ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

পেপারে মুড়িয়ে খাচিতে প্যাকেট আম

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৫ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৮
পেপারে মুড়িয়ে খাচিতে প্যাকেট আম পেপারে মুড়িয়ে খাচিতে প্যাকেট আম। ছবি: আরিফ জাহান

রাজশাহী থেকে: মুনজুর রহমান, শফিকুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, বাবু এরা সবাই শ্রমিক। আমের তিন মাস প্রত্যহ কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত অবধি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বৃহত্তম আমের মোকামে অবস্থান করেন।

ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মে থেকে জুলাই এই তিন মাস খাচিতে আম ভরানোর কাজ করেন। পেপারে মুড়িয়ে খাচিতে ভরেন সেই আম।

অবশ্য এর আগে ও পরে আরও বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে। প্রথমে চাহিদামতো মহাজনরা খাচি কিনে এনে দোকানের ভেরতে ও বাইরে স্তুপ আকারে রেখে দেন। পেপারে মুড়িয়ে খাচিতে প্যাকেট আম।  ছবি: আরিফ জাহানএরপর ক্রেতার চাহিদামতো সেই খাচিতে আম ভরানোর কাজ করেন এসব শ্রমিকরা। সিংহভাগ খাচিতে আম ভরানোর আগে ভালভাবে পেপারের কাজ দেন। তার ওপর সুন্দরভাবে খড় সেজে নেন। তারমধ্যে খাচি অনুযায়ী আম ভরান। খাচির ওপরটাই পলিথিনে মুড়িয়ে নেন। পরে তা সুচ ব্যবহার করে সুতা দিয়ে আটকে দেন। এরপর ট্রাকে ভরে নির্দিষ্ট মালিকের কাছে পৌঁছে দেন সেই সুস্বাদু উন্নতমানের আম।

বৃহস্পতিবার (৩১ মে) বিকেলে রাজশাহীর আমের রাজধানীখ্যাত বানেশ্বর এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাগান থেকে আম ভাঙার পর পেপারে মুড়িয়ে খাচিতে ভরে ভ্যানসহ বিভিন্ন ছোটখাটো যানবাহনযোগে আম বানেশ্বর হাটে নিয়ে আসা হয়। আবার অনেকেই সরাসরি আড়তদার বা পাইকারী-খুচরা ব্যবসায়ীদের ঘরে নিয়ে আসছেন। শ্রমিকরা মিলে সেই আম ভ্যান থেকে খাচিভর্তি আম নামান। এরপর শুরু হয় প্যাকেটজাত প্রক্রিয়া। পেপারে মুড়িয়ে খাচিতে প্যাকেট আম।  ছবি: আরিফ জাহানকাজগুলো করা হয় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। যেন আমের কোন ক্ষতি না হয়। আমের গা মসৃন থাকেন। গায়ে কোনো নতুন করে দাগ না পড়ে। এ কারণে পেপার দিয়ে আমগুলো আগে মুড়িয়ে নেওয়া হয়। সেগুলো আবার খড়ের ভেতর রাখা হয়। তারপর প্যাকেটজাত করা হয়।

মুনজুর রহমান, শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, প্রতিটি খাচি প্যাকটজাত করার পর তাদের খাচিপ্রতি ২০ টাকা করে পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। এতে তাদের গড়ে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮শ টাকা আয় হয়। আমের মৌসুমটা তাদের জন্য বেশ ভাল। এই মৌসুম শেষ হলে তাদের অনেকেই অন্য পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। আবার অনেকেই আম বাগানে শ্রমিকের কাজে নিয়োজিত হন।

বানি ফল ভান্ডারের স্ত্ত্বাধিকারী বানি ইসরাইল বাংলানিউজকে জানান, দিন যতই যাচ্ছে আম দাম ততই বাড়ছে। এটি অবশ্য নতুন কোন ঘটনা না। প্রত্যেকের বছর এমনটা হয়ে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমের দাম বাড়ছে।

তিনি জানান, বুধবার (৩০ মে) প্রতিমণ গোপালভোগ আম ১৭০০-১৭৫০ টাকায় কিনেছেন। বৃহস্পতিবার সেই একই পরিমাণ আম ১৯০০-১৯৫০ টাকায় কিনতে হয়েছে। দিন যাবে আমের দাম আরও বাড়বে বলেও ইঙ্গিত দেন এই ব্যবসায়ী। পেপারে মুড়িয়ে খাচিতে প্যাকেট আম।  ছবি: আরিফ জাহানফরিদ ফল ভান্ডারের সত্ত্বাধিকারী শাহিন আলম বাংলানিউজকে জানান, এখানে আমের দাম যে হারে বাড়ে তারা কিন্তু কখনই বাড়তি লাভ করেন না। আমের জাতভেদে ৫০ থেকে ২শ টাকা মণপ্রতি সর্বোচ্চ লাভ করেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যাপারি সেই আম কিনে নিয়ে গিয়ে কত টাকায় বিক্রি করেন সেটা তাদের ব্যাপার। এক্ষেত্রে তাদের কোনো কিছু করার নেই বলেও জানান ব্যবসায়ী শাহিন আলম।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৪ ঘণ্টা,  জুন ১, ২০১৮
এমবিএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।