জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব চাঁপাইয়ের আমেও। যেসব আম এরইমধ্যে পাকার কথা, সেগুলোর সময় ১৫ দিনের বেশি পেরুলেও তাই পাকছে না।
ঝড়, শিলাবৃষ্টি, তাপদাহের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে চাঁপাইয়ে প্রচুর আম প্রতিবছর নষ্ট হয়। কারণ এসব কাঁচা আমের জন্য কোনো শিল্প বা ভোক্তা সেভাবে গড়ে ওঠেনি। অথচ পাকা আমের মতো ঠিকমতো প্রচার আর প্রক্রিয়াজত কেন্দ্র গড়ে উঠলে এখানকার অর্থনীতিতেও তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
মো. রজবুল হোসেন এই মোকামে ব্যবসা করছেন ২৫ বছর। বৈশাখ মাস থেকে শুরু করে মাস চারেক চলে তার আমচুর-আমসত্বের ব্যবসা। তার দোকানে গিয়ে দেখা গেলো ঘরভর্তি শুকনো আমচুর আর আমসত্ব।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসা ভালো না। মোকামে লোক আসা শুরু করেনি। এবার মালও কম। ঝরা বা ঝড়ে পড়া কাঁচা আম শুকিয়ে আমচুর বানাতে হয়। আমরা সাধারণ গ্রামের নারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করি। কেউ আবার এসে দিয়ে যায়। কিন্তু এবার যোগান কম।
কারণ হিসেবে তিনি এবং আশপাশের আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, ১০ কেজি কিংবা তার বেশি আম শুকালে এককেজি আমচুর হয়। আমরা তাদের কাছ থেকে কিনি ২০ থেকে ৩০ টাকায়। আর বিক্রি করি ৩৫-৪০ টাকায়। এতে যারা কাজটি করে তাদের পোষায় না দাম কমের জন্য।
পাকা আমই যেখানে বাজারে ওঠেনি সেখানে আমসত্ব কোথা থেকে এলো জানতে চাইলে একটু এড়িয়ে গিয়ে বলেন, কিছু আগে পাকে কিংবা পোকায় খেয়ে পড়ে সেগুলো দিয়ে আমসত্ব বানানো। পাকা মিষ্টি আমের আমসত্ব আরও পরে উঠবে। এগুলোর দাম কেজি ৭০ টাকা। পাকা আমের আসল আমসত্ব ২০০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হয়।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব আমচুর ও আমসত্ব মূলত ঢাকা, চট্টগ্রামে বেশি যায়। এছাড়া ময়মনসিং, নেত্রকোনা, নারায়ণগঞ্জসহ আরও কিছু জেলায় নেওয়া হয়। কেউ তরকারির সঙ্গে টক হিসেবে, কেউ আচার বানায় আমচুর দিয়ে। মধ্যসত্ত্বভোগীদের জন্য ব্যবসায় মন্দা নাকি বাড়ছে আরও।
তবে তৈরি প্রক্রিয়া ও সংরক্ষণ যে খুব স্বাস্থ্যসম্মত নয় সেটাও স্পষ্ট। খোলা ঘরে আলগা অবস্থায় মাছি ভনভনে পরিবেশে রাখা।
এ বিষয়ে কথা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হুদার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন,আমচুর-আমসত্বের কোনো মার্কেটিং নেই। আবার বিক্রি করে টাকাও কম পান চাষি। তারপর আবার রোদ-বৃষ্টির উপর অনেককিছু নির্ভর করতে হয়। চাষির পক্ষে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে মশারি টাঙিয়ে আম শুকানোও কঠিন। কারণ এটি ঝামেলার। মাছি তাড়ানো অন্যভাবে সম্ভব নয়। সে তুলনায় দাম নেই। এজন্য এগিয়ে আসতে হবে শিল্পপতিদের। কোনো ইন্ডস্ট্রি গড়ে না উঠলে এভাবেই চলবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, এখানে যে আমচুর-আমসত্ব পাওয়া যায় সেটি স্বাস্থ্যসম্মত নয়। মার্কেট কম। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আর উদ্যোক্তা পেলে, কোনো শিল্পগোষ্ঠী এগিয়ে এলে এই খাতেও অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৮
এএ