ইলিয়াস শাহী রাজবংশ প্রায় দেড়শ বছর রাজত্ব করেছে। এই রাজবংশের মোট ১২ জন শাসক বিভিন্ন সময়ে বাংলা শাসন করেছেন।
এই ইলিয়াস শাহী রাজবংশেরই তৃতীয় সুলতান ছিলেন সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ। তিনি ১৩৮৯ সাল থেকে ১৪১০ সালে বাংলা শাসন করেন।
সুলতান গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ রাজ্য বিস্তৃতির চেয়ে সুশাসনের প্রতিই বেশি মনোযোগী ছিলেন। রাজ্যকে সমৃদ্ধ করতে তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর। তাই প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর সঙ্গে তিনি মিত্রতার নীতি মেনে চলতেন। রাজ্য বিস্তৃতি ও যুদ্ধের চেয়ে কূটনীতির প্রতিই বেশি আস্থা রাখতেন। তার সমসাময়িক অন্য রাজা ও সম্রাটদের সঙ্গে তিনি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বজায় রেখে চলতেন।
গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ পণ্ডিত ও জ্ঞানী-গুণীদের সমাদর করতেন। সেই সময়ে পারস্যের বিখ্যাত কবি হাফিজের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ কবি হাফিজকে তার রাজ্যে আমন্ত্রণ করেছিলেন। কবি হাফিজও আযম শাহের দরবারে আসার ইচ্ছা পোষণ করতেন। আযম শাহের আমন্ত্রণের জবাবে কবি হাফিজ তাকে একটি গজল রচনা করে পাঠান, যেখানে তিনি আযম শাহের দরবারে আসার ইচ্ছা ব্যক্ত প্রকাশ করেন।
গিয়াস উদ্দিন আযম শাহের সময়েই কবি শাহ মুহম্মদ সগীর তার বিখ্যাত রচনা ‘ইউসুফ-জুলেখা’ রচনা করেন। কৃত্তিবাসের ‘রামায়ন’ ও তার সময়েই বাংলায় অনুবাদ করা হয়। আলাউল হক ও নূর কুতুব আলমও তার সময়ের বিখ্যাত কবি। ১৪১১ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার শাহচিল্লাপুর গ্রামেই রয়েছে গিয়াস উদ্দিন আযম শাহর সমাধি। একথা হয়তো আমাদের অনেকেরই কাছে অজানা। কষ্টিপাথরে নির্মিত এ সমাধিটিতে রয়েছে সূক্ষ্ম কারুকাজ খচিত অলংকার। মধ্যযুগে বাংলার অন্যতম শাসক এই সুলতানের সমাধি আমাদের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন। সমাধিটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। সোনারগাঁওয়ের পানাম নগরে অনেকেই যান, কিন্তু আযম শাহের সমাধির কথা অনেকেই জানেন না। তাই খুব কম দর্শনার্থীই তার সমাধি দেখতে যান। এক্ষেত্রে পর্যটন করপোরেশন ও সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৮
এএ