগন্ধা বিচ এলাকায় সি ফুড বেচা-কেনা চলে। এই টুংটাং শব্দটা ভোর পর্যন্ত রাখা গেলে ভালো হতো। এখানে রাত হলে লোক আসতে চাইবে না।
কক্সবাজারের হোটেলগুলো এখন অনেক বেশি অতিথি ও ফেন্ডলি দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের হোটেলগুলোতে গেলে দেখবেন রুমে একটা বেড রয়েছে। কিন্তু এক্সট্রা বালিশ দেওয়া আছে তিন-চারটি। আমরা বলি কেউ যদি বেড শেয়ার করে থাকতে পারে তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু ঢাকায় রুমে অতিরিক্ত অতিথি থাকতে দেওয়া হয় না।
কক্সবাজার থেকে ইনানী পর্যন্ত ট্যুরিস্টদের উপযোগী বাস সার্ভিস চালু করার প্রস্তাব সমিতির পক্ষ থেকে দির্ঘদিন ধরে ঝুলে রয়েছে। এখন রিজার্ভ গাড়ি ছাড়া কোন উপায় নেই। এতে অনেক বেশি খরচ হয়ে যায়। এতে মানুষকে হতাশ করে বলে মন্তব্য করেন তারা।
তবে কিছু টাউট শ্রেণির লোকজনের কারণে কক্সবাজারের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তাদের পেইড কিছু রিকশা ও অটোচালক রয়েছে। যারা যাত্রীদের ফুসলিয়ে এসব নিম্নমানের হোটেলে নিয়ে তুলনামূলক বেশি ভাড়া আদায় করছে। এতে মানুষ কিছুটা বিরক্ত হচ্ছে। তারা বারবার বলে আসছেন এই দাদালদের দৌরাত্ব বন্ধ করার জন্য। কিন্তু প্রশাসন কানে নিচ্ছে না বলে অভিযোগ সমিতির।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৬
এসআই/আরএ