পোকার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় চাহিদাসম্পন্ন আমের। বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে ল্যাংড়া, ফজলি আর আশ্বিনা আমের।
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফ্রুটফ্লাই বলে একটা মাছি আছে। যে মাছি হুল ফুটিয়ে পূর্ণাঙ্গ আমের সবশেষ ক্ষতিটা করে।
পাঁচ ধরনের মাছি মূলত আমে মারাত্মক আক্রমণ করে। এগুলোর মধ্যে মুকুল আসলে আক্রমণ করে হপার বা ফুলদি পোকা। তাই মুকুল বের হওয়ার ১৫ থেকে২০ দিন আগেই কীটনাশক ছেটাতে হয়। এক্ষেত্রে থায়োমেথোক্সাম ও ফিপরোনিল ছেটাতে হয়।
মুকুল থেকে আম মার্বেলের মতো হলে আক্রমণ করে ফ্রুট বোরার বা ফল ছিদ্রকারী পোকা। পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী পোকা আমের নিচে ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। আর অল্পকিছুদিনের মধ্যেই ছিদ্র হয়ে পোকা বের হয়ে আসে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে থায়োমেথোক্সাম ও ফিপরোনিল একসঙ্গে মিশিয়ে ছেটাতে হয়।
এপসিলা পোকা আক্রমণ করে মুকুল বের হওয়ার আগেই। এজন্য কার্বাইল, ইমিডাক্লোপ্রিড, ল্যামডাসাইহ্যালাথ্রিন জাতীয় কীটনাশক ছেটাতে হয়।
ছাতরা পোকা আম খেয়ে ফেলে। এজন্য ২ থেকে ৩ বার কীটনাশক ছেটাতে হয়।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হচ্ছে ফ্রুটফ্লাই বা মাছি পোকা। এই পোকা আক্রমণ করে আম যখন পরিপূর্ণ রূপ পায়। এই পোকা বৃষ্টি হলেই আক্রমণ করে। ফলে নিচের দিকে ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। বাইরে থেকে তেমন বোঝা যায় না। তবে আম কাটলে সাদা সাদা পোকা বের হয়। এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে ফ্রুট ব্যাগিং। অন্যথায় বার বার কার্বারিল জাতীয় কীটনাশক ছেঁটাতে হয়।
জুন-জুলাই মাসে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। আর এ সময় আসে ল্যাংড়া, ফজলি আর আশ্বিনা আম। এ সময় অন্য কোনো আমও থাকে না। ফলে ফ্রুটফ্লাই সব একযোগে আক্রমণ করার সুযোগ পায়। অনেক সময় কোনো বাগানে কেবল এ মাছির হাত থেকে বাঁচাতেই ৩০ থেকে ৩৫ বার কীটনাশক ছেটাতে হয়।
রাজশাহীর আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হামিম রেজা বাংলানিউজকে বলেন, ফ্রুটফ্লাই বা মাছি পোকা আমের সবশেষেএবং মারাত্মক ক্ষতিই করে। এক্ষেত্রে ল্যাংড়া, ফজলি বা আশ্বিনার মতো দেরিতে আসা আমের ওপর বেশি আক্রমণ করে। এছাড়া ক্ষিরসাপাতসহ বিভিন্ন গুটিজাতীয় আমেও এই পোকার আক্রমণ বেশি হয়। এ থেকে পরিত্রাণের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে ফ্রুট ব্যাগিং। ব্যাগ দিয়ে আম ঢেকে দিয়ে পোকা দমন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিন বলেন, ফ্রুট ব্যাগিং কেবল পোকার হাত থেকেই আমকে রক্ষা করে না। এর ফলে স্বাস্থ্যকর আমের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৯ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৮
ইইউডি/আরআর