কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষতা, ট্রেকারদের অদম্য মানসিকতা, পর্যটদের প্রবল আকর্ষণের কাছে এক সময় একেবারেই জৌলুস হারায় শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরের এ পাহাড়টি। কারণ ততদিনে সব আকর্ষণ টেনে নিয়েছে নীলগিরি, নীলাচল, কেওক্রাডং কিংবা সাফা হাফং।
সম্প্রতি চিম্বুকের সেই হারানো যৌবন দারুণভাবে ফিরিয়ে এনেছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। যার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন সদ্যবিদায়ী জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক ও সাবেক নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) হোসাইন মোহাম্মদ আল-মুজাহিদ। বর্তমান এনডিসি আলীনূর খানও সেই ধারা অব্যাহত রেখে কাজ করে চলেছেন। নতুন জেলা প্রশাসক সবে যোগ দিয়েছেন।
গত দু’বছর আগেও চিম্বুকচূড়ায় বিদ্যুৎ-টেলিফোনের সুউচ্চ টাওয়ার আর গুটিকয় গাছ ছাড়া আর কিছু চোখে পড়তো না। অথচ এই পাহাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত দেখা ছাড়াও ১৮০ ডিগ্রিতে পুরো পাহাড়শ্রেণী দেখা যায়।
সত্যি সুদিন ফিরেছে চিম্বুকে। দ্বিতীয়বার যাওয়া যে কেউ চমকে উঠবেন পরিপাটি সুন্দর করে পরিকল্পিতভাবে সাজানো এ পাহাড়চূড়া দেখলে। পাকা সড়ক বেয়ে একেবারে চূড়ায় যে কোনো বাহন ওঠে। উঠেই দক্ষিণে সিঁড়ি নেমে গেছে বিশাল এক চত্বরে। চত্বরটির নাম দেওয়া হয়েছে নব চত্বর। শরতে এই ভিউ পয়েন্ট থেকে দাঁড়িয়ে দেখা যায় বিশাল মেঘের সমুদ্র। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খরতাপেও হিম বাতাস গা জুড়িয়ে দেয় এখানে। পাহাড়-আকাশ কত বিশাল তা এই চত্বরে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায়।
সিঁড়ির পূর্বে রয়েছে দুই স্তরের দু’টি ছোট ভিউ পয়েন্ট। কেউ যদি নিচে নামতে না চায় তাহলে সেখানে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে পারবে সৌন্দর্য। সিঁড়ি যেখানে শেষ সেখানে পশ্চিম পাশে রয়েছে তিনটি কংক্রিটের সুদৃশ্য চেয়ার-টেবিল। গাছের ছায়া পড়ে তাতে। বিকেলের শেষ রোদে বসে আড্ডা দেওয়া কিংবা একান্ত সময় উপভোগ করার জন্য পূর্ব পাশেও রয়েছে বসার ব্যবস্থা।
মূল সড়ক বেয়ে উপরে উঠলে সোজা সড়ক ও জনপদের রেস্টহাউস। উত্তর দিক দিয়ে সড়ক চলে গেছে থানচি। পূর্বকোণ বরাবর নীলগিরি। উত্তর দিকেও কয়েক স্তরে নির্মাণ করা হয়েছে মনোরম ভিউ পয়েন্ট। একসঙ্গে হাজার লোক এলেও গোটা চিম্বুক জায়গা দিতে পারবে।
এখানেই শেষ নয় বলে জানালেন এনডিসি আলীনূর। তিনি বলেন, আমরা চিম্বুক নিয়ে আরও কাজ করবো। শিশুদের জন্য এখানে থাকবে আলাদা জোন। সেখানে বসবে তাদের খেলার বিভিন্ন উপকরণ। এছাড়া আরও কয়েকটি ভিউ পয়েন্ট করা হবে। বিশেষ করে নীলগিরি যেদিকে ওদিকটায় আমাদের কোনো ভিউ পয়েন্ট নেই। এটা করার চেষ্টা করছি।
কেউ মনোলোভা এ পরিবেশে থাকতে চাইলে রয়েছে তারও ব্যবস্থা। এনডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করে যে কেউ জেলা প্রশাসনের রেস্টহাউসে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। রেস্টহাউসটি আরও আধুনিকায়নের কাজ সামনে করবেন বলে জানান আলীনূর।
রেস্ট হাউসে রাত্রিযাপন যদি চাঁদনি রাতে হয় তবে তো কথাই নেই। বিশাল ভিউ পয়েন্ট থেকে মুক্ত বাতাসে জোছনা দেখা সত্যি ভাগ্যের।
চিম্বুকের আরও একটি বিশেষত্ব হলো ঠিক নিচে রাস্তার পাশে বারো মাস মেলে পাহাড়ের ফল। পেঁপে, কলা, আখ, ডাব, শরিফা, কমলা, বরই পাওয়া যায় সিজন অনুযায়ী। তবে কলা-পেঁপে মেলে সারাবছর। সব ফলই টাটকা। সেব ধরনের কেমিক্যাল মুক্ত। পর্যটকরা এসব ফল খেতে পছন্দ করেন সবসময়।
চিম্বুকের নিচে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস মারমাদের। এই পাহাড় ঘিরে তাদের অনেকের জীবন-জীবিকা চলে। তারাই মূলত এখানে বিভিন্ন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। কিছু বার্মিজ ও আদিবাসী পণ্যও মেলে এখানে।
বেড়ানো-থাকা- দু’টির জন্যই এখন পর্যটকদের চুম্বকের মতো টানছে চিম্বুক পাহাড়। নিরাপত্তা নিয়েও কোনো ভয় নেই এখানে। শুধু বান্দরবান থেকে ২৬ কিমি সড়কের দশা বেহাল। বেইলি ব্রিজগুলোর অবস্থাও বেশ ভঙ্গুর। যে কারণে ৪০ মিনিটের রাস্তা লাগে ঘণ্টাখানেক। এটুকু বাদ দিয়ে সোনায় সোহাগা চিম্বুক।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৮
এএ