তবে ৬৯ বছরের ভায়োলেট নুন এই ধারণা বদলে দিয়েছেন। তিনি সিঙ্গাপুরের খাবারকে তুলে ধরেছেন সারা বিশ্বে।
এটা সিঙ্গাপুরের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোকে রাজকীয় কায়দায় পরিবেশনের জায়গা। এশিয়ান জার্নালিজম ফেলোশিপের অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশের ১৬ জন ফেলোকে নিমন্ত্রণ করা হয় সেখানে। আয়োজক তেমাসেক ফাউন্ডেশন।
এখানে ফেলোদের জন্য নির্ধারিত মেন্টর, বিচারক, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর এবং সিঙ্গাপুরের দ্য স্ট্রেইট টাইমস পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকসহ মিডিয়া স্টাডিজের কয়েকজন শিক্ষক ছিলেন। সব কথা রেখে খাবারের কথায় চলে যাওয়া যাক। কারণ সিঙ্গাপুরবাসী দুপুরের খাবার ১২টার মধ্যেই শুরু করেন।
এখানে একেবারে রাজ দরবারের মতো লম্বা টেবিল সাজানো হয়েছে। প্রতিটি টেবিলে প্লেট, গ্লাস আর চামচ সাজানো। কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবার পরিবেশন শুরু। কী খাবার পরিবেশন করা হবে তার তালিকা প্লেটের পাশেই রাখা রয়েছে। সঙ্গে নিওনিয়ং আচার। এটা মিক্সড ভেজিটেবল আচার। যেখানে বেশ ভাল টক আর ঝাল মিশ্রণ থাকে। এছাড়াও আচার হিসেবে পাইন অ্যাপেল প্যাচারিও রয়েছে। যেটাতে সবজির সুগন্ধির সঙ্গে রয়েছে আনারস, ইয়োগার্ট, মিষ্টি, আদা, গার্লিকসহ আরও অন্তত ৫টি উপাদান।
প্রথমে স্টার্টার হিসেবে এলো নজোহ হিয়াং, কুয়ায় পো তি এবং তাউ হু গোরেং। তাউ হু গোরেং হচ্ছে সালাদ আইটেম। কুকুম্বারের ওপর শুকনা বিন বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে ভায়োলেট সিগনেচার মিষ্টি এবং ট্যাংগি পি নাট স্যস ব্যবহৃত হয়। সালাদের অাইটেমে অারও রয়েছে পেয়ারা ও টক অামের রোজাক। শাপলা ফুলের ডাটা, চিংড়ি মাছ ও স্টারফ্রুট দিয়ে বানানো সামবাল কিমচিয়াম উদাংও রয়েছে। রয়েছে শুকনো বিন, সেদ্ধ ডিম, অালু, চিংড়ির চিপস দিয়ে বানানো গাডোও।
স্টার্টারের রয়েছে মোট ৬টি অাইটেম। কুয়ায় পাইতি বানানো হয়েছে বাঁশের ভেতর রান্না করে। এখানে রয়েছে চিংড়ি মাছের স্বাদ। এছাড়াও মুরগির মাংস আর মশলা মেশানো পি নাট দিয়ে সাতায় বেশ স্বাদের।
স্টার্টার শেষ হলেই কিছুক্ষণ সময় অপেক্ষা করা হয়। এর মাঝেই ভায়োলেট নুন এসে হাজির হন। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মিষ্টি হাসি দেন বৃদ্ধা। রেস্টুরেন্টে টানানো সিঙ্গাপুরের প্রাচীন খাদ্য এবং ক্যাফেটিরিয়ার ছবিগুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
১৯৭১ সালে সাংবাদিকতায় ক্যারিয়ার শুরু করেন ভায়োলেট। প্রায় ২০ বছরের সাংবাদিকতা জীবনের ইতি টেনে এই রেস্টুরেন্ট চালু করেন এবং এটাই এখন সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে ব্যয়বহুল রেস্টুরেন্ট হিসেবে পরিচিত। লাইফস্টাইল এবং সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করতে করতেই খাবারে সংস্কৃতির মধ্যে নিজেকে নিবেদন করেন ভায়োলেট। মিনিট পাঁচ পরে আসে মেইন ফুড। ছোট বাটিতে করে চাল পরিবেশন করা হয়। এটা হচ্ছে জেসমিন চাল। মাংস, সবজি, সি ফুড ও নুডলস এবং চাল-- সব মিলিয়ে প্রায় ৩০টি অাইটেম রয়েছে। ফেলোদের জন্য নির্ধারিত ছিল রেবুং মাসাক লেমাক, ইকান, গোরেং চিলি, এগপ্ল্যান্ট গোরেং চিলি।
রেবুক মাসাক লেমাক বানানো হয় বাঁশের ভেতর সেদ্ধ করে। মুরগীর মাংসকে নারিকেল দিয়ে মশলা মিশিয়ে বাঁশের ভেতর দেওয়া হয়। অন্য দু’টি খাবার একটু ঝাল ছিল। তবে মরিচ দেওয়া হয়েছে ওপরে ছিটিয়ে, তাই সরিয়ে খেতে হয়েছে অামাকে।
প্রায় ঘণ্টা ধরেই চলে মেইন খাবার। কারণ এর মধ্যেই সবার সঙ্গে সবাই পরিচিত হয়ে নিচ্ছিলেন।
শেষ পরিবেশন ডেসার্ট। পুলট হিতাম উইথ কোকোনাট অাইসক্রিম। মিষ্টি বিনের মিশ্রণের ওপর অাইসক্রিম বসিয়ে পরিবেশন। আর এটা খেতে দেশে খেঁজুরের গুড়ের ওপর অাইসক্রিম রেখে খাওয়ার মতো। সত্যিই সুস্বাদু।
ভায়োলেট কিচেনে রয়েছে পানীয়ের ভালো ব্যবস্থা। দুনিয়ার বিখ্যাত সব পানীয় রয়েছে এখানে। তবে তা অবশ্যই সন্ধ্যার পর।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৭
এমএন/এইচএ/