বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিপক্ক আমে পুষ্টির অভাব থাকলেও ক্ষতিকর কিছু নেই। তাই বলে ওসব রফতানিও করা যাবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আম রফতানির হার বাড়ার কথা থাকলেও চিত্র নিম্নমুখী। দেশে প্রতিবছর প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়। এরমধ্যে আড়াই লাখ মেট্রিক টন কেবল চাঁপাইনবাবগঞ্জেই উৎপাদন হয়। ২০১৫ সালে যখন প্রথম বিদেশে রফতানি হয়, তখন এখানকার আম বেশি বিদেশে গেছে। ২০১৬সালেও চাঁপাইয়ের আম বাইরে পাঠানো হয়েছে। এক্ষেত্রে গ্রাফরেখা পড়ে যায় ২০১৭ সালে এসে। প্রথমবার ১৫২ মেট্রিকটন, পরের বার ৬৫৬ মেট্রিকটন আর সর্বশেষ রফতানি হয়েছে ৩২৪ মেট্রিকটন আম। অর্থাৎ প্রথমে উপরের দিকে গ্রাফরেখা উঠলেও তা পরের বছরেই নেমে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৭ সালের আম রফতানি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ দেরিতে আম ক্রয়। ফলে চাঁপাইয়ের চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এবার তাদের কোনো আগ্রহই নেই। আর এর ফলে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা সাতক্ষীরার আম বিদেশে পাঠাচ্ছে। আর সেটা পরিপক্ক হওয়ার আগেই। ফলে সেআম ১০ দিনেই শুকিয়ে কুচকে যাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইতিমধ্যে অনেকের পাঠানো আমের দুর্বলতার ছবি পাঠিয়ে বায়াররা আপত্তিও দিয়েছে। যেসব আম বিদেশে পাঠানো হচ্ছে, সেসব আমেরকিছু স্থিরচিত্রও রয়েছে প্রতিবেদকের কাছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কতকিছু রফতানির জন্য শত শত কোটি টাকা খরচ করে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমে অপার সম্ভাবনা থাকলেও তেমন গুরুত্ব এখনো পাচ্ছে না। ২০১৫ সাল থেকে আম রফতানি হচ্ছে। কিন্তু নজরদারির অভাবে অতি মুনাফালোভীরা বিপদ ডেকে আনছে। অপরিপক্ক আম এবার যারা নিয়ে ঠকেছেন তারা ভবিষ্যতে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
এ বিষয়ে রাজশাহীর আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আম রফতানিতে আমাদের ব্যাপক আয় হতে পারে। কেবল ১০ শতাংশ আমও যদি বিদেশে দেওয়া যায়, তাহলে অন্য যে কোনো পণ্যের চেয়ে বেশি রফতানি আয় হবে। অপরিপক্ক আম পাঠানো কোনোভাবেই উচিত নয়। আমরা মানুষকে স্বাস্থ্যসম্মত আম খাওয়ানোর জন্যই কাজ করে যাচ্ছি। এক শ্রেণির মানুষের জন্য দেশের সুনাম একবার নষ্ট হলে আর ফেরানো যাবে না। যে বায়ার একবার ঠকবে সে মুখ ফিরিয়ে নেবে। এতে নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারে। তাই বিষয়টিতে সবার নজর দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই এমন কিছু আমের নমুনা সংগ্রহ করেছি, যা অপরিপক্ক অবস্থায় বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদনও পাঠানো হবে।
অন্যদিকে আম রফতানির ক্ষেত্রে বড় বাধা হচ্ছে সরকার থেকে দাম নির্ধারণ করে না দেওয়া। সেজন্য স্থানীয় ব্যবসায়ী, আড়তদারসহ সংশ্লিষ্টরা মিলে একটি দাম নির্ধারণ করেন। আর তারা যখন সেই নির্ধারিত দামে ফল দেওয়া শুরু করেন তখন অন্য ব্যবসায়ীরা নিজেদের ফলের কাটতি বাড়াতে বাজারে দাম কমিয়ে দেন। এতে রফতানির জন্য যারা চাষ করেন, তারা লোকসানের মুখে পড়েন। কেননা, রফতানির জন্য বাগানের যে পরিচর্যা করতে হয়, তাতে ব্যয় বেশি হয়। তাই রফতানিযোগ্য আমের চাষিরা লোকসানের মুখে পড়ে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এদিক থেকেও বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ কমে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে রফতানিকারক চাষি ইসমাইল খান শামীম বলেন, সরকারের উচিত অন্যান্য ফসলের মতো করেই আমের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া। এতে বাজারেএকটা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হবে। সেই সঙ্গে বাড়বে রফতানিও।
অন্যদিকে যারা অপরিপক্ক আম পাঠাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে সরকারের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, চাষি সবাই মিলেও একটা সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমরা রাজশাহী থেকে কোনো ট্রাক চেক না করে বের হতে দিই না। এজন্য দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা বাই রোটেশন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। আমরা কোনোভাবেই চাই না দেশের মানুষ অপরিপক্ক আম কিনুক। আর রফতানির ক্ষেত্রে তো আরও কঠোর হওয়ার উচিত। এক্ষেত্রে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গেও আলোচনা করে একটি মান নির্ধারণের উপায় এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১১ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৮
ইইউডি/এসএইচ