নগরায়ণ, নতুন বসতি স্থাপন, উচ্চ ফলনশীল জাতের আমের প্রতি মোহ ও এককালীন বেশি টাকার প্রয়োজনে বয়স্ক গাছ কেটে ফেলায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এসব দেশি আমের জাত।
সারাদেশেই আমের গাছ দেখতে পাওয়া যায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মো. শরফ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, 'এই পর্যন্ত বাংলাদেশে কত প্রজাতির আম রয়েছে তার সঠিক হিসাব নেই। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা বিভিন্ন আমবিষয়ক পুস্তক ও গবেষণার অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায় এদেশে আমের প্রায় ৮শটি জার্মপ্লাজম রয়েছে। এসব আমের নামকরণও হয়েছে ভিন্নভাবে। বাগান মালিক নিজেই নিজ নামসহ স্ত্রী, পুত্র, কন্যার নামে আমের নামকরণ করেছেন। আমের নামকরণ সত্যেই বিচিত্র রকমের'।
তিনি আরও বলেন, দেশীয় আমের উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হলো ল্যাংড়া, ক্ষিরসাপাত, গোপালভোগ, ফজলি, আশ্বিনা, বোম্বাই, অগ্নি, অমৃত ভোগ, আলফাজ বোম্বাই, আতাউল আতা, আরিয়াজল, আরাজনমা, আলম শাহী, গিলা, গোলাপবাস, আনারস, ইলশাপেটি, কলাচিনি, কাঁচামিঠা, কালিয়া, কৃষ্ণচূড়া, টিক্কাফারাশ, টিয়াকাঠি, কালাপাহাড়ী, কালিভোগ, কালুয়া, কাঞ্চন খোসাল, কাজলা সিন্দুরি, কিষাণ ভোগ, কোহিনুর, কোহিতুর, কুয়া পাহাড়ি, টোফা, কাজল ফজলি, কাইয়া ডিপি, কাটাসি, গোলাপ খাস, গোলাপ বাস, গোল্লা, গুল্লি, গৌরজিত, গুলগুল্লি, চেপি, চরবসা, চম্পা, চন্দন খোস, চিনি কালাম, চিনি বড়ই, চিনি পাতা, ছাবিয়া, ছানাজুর, ছফেদা, জালী বান্ধা, ভাঙা, জিলাপির ক্যাড়া, জোয়ালা, জিতুভোগ, গোবিন্দভোগ, জর্দা, জর্দালু, ত্রিফলা, বাওয়ানী, বাউনি লতা, তাল পানি, দার ভাঙা, দর্শন, দাদভোগ, দেউরি, দিলসাদ, দোফলা, দিল্লির লাডুয়া, দুধিয়া, দেওভোগ, দুধসর, বড়বাবু, নারিকেলি, নারকেল পাথী, নয়ন ভোগ, প্রসাদ ভোগ, জিতুভোগ, সীতাভোগ, বোগলাগুটি, পাথুরিয়া, ফজলি কালান, ফনিয়া, বারমাসি, বোতল বেকি, বোতলা, বড়শাহী, বাতাসা, বাউই ঝুলি, বিড়া, বেগম পছন্দ, কমল পছন্দ, বেল খাস, বিমলা, বিশ্বনাথ, বোম্বাই কেতুল্লা, বদরুদ্দোজা, বোম্বাই গোপাল ভোগ, বোম্বাই খিরসা, বউ ভুলানী, বৃন্দাবনী, সাহা পছন্দ, বাদশা ভোগ, ভাদুরি, ভবানী, ভবানী চৌরাস, ভারতী, মাল ভোগ, মাংগুড়া পাকা, মিসরীদাগী, মিসরী ভোগ, মিসরী দানা, মিসরী কান্ত, ভূত বোম্বাই, মতিচুর, মোহন ভোগ, মোহন পছন্দ, রাজরানী, রাম প্রসাদ, রানি পছন্দ, কাজী পছন্দ, বিলুপছন্দ, রানি ভোগ, রাজ ভোগ, কালিভোগ, জিবাভোগ, লাক্ষৌ, লাদুয়া, লাডুয়া, লোরাল, লালমুন, লক্ষণ ভোগ, লতা খাট, লতা বোম্বাই, নাবী বোম্বাই, লোহাচুর, শ্যাম লতা, রসবতী, সাটিয়ার ক্যাড়া, সাদাপাড়া, সবজা, সুবা পছন্দ, শাহী পছন্দ, সরিখাস, শরিফ খাস, সিন্দুরি, সারাবাবু, শোভা পছন্দ, সুলতান পছন্দ, সফদরপছন্দ, সূর্যপুরী, সুরমাই ফজলি, হায়াতী, হিমসাগর, খুদি ক্ষিরসাপাত, ক্ষিরপুরি, ক্ষিরমন, ক্ষির টাটটি, ক্ষির বোম্বাই, বেলতা, হাড়িভাঙা, বৈশাখী, গৌড় মতি, হুক্কা, লাড়ুয়ালী, ডালভাঙা, মণ্ডা, মিছরী দমদম, নীলাম্বরী, খান বিলাস, বাতাসা, মনাহারা, পাথুরিয়া, তোহ্ফা, ফোনিয়া, মধুচুষকি, মধুমামি, নকলা, মোহিনিসিন্দুরী, ভুজাহাড়ি, সন্ধ্যাভারুতি, পদ্মমধু, অমৃতভোগ, লতারাজ, বৃন্দাবনি ইত্যাদি।
এছাড়াও দেশে স্বল্প পরিমাণে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদিত বিদেশি আমের উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হলো, আব্দুল আজিজ, আলফানসো, আলী চৌরস, আম্রপালী, আমবাজান, আমন দাশেহারী, মল্লিকা, চৌসা, তোতাপুরী, বোম্বাই গ্রিন, আনানাস খাশ, আনোয়ার রাতাউল, আনোয়ার আতাউল, আগমামাশু, আওবেক, ইরউইন, কেন্ট, কেনসিংটন, কেইট, কারাবাও, কাইটুক, পিকো, পকনা, পাহুতান, ছিদরালী, ছওসি, জাওনিয়া, ঝিল, ডক্টর পছন্দ, দিল রৌশন, দিল বাহার, দিল ওয়ালা, দালুয়া, চন্দ্রকরণ, কেরি, বোয়ার, ফ্লোরিগ্যান, জিলেট, ভাদুরী, দাসেহারি, ধুপা, নীল উদ্দিন, নোড়া, নাম-ডক-মাই, নওয়াব পছন্দ, নিলাম্বরী, পীরের ফলী, রওশান টাকী, পালমার, পাহুতান, বেগম ফুলি, ভুলীয়া, মালদাহ, মালগোবা, মাদ্রাজী, মিঠুয়া পাটনা, রাগ, র্যাড, রুবি, রত্না, লাভ-ই-মশগুল, লিটল ফ্লাওয়ার, সবদেরাজ, সামার বেহেস্ত, সামার বেহেস্ত চৌসা, সাদওয়ালা, সুকুর খন্দ, সেভেন-ইন-ওয়ান, সুগার কিং, হিটলার পছন্দ, হেডেন, বানানা আম, টমি এটকিনস, জিনহুয়াং, জিনসুই, জিহুয়া, গুইরা, হং শিয়াং ইয়া, তাইনং নম্বর ১, চোকানান, ডট, ডানকুন, অ্যাডওয়ার্ড, সেনসেশন, এলডন, ফ্যাসেল, ফোর্ড, গোল্ড নাগেট, আইভোরি, জাকার্তা, পারভিন, অসটিন, সান-ই-খোদা, সানসেট, গেডং, গোলেক, মালগোয়া, মাসমুদা, প্রায়র, কেরালাডোয়ার্ফ, ওনো, জিল, নীলাম, টংডোম, দাশেহারী, হানিগোল্ড এবং আরুমানিস।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষি শামিম খান জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক সময় বৃন্দাবনি, গোলাপবাস, দাদভোগ, গোড়ভোগ, ফুনিয়া, দিলশাদ, কাঞ্চন খোসাল, সিন্দুরি, খুদি ক্ষিরসাপাত, গোলাপ খাস, টিক্কাফারাশ, দুধিয়া, দেওভোগ, দুধস্বর, নারিকেলি, নয়ন ভোগ, নাগ ফজলি, বৈশাখী, বারমাসি, বোম্বাই, বৌ ভুলানি, বাদশাভোগ, মতিচুর, মোহনভোগসহ শত শত প্রজাতির আম পাওয়া যেতো। বর্তমানে সেগুলো তেমন একটা দেখা যায় না।
বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৮
এমআই/এএটি