ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

বান্দরবান শহরের কাছেই আকর্ষণীয় বনপ্রপাত

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২২ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৮
বান্দরবান শহরের কাছেই আকর্ষণীয় বনপ্রপাত বান্দরবান শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বনপ্রপাত। ছবি: আসিফ আজিজ

বান্দরবান থেকে: ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে সবসময়ই আকর্ষণীয় বান্দরবান। কিন্তু বান্দরবান শহরের কাছাকাছি খুব বেশি পর্যটনকেন্দ্র নেই বললেই চলে। বান্দরবানের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র নীলাচল শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে টাইগার পাড়ায় অবস্থিত।

বুদ্ধ ধাতু জাদি স্বর্ণমন্দির বান্দরবান শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বালাঘাটা এলাকায় অবস্থিত। বান্দরবানের আরেকটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র মেঘলা, সেটিও শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে বান্দরবান কেরানীহাট সড়কে অবস্থিত।

দূরত্বের বিবেচনায় বান্দরবান শহরের সবচেয়ে নিকটবর্তী পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে বনপ্রপাত। অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত পাহাড়ি এ প্রপাতটি বান্দরবান শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে বান্দরবান কেরানীহাট সড়কে আমতলী পাড়ায় অবস্থিত।
বনপ্রপাত।  ছবি: আসিফ আজিজ

নীলাচল, মেঘলা, নীলগিরি, চিম্বুক পাহাড়, শৈলপ্রপাতসহ বান্দরবান শহরের নিকটবর্তী অপূর্ব সব পর্যটন স্পটের আড়ালে হারিয়ে গিয়েছিল বান্দরবান জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১৯৯১ সালে নির্মিত এ পর্যটন কেন্দ্রটি।

অযত্ন অবহেলায় এর স্থাপনাগুলো ভেঙ্গে যায় একসময়। স্থানে স্থানে শেওলা জন্মালে তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আগাছা আর বুনো গাছপালায় প্রপাতটি ঢেকে যায়। মেইন রোডের ধারে হলেও ধীরে ধীরে একসময় লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায় প্রপাতটি।

বান্দরবান জেলার সাবেক নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ বাংলানিউজকে বলেন, বহুবার এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেছি, কিন্তু কোনো দিন এ প্রপাতটি চোখে পড়েনি। ২০১৬ সালের রোযার ঈদের ক’দিন আগে এর ভগ্নপ্রায় একটি স্থাপনা চোখে পড়লে থমকে দাঁড়াই। কৌতূহল নিয়ে স্থাপনাটির কাছে গিয়ে দেখি এর পাশ দিয়ে সোজা নিচে নেমে গেছে একটি সিঁড়ি। আরও নীচে একটি ভগ্ন ছাতা। পাশেই আরেকটি সিঁড়ি। এটি দিয়ে সোজা প্রপাতে নেমে যাওয়া যায়। সিঁড়ির মুখে একটি লোহার গেটের উপরে লেখা বনপ্রপাত।

মুজাহিদ আরও বলেন, শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে শৈলপ্রপাত ও ২ কিলোমিটার দূরে বনপ্রপাতের ডিজাইন প্রায় একই। বান্দরবানের সাবেক জেলা প্রশাসক আতাউর রহমান মজুমদার এ দুটি স্থানকে পর্যটন উপযোগী করে গড়ে তোলেন। তিনি সিঁড়ির দু’পাশের সারিবদ্ধভাবে মেহগনি গাছ লাগান। ভিউ পয়েন্ট স্থানে সেগুন গাছ ও পাহাড়ের নিচু অংশে দুটি ‍সিভিট গাছ লাগান।

বান্দরবানের বর্তমান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিকের একান্ত ইচ্ছায় প্রপাতটির সংস্কার কাজ শুরু হয়। সিঁড়িটি প্রশস্ত করা হয়। অনেক স্থানে কংক্রিটের ঢালাই দেওয়া হয়। সিঁড়ির পাশ দিয়ে বৃষ্টির পানি নিচে নামার জন্য ড্রেনের ব্যবস্থা করা হয়। অপরিকল্পিত ডালপালা কেটে প্রপাতটি দৃশ্যমান করা হয়। এরপর ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি এটি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
বনপ্রপাত।  ছবি: আসিফ আজিজ

বান্দরবানের বর্তমান নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আলীনূর খান বাংলানিউজকে জানান, বন প্রপাতের সিঁড়ি দুটি সংস্কার করে তাতে আধুনিক পার্কিং টাইলস বসানো হয়েছে। একাধিক ভিউ পয়েন্ট নির্মিত হয়েছে। বিশ্রাম, ছবি তোলা ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় এর ভিউ পয়েন্টগুলো নীলাচলের আদলে তৈরি।

তিনি আরও বলেন, বর্ষাকালে পর্যটকরা যাতে প্রপাতের পানিতে নামতে পারেন সেজন্য সিঁড়ি আরও নিচ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। পর্যটকরা যাতে প্রপাতের ওপাশের পাহাড়ে গিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন সেজন্য কেবল কার স্থাপনেরও পরিকল্পনা আছে।

সরেজমিন বনপ্রপাত ঘুরে দেখা যায়, বন প্রপাতের সিঁড়ির মুখে একটি দৃষ্টিনন্দন গেট স্থাপন করা হয়েছে। এর স্থাপত্য শৈলী বান্দরবানের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র নীলাচলের অনুরূপ। বন প্রপাত সংলগ্ন একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। পর্যটকরা সেখানে বাংলা, ইন্ডিয়ান, চাইনিজসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার উপভোগ করতে পারবেন।

শুকনা মৌসুমে প্রপাতটিকে কোনো পানি থাকে না। তবে বর্ষাকালে এটি তার পূর্ণ যৌবন ফিরে পায়। শুকনা মৌসুমে পানি না থাকলেও এর আশেপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দয্য দেখে পর্যটকরা মুগ্ধ হতে বাধ্য।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৮
এমআই/এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।