প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ঢাকা-কাঠমান্ডুর ১১শ’ কিলোমিটার সড়ক পথ পরিদর্শন করবেন। সড়কে বাস চলাচলের সম্ভাব্যতা যাচাই, ভাড়া নির্ধারণ এবং তিন দেশের মধ্যে বাস চলাচলের বিভিন্ন বিষয় ঠিক করবেন তারা।
মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) রাতে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে বিআরটিসি’র চেয়ারম্যন ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া জানান, ২৩ এপ্রিল নেপালের উদ্দেশে প্রথম বাস যাত্রার ট্রায়াল রান শুরু হবে। কাঠমান্ডু পৌঁছে ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশ-ভারত-নেপালের প্রতিনিধি দল বৈঠক বসবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. এহসান ই এলাহী বাংলানিউজকে বলেন, বাসের প্রথম যাত্রা হবে ট্রায়াল রান হিসেবে। এতে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের ২০ জনের মতো যৌথ দল যাবে। নেপালে পৌঁছে বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত হবে এবং প্রটোকল স্বাক্ষরের কাজ রয়েছে। প্রটোকল নেপালে স্বাক্ষর হতে পারে বা নাও হতে পারে। না হলে মে মাসে হবে। প্রটোকল স্বাক্ষর হলে বিবিআইএন-এর সব রুটই চালু হয়ে যাবে। তবে নেপালে সিদ্ধান্ত হওয়ার পর সবার সম্মতি থাকলে ট্রায়াল ভিত্তিতেই ঢাকা-কাঠমান্ডু বাস চলতে থাকবে।
যুগ্ম সচিব এহসান ই এলাহী আরও জানান, বিবিআইএন অনুযায়ী এতে ভুটানেরও অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা। কিন্ত তারা আপাতত সংযুক্ত হচ্ছে না। বাস কাঠমান্ডু পর্যন্ত যাবে। ২৭ মার্চ এডিবির আয়োজনে ভিডিও কনফারেন্সে তিন দেশের কর্মকর্তাদের কথা হয়েছে। এডিবি উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, বাসের প্রথম যাত্রা হবে ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি’র মতো। এতে রাস্তার অবস্থা, গাড়ি চলাচলের ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়গুলো দেখা হবে।
বিআরটিসি সূত্র জানায়, ২৩ এপ্রিলের পর সরাসরি যে বাস সার্ভিস চালু হবে তাতে সাধারণ যাত্রীরা খুব সহজেই নেপাল যেতে পারবেন। স্বাভাবিকভাবে ভারতের মাল্টিপল ও ডাবল এন্ট্রি ভিসা নিয়ে যেতে হবে। তবে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা হতে পারে। এক্ষেত্রে শুধু পাসপোর্ট দিয়ে অন-অ্যারাইভাল ভিসার মতো একটি পদ্ধতিতে এ ভ্রমণ হতে পারে। প্রটোকল স্বাক্ষর এবং ৩ দেশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এসব বিষয় চূড়ান্ত হবে।
বিআরটিসি ও বাস অপারেটর সূত্র জানায়, ২৩ এপ্রিল সকাল ৯টায় ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস-এর দুটি বাস যাত্রা শুরু করবে। হুন্দাই কোম্পানির প্রতিটি বাসে ২৮ সিট রয়েছে। এরপর ২৩ এপ্রিল রাতে রংপুরে রাত্রিযাপন করা হবে। ২৪ এপ্রিল সকালে বাংলাবান্ধা বর্ডার দিয়ে শিলিগুড়িতে ঢুকবে বাস। এদিন রাতে শিলিগুড়ি অবস্থান করবে প্রতিনিধি দল। পরের দিন ২৫ এপ্রিল সকালে নেপালের কাঁকরভিটায় ঢুকবে বাস। এরপর নেপালের নারায়ণঘাট নামে একটি জায়গায় রাত্রিযাপন করবে প্রতিনিধি দল। ২৬ এপ্রিল সকালে নারায়ণঘাট থেকে কাঠমান্ডুর পথে রওয়ানা হবে বাসটি।
ঢাকা থেকে বাংলাবান্দার দূরত্ব প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার। বাংলাবান্ধা থেকে নেপালের কাঁকরভিটা স্থলবন্দরের দূরত্ব মাত্র ৫৪ কিলোমিটার। কাঁকরভিটা থেকে কাঠমান্ডুর দূরত্ব প্রায় ৬০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২২০ কিলোমিটার পাহাড়ি খাড়া রাস্তা। সবমিলিয়ে ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু ১১শ’ ৪ কিলোমিটার সড়কপথ।
বিআরটিসি সূত্র জানায়, ট্রায়াল রানের পরে ঢাকা থেকে সন্ধ্যা ৬টায় বাস ছাড়বে। এরপর বাংলাবান্দা পৌঁছাবে পরদিন ভোর ৬টায়। কাস্টমস সম্পন্ন করে বর্ডার পার হয়ে কাঁকরভিটা থেকে সকাল ১০টার মধ্যে ছেড়ে রাত সাড়ে ১১টায় কাঠমান্ডু পৌঁছে যাবে বাস। সব মিলিয়ে ৩০ ঘণ্টার মতো সময় লাগবে ঢাকা থেকে নেপাল পৌঁছাতে। যাওযা আসা ভাড়া হতে পারে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা।
বাংলানিউজকে থেকে যোগাযোগ করা হলে শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ বলেন, সরাসরি বাসের মাধ্যমে তিন দেশের মধ্যে সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের পর্যটন বিকাশ লাভ করবে। হিমালয় দেখতে বাংলাদেশের মানুষ যেমন নেপাল যাবেন তেমনি পাহাড়ে একঘেয়েমি আসা নেপালের মানুষ সমুদ্র দেখার এবং সমতল ভূমির সৌন্দর্য দেখতে বাংলাদেশে আসবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৮
এসএ/এমজেএফ