ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

আমের দেশে নতুন বেশে-১

মহানন্দার পাড়ে আনন্দের চাষ

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৩ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৮
মহানন্দার পাড়ে আনন্দের চাষ চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি বাগানের আম দেখছেন এক পর্যটক।। ছবি- ডি এইচ বাদল

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে: অবিভক্ত ভারতের মালদাহ’র বুক চিরে বয়ে গেছে এক স্রোতধারা। যদিও কালের পরিক্রমায় বহু জল গড়িয়ে এখন কেবল টিকে আছে মাত্র। নাম তার মহানন্দা।
 

এক সময়ের স্রোতস্বিনী এ নদীটির সে জোর আর নেই সত্য। তবে হাজার বছর ধরে যা দিয়ে যাচ্ছে মহানন্দা, তাতেই টিকে আছে প্রাচীন এ জনপদ।

বলছি জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের কথা।
 
মহানন্দা বিধৌত এ জনপদে ব্রিটিশ ভারতে ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রমরমা রাজত্ব। নানা ব্যবসার প্রসারের সঙ্গে কৃষিতেও আধিপত্য ছিল তাদের। পুরো মালদাহকেই তারা রূপ দেয় আমের বাগানে। যদিও বৈচিত্র্য আর বৈশিষ্ট্যের কারণে এ অঞ্চলে আরো আগে থেকেই আমের চাষ ছিল। সেটিই ব্যাপকতা পায় ব্রিটিশদের হাত ধরে।
 
ভারতে আমের জন্য এখনো বিখ্যাত মালদাহ। মুর্শিদাবাদের আম্রকাননের কথা তো ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়েছে আরো আগে।
 
ভারত-ভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশে ‘আমের রাজধানী’ সেই মালদাহ’র অংশ চাঁপাইনবাবগঞ্জ। মহানন্দা পাড়ের এ জনপদ এক আনন্দ নগরই যেন। আর এ আনন্দ কেবল আম চাষকে ঘিরেই। চাষ থেকে শুরু করে পরিচর্যা, বিক্রি কিংবা রসাস্বাদন প্রতিটি ক্ষেত্রেই আনন্দ।
 
এ আনন্দের ছোঁয়া নিতে দ্বিতীয় মহানন্দা সেতুতে দাঁড়াতেই প্রশান্তি খেলে গেল মুহূর্তে। ততক্ষণে দোর্দণ্ড প্রতাপ ছড়িয়ে সূর্য নিভে গেছে পশ্চিম আকাশে। এবার ‘দু’টো’ চাঁদের সঙ্গে মিতালীর পালা। একটি আকাশে, অন্যটি মহানন্দার বুকে।
 
ঝিরিঝিরি বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ। প্রকৃতিও যেন আনন্দে গাইছে। দু’চারটে তারাও চোখে পড়লো। আর নদীর বুকে জেগে ওঠা পাকাপোক্ত চরের জমিনে অল্পবিস্তর আলোর ছটা। যেন সেগুলোও তারা হয়ে জ্বলছে। আর মাঝে মাঝে জ্বলে নিভে যাচ্ছে তখন টর্চের আলো। বাগানে কেউ পাহারা দিচ্ছে তা আর বুঝতে বাকি রইলো না।
 
এই দৃশ্য দেখতে দেখতেই বাগানে রাতের ব্যস্ততা দেখার সাধ মনে। অটোরিকশা চালক সোজা নিয়ে গেলেন চাঁপাই সদরের সবচেয়ে বড় আম্রকাননের ভেতর। প্রায় ১০০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে বাগানটি। ফজলি, ল্যাংড়া, গুটিসহ নানা জাতের আম একই বাগানে।
 
অটোরিকশা থেকে নামতেই চোখে পড়লো বাগানের শ্রমিকরা রাতের আহারপর্বে ব্যস্ত। খেতে খেতে তারা কথা বলতে শুরু করলেন। জানুয়ারি থেকে তাদের ব্যস্ততা শুরু হয়। যা শেষ হয় গিয়ে আগস্ট মাসে। আর পুরো আটমাস ধরেই তাদের ব্যস্ততা রাতে দিনে। তবে এ নিয়ে তাদের সুখানুভূতি ছাড়া কষ্ট নেই বলেই জানা গেলো।
 
আমচাষের মৌসুম শুরু হলেই শুধু শ্রমিক, মালিকই নয় পুরো এলাকার মানুষের মধ্যেই আনন্দ খেলে যায়। গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা আম দেখেই নাকি প্রশান্তি তাদের।
 
এ প্রশান্তি কেবল যে তাদের মনে তা কিন্তু নয়, সংসারেও। চাষ শুরু হলেই যে বেড়ে যায় অর্থপ্রবাহ। বাড়ে পর্যটক, ব্যবসায়ীর আগমন। এতে বেড়ে যায় মাথাপিছু আয়।
 
সদরের সবচেয়ে বড় এ বাগানটি ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বিরাট অংশজুড়ে। মহানন্দার পাড়ে। পাঁচ বছরের জন্য লিজ নিয়েছিলেন মো. মতিন মিয়া। প্রাকৃতিক কারণে তার লাভ তেমন হয়নি। বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, এসিড বৃষ্টিই তার লাভের মুখ দেখতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
 
জানালেন, এ ব্যবসাটা পুরোটাই প্রকৃতি নির্ভর। বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি কিংবা এসিড বৃষ্টি না হলে ফলন ভালো হয়। আবার অনেক সময় সবঠিক থাকলেও অজানা কারণে ফলন বেশি হয় না। তবু অনেক আনন্দ। এক একটি আম চোখের সামনে যখন বাড়তে থাকে, এ আনন্দ বলে বোঝানো সম্ভব নয়।
 
কত মানুষ দূরদূরান্ত থেকে বাগান দেখতে আসে। খুব ভালো লাগে তাদের ঘুরিয়ে নিয়ে দেখাতে, যোগ করেন মতিন।
 
আম বাগানের শ্রমিকদের দেখা গেলো এরই মধ্য বাগানের ভেতর ছড়িয়ে পড়েছেন। টর্চের আলো ফেলে একটু পরপর এদিক-ওদিক করছেন। কিছুদূর পরপর পাতা মাচাতেই তারা রাতে বিশ্রাম নিয়ে এ কাজটি করে থাকেন রাতভর।
 
স্থানীয় বাসিন্দা রমিজ উদ্দীন বাংলানিউজকে জানান, আমের দিনে অনেক ভালো লাগে। তিনি মনোহরি দোকান করলেও তার ভালো লাগার বিষয় আমচাষ। তার ভাষায়, সারাদেশের মানুষ তার দেশের আম খায়। এলাকার নাম চারদিকে। নানা ধরনের মানুষের আগমন ঘটায়, বাড়ে আয়ও।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৯ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৮
ইইউডি/এসআই

.

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।