জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয় আমচাষিদের ব্যস্ততা, আর এই কর্মযজ্ঞ চলে আগস্ট পর্যন্ত। আমের গুটি থেকে আম ভাঙা পর্যন্ত তাদের কর্মব্যস্ত সময় কাটাতে হয় বাগানেই।
আমের জেলার চামাগ্রামে বদিউজ্জামান (বদু মিয়ার) আমবাগানে রাত তখন সাড়ে ৭টা কি ৮টা বাজে, বাগানের ভেতর দিয়েই আধাপাকা রাস্তা। আর সেই রাস্তার দুই ধারেই সারি সারি আম গাছ, প্রতিটি গাছেই লিচুর মতো থোকায় থোকায় আম ঝুলছে।
এভাবে ঘুটঘুটে অন্ধকারে বাগানের ভেতর দিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার যাওয়ার পর চোখে এলো আলো। কাছে যেতেই দেখা যায় কয়েকজন আমচাষি মাটিতে বসে তাদের রাতের খাবার সেরে নিচ্ছেন। পাতে ছিলো ডিম ভাজি, ডাল আর আলু সবজি। এই দিয়েই রাতের আহার।
খাবার শেষে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে আমচাষ নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতার গল্প। চাষি আব্দুল মতিন বলেন, আজ ২০ বছর ধরে আম চাষের সঙ্গে জড়িত। গাছে যখন আমের গুটি শুরু হয় তখন থেকেই চাষিদের চোখে ঘুম উবে যায়।
কারণ, বেশি খরা হলে আমের মুকুল ঝরে যাওয়ার চিন্তা, আবার ঝড়বৃষ্টি হলেও পড়ে যায় আম। তাই গাছে যখন আমের মুকুল ধরে তখন থেকেই ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। জানুয়ারি মাসের দিকে গাছের মুকুলে ওষুধ ছিটানো হয়, আম পাকার আগ পর্যন্ত বেশি খরা হলে গাছের গোড়ায় পানি দিয়ে রক্ষা করতে হয়।
এরপর মে মাসে যখন দুই একটা করে আম ভাঙতে শুরু করে তখনই চাষিদের মুখে হাসি চওড়া হতে থাকে। জানুয়ারি থেকে আগস্ট, এই আট মাস গ্রামে থেকেই পরবাসী চাষিরা। তখন আর বাড়িতে যাওয়া হয় না। আম ভাঙার সময় এলে রাতে পাহারা দিতে হয়।
বদু মিয়ার ৩৩ একরের আমবাগানে আব্দুল মতিনের পাশাপাশি কাজ করেন আব্দুল লতিফ ও বাগানের লিজগ্রহীতা আব্দুল বারীও। বাগানের ভেতর ৭টি টঙ ঘর রয়েছে, মাথার ওপর একটি মাত্র টিনের ছাউনি দিয়ে ঘর করে দেওয়া আছে। আর একটি বাঁশের মাচালি এতে শুয়ে বসে রাত কেটে যায় চাষিদের।
মাসে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় হয় আমবাগানে কাজ করেই। কাজও কম না। আম ভাঙার সময় সকাল ৮টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত পুরো ৩৩ একর জায়গার সাড়ে ৯০০ গাছের গোড়াতেই একটা করে চক্কর দিতে হয় চাষীদের। রাতে দেখা যায় কোনো গাছের নিচে আম পড়ে আছে, আবার কোনো গাছে আম পেকে আছে, তাই সবগুলো গাছের কাছেই যেতে হয় চাষিদের।
বদু মিয়ার ৩৩ একর জায়গা জুড়ে করা বাগান পাঁচ বছরের জন্য লিজ (বন্দোবস্ত) নিয়েছেন আব্দুল বারী। বাগানের মালিককে ৫ বছরের জন্য তাকে দিতে হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা, এর সঙ্গে শ্রমিক খরচ, আমের ওষুধ ও অন্যান্য খরচ দিয়ে তার আরও ৮ লাখ টাকা খরচ যায় বছরে। এরমধ্যে গত বছরই এই আম বাগান থেকে ২০ লাখ টাকার আম বিক্রি হয়েছে আব্দুল বারীর। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় মুখে হাসির ঝিলিক আরও স্পষ্ট এই চাষির।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৪ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৮
এসএম/এইচএ/