মারমেইড বিচ রিসোর্ট ঘুরে: কাজের জোর তাড়া আকতার- সেলিমদের। দম ফেলার সুযোগ নেই।
ঠিক পাশেই সায়েদুল, শফি আলম ব্যস্ত নুড়ি পাথর নিয়ে। এটিও শৈল্পিকতারই অংশ। খড়ের চালা উঠে গেছে। দেয়ালে দেয়ালে শিল্পী রনি আহম্মেদের পেইন্টিং। কোনোটি সমাপ্ত, কোনোটি আঁকিবুকির পর্যায়ে।
মারমেইড বিচ রিসোর্টের একাংশে এখন সাজ সাজ রব। নতুন বছরকে সামনে রেখে এ বিচ রিসোর্ট পরিবারে যুক্ত হচ্ছে নতুন কিছু ‘সদস্য’।
আগের ১৪টি রুমের মধ্যে ছিলো ৮টি বাংলো, ৪টি কটেজ ও ২টি ফ্যামিলি কটেজ। সদ্যই যোগ হয়েছে পাশাপাশি তিন রুমের সুইট। এগুলোর সঙ্গে আরও যোগ হচ্ছে- বিশাল সুইমিং পুলসহ ৫টি ভিলা, ৪টি সুইট ও দুই বেডরুমের একটি অভিজাত সুইট। অভিজাত সুইটটির সামনে থাকবে বাচ্চাদের খেলার জন্য ছোট পুকুর। এগুলোর এখনও নামকরণ হয়নি। মারমেইডের সব ভিলা-কটেজের আলাদা আলাদা নাম থাকে। যেমন- ক্রস রোড ক্রসার, হট ওয়াটার আইসক্রিম, এগ প্লানেট, টু মাচ নাথিং প্রভৃতি।
মারমেইড ইকো ট্যুরিজম লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এই মারমেইড বিচ রিসোর্ট। ইকো ট্যুরিজমের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- প্রাকৃতিক কোনো কিছুকে নষ্ট না করে উপভোগ্য কিছু তৈরি করা। শুরু থেকেই এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে পরিবেশের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে সবকিছু বানিয়ে চলেছে মারমেইড। নতুন সদস্যদের ক্ষেত্রেও যে এর অন্যথা ঘটবে না, তা চলমান কর্মযজ্ঞই বলে দিচ্ছে।
বুনো লতা-পাতার ঝাড়, নারকেল গাছ- যেখানে যেমনটি ছিলো তেমনই থাকছে। এর সঙ্গে পরম বন্ধুর মতো জায়গা করে নিচ্ছে দো’চালা ছনের বাড়ি। ভেতরে অভিজাত সাবেকিয়ানার সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধন। তা সে হোক জানালার পর্দা, বেডশিট কিংবা বাথরুমের সাবান। চারপাশের নৈসর্গিক দৃশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সব জায়গার মাটি ও কাঠের রঙ। অযত্নে বেড়ে ওঠা বুনো লতা-পাতা-ফুলও সৌন্দর্যের বড় অংশ। রুমগুলোর দরজা-জানালা ইচ্ছে করেই বড় করে রাখা, যেনো অতিথিরা বৃষ্টি-বাতাস পুরোপুরি উপভোগ করতে পারেন।
রাতের অপরূপতা পুরোপুরি উপভোগ করতে চোখ ধাঁধানো নিয়ন আলোর পরিবর্তে খয়েরি ঠোঙার ভেতর মোমের আলোর ব্যবহার। শতভাগ অরগ্যানিক ফুড তো আছেই! সামনে বিস্তৃত বালিয়াড়ি পার হয়ে সমুদ্র আর ঢেউয়ের গর্জন।
মারমেইডকে যারা আগে থেকে চেনেন, তারা বলবেন- এ আর নতুন কী, এসবই তো মারমেইডের ‘সিগনেচার’! নতুন সদস্যদের নিয়ে আলাদা করে বলার কী রয়েছে?
এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মারমেইড বিচ রিসোর্টের জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজুর রহমান, নতুন ভিলা ও সুইটগুলো অন্য রকমভাবে সাজানো হচ্ছে। একদম নতুনভাবে।
এরপরও অন্যরকম, একদম নতুন? শুনে বিস্মিত হতে হয়।
মাহফুজুর বলেন, ঋতুভেদে আমরা মারমেইডে পরিবর্তন আনি। আপনি ছয়মাস পরে এসে দেখবেন, খাবার-দাবারসহ সাজসজ্জায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। এগুলো আমরা ইচ্ছে করেই আনি। কারণ, সব সময় একই রকম দেখতে দেখতে একঘেয়েমি চলে আসে। নতুন রুমগুলোর ক্ষেত্রেও তাই। এগুলোর ভেতরে-বাইরে আলাদাভাবে সাজানো হচ্ছে। নতুন সব সুবিধা যোগ করা হচ্ছে। যেমন- সুইমিং পুল, ছোট পুকুর।
সত্যিই তাই। বছর শেষ হতে না হতেই দ্বিতীয়বার বিচ রিসোর্টে অতিথি হওয়ার অভিজ্ঞতা হলো। সাজসজ্জার নতুনত্ব তো রয়েছেই। আরও চোখে পড়লো, শিশুদের জন্য একটি আলাদা খেলার জায়গা করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে মনকাড়া সব খেলনা। মূল রেস্টুরেন্টের পাশেই আলাদা জুস বার, এর পাশে আরেকটি খোলামেলা রেস্টুরেন্ট স্পেস। ঠিক সামনে খোলা আকাশের নিচে সমুদ্রের আরও কোলঘেঁষে বসার জায়গা। জিভে জল আসা খাবারসহ মেতে ওঠা যাবে অফুরান গল্প-আড্ডায়। কেউ মানা করবে না!স্পোর্টস অ্যাক্টিভিটিজগুলো নিয়ে আসা হয়েছে মারমেইড বিচ সার্ফ ক্লাবের মধ্যে। অবস্থান একদম কোণার দিকে। খেলাধূলার যাবতীয় সরঞ্জামও এখানে মিলবে।
দেশে নেই মারমেইড ইকো ট্যুরিজম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ। কিন্তু তার বাঁধা ‘হসপিটালিটির ধুন’ মারমেইডের প্রতিটি কোষে বেজে চলেছে। যিনি মানুষকে উন্নত সেবার সঙ্গে সঙ্গে একটি নান্দনিক ও রুচিশীল জীবন ব্যবস্থাও উপহার দিতে চান।
স্বপ্ন দেখেন, কক্সবাজারকে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্টিনেশন করে তোলার। এখানে জেনেভার মতো বড় বড় ইভেন্ট, স্পোর্টস ও ফেস্টিভ্যাল হবে। হোটেল-মোটেল অনেক হয়েছে, কিন্তু পর্যটকদের সময় কাটানোর জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। চান, সেগুলোও গড়ে তুলতে।
মাহফুজুর জানান, খুব শিগগিরই রঙে-রূপে হাজির হবে নতুন সদস্যরা। বেশ কয়েকটির কাজ প্রায় শেষের দিকে। এগুলো চলতি বিজয়ের মাসেই চালু হবে। বাকিগুলো নতুন বছরের শুরুর দিকে।
এতোসব অনাবিল সুন্দরের মাঝে খানিকটা মনখারাপিও রয়েছে। সেটি কেমন?
‘একটি কথাই বলবো- স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাই। আমরাও তো পরিবেশের ভালো-মন্দ বুঝি। দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, অনেকের চেয়ে ভালোই বুঝি। সেভাবে ইকোফ্রেন্ডলি করেই সব করা হয়, হচ্ছে ও হবে। নিজেদের রেজিস্টার্ড জমি হওয়া সত্ত্বেও নানা দিক থেকে নানা রকম বাধা আসে। এটি শুধু মারমেইড নয়, বাংলাদেশের ট্যুরিজমের বিকাশের পথেও বড় বাধা’- আক্ষেপ মাহফুজুরের।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৬
এসএনএস/এএসআর