সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের অধিক জনসচেতনায় মানুষ এখন অনেক সাবধানী। সেই সাবধানী মনোভাব নিজেদের শরীরের জন্য সুখকর হলেও ব্যবসায়ীদের কপালে ফেলছে চিন্তার ভাঁজ।
কথাগুলো বলছিলেন কানসাটের বালুচর গ্রামের আম ব্যবসায়ী মো. রবিউল আওয়াল।
বালুচর গ্রামে তার ৩০ বিঘা জমির উপর বাগান। রয়েছে হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, আম্রপালিসহ বিভিন্ন প্রজাতির আম। অধিকাংশ আমই ফ্রুটব্যাগিং করা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদেশে রপ্তানির জন্য যে ২৬টি শর্ত আছে তা ফ্রুটব্যাগিং অনেকাংশে পূরণ করতে পারে। ২০১৬ সালে আমার বাগানের আম ইউরোপে গেছে। স্বাস্থ্যঝুঁকিহীন, বিষমুক্ত আম যদি কেউ খেতে চায় তাহলে তাকে ফ্রুটব্যাগিংয়ের আম খেতে হবে।
‘ফ্রুটব্যাগিং আম পাকার মিনিমাম একমাস বা তার আগে করতে হয়। বেশি আগে করলে আবার ঝরে যায়। মূলত আম ঝরার মৌসুম শেষ হলেই যেতে হয় ব্যাগিংয়ে। ব্যাগগুলো আমদানি করতে হয় চীন থেকে। বিশেষ ধরনের এ ব্যাগ সম্পর্কে আম গবেষণা কেন্দ্র থেকে আমরা জানতে পারি। তবে সাইজ ভেদে ব্যাগ প্রতি দাম পড়ে ৪-৫ টাকা। ব্যাগটি এমনভাবে আমে আটকানো হয় যে বৃষ্টির পানিও ভিতরে ঢুকতে পারে না। ’
গাছের চিকন ডালে ব্যাগিং করতে কষ্টও কম নয়। বিশেষ ধরনের টাওয়ার টাইপের মই বানিয়ে খুব সন্তর্পণে ব্যাগিং করতে হয়। তবে ছোট জাতের আম, যেমন ল্যাংড়া, হিমসাগর থেকে ফজলি কিংবা আশ্বিনা আমে ব্যাগিং করা লাভজনক বলেই জানান রবিউল। কারণ মণ প্রতি উৎপাদনে বড় আমে ৫০ থেকে ৬০ ব্যাগ লাগলেও ছোট আমে লাগে এর দুই-তিন গুণ বেশি। আবার ব্যাগিংয়ের আম সাধারণ আম থেকে ওজনেও বেশি হয়।
ব্যাগিংয়ের আরেকটি বিশেষ সুবিধা হলো এতে কোনো ধরনের কীটনাশক কিংবা পোকার আক্রমণ থাকে না। তাই আম খাওয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ। আর বিশেষ গুণ হলো, পাকার পর গায়ে কোনো স্পট থাকে না। আমের রং হয় টকটকে হলুদাভ। এটাই অনেক সময় কাল হয়ে দাঁড়ায় বলে মনে করেন রবিউল। কারণ কার্বাইডে পাকানো আমের মতো দেখতে হওয়ায় অনেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। তবে এ বিষয়ে বিশ্বাস রাখতে বলেন তিনি।
ফ্রুটব্যাগিং আমের আরেকটি বিশেষ গুণ হলো এটি সংরক্ষণ করার সুবিধা। আম ভাঙার পর ১৪ দিন পর্যন্ত বাইরে নিরাপদ থাকে এ আম। যেটা রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় সুবিধা। পাড়ার ৩-৪ দিনের মধ্যে আম পেকে গেলেও না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই ব্যবসায়ী। কারণ ১০ দিনের আগে খেলে টক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এ সময়ের পর খেলে এটাই বাজারের সেরা আম।
অপরদিকে সাধারণ আমেও খরচ কম হয় না। বিষও দিতে হয় পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে। খরচ প্রায় একই রকম।
ফ্রুটব্যাগিং পদ্ধতিতে আম উৎপাদনের জন্য সবাই বিশেষভাবে স্মরণ করেন আম গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শরাফ উদ্দিন আহমেদের। আর এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফ্রুটব্যাগিং করে ইউরোপে প্রথম রপ্তানি করেন ব্যবসায়ী ইসমাইল খান শামীম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এবার প্রায় ৭ কোটি আমে ফ্রুটব্যাগিং করা হয়েছে শুধু চাঁপাইয়ে। সরকারি সহায়তা পেলে এটা আরও বাড়ানো সম্ভব। যদি সরকার ব্যাগের উপর ট্যাক্স কমায় তাহলে চাষি আরও উৎসাহী হবে। নিশ্চিত হবে বিষমুক্ত আম খাওয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৭ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৮
এএ