ভ্রাম্যমাণ আদালত এই অপরিপক্ক আম ধ্বংস করায় জনমনে শঙ্কা জেগেছে, কী করবেন তারা। খাবেন, নাকি খাবেন না- এমন যখন প্রশ্ন, তখন নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন ‘বিজ্ঞজনরা’।
এই অবস্থায় আম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিন্ন কথা। তাদের মতে, এসব নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামতই গণমাধ্যমে এলে ভাল হয়। কেননা, অনেক তথ্য বিভ্রাটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ আম খাবেন, নাকি খাবেন না, এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েছেন।
নানা আলোচনার মাঝে সাধারণ মানুষকে এই অবস্থায় করণীয় বাতলে দিলেন আমের দেশ রাজশাহীর আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাড. মো হামিম রেজা। তিনি বলছেন, ইথোফেন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি ফল পাকানোর রাসায়নিক দ্রব্য। এটি দিয়ে আম বা কলা পাকালে কোনো ক্ষতি নেই। কেননা, ইথোফেন প্রয়োগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বায়বীয় আকারে উড়ে যায়। আর যদিও কিছুটা থাকে, তা মানবদেহের সহনীয় মাত্রার মধ্যে। কিন্তু ক্যালসিয়াম কার্বাইড মোটেই ব্যবহার করা যাবে না। কেননা, এই রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে ১০ শতাংশ আর্সেনিক থাকে। যা সরাসরি ক্ষতি করে। ইথোফেনে পাকানো আমখাওয়া যায়, কার্বাইডে নয়।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, একটি বড় পত্রিকায় খবর দেখলাম ঢাকায় বিশেষজ্ঞা বলেছেন-‘ইথোফেন, কার্বাইড দিয়ে ফল পাকানো ক্ষতিকর নয়’। এটা কিন্তু ভুল তথ্য। খবরটা হওয়া উচিত ছিল- ইথোফেন ব্যবহারে ক্ষতির কিছু নেই। কার্বাইড ব্যবহারে ক্ষতি আছে। এটা গণমাধ্যমের ভুল, নাকি সেই বিজ্ঞজনদের ভুল, যারা সাংবাদিকদের তথ্য দিচ্ছেন, সেটা এই রাজশাহীতে বসে বলা সম্ভব নয়। তবে টকশোতেও অনেকে এ নিয়েই বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন। এতে আমচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন।
আর ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা এবং ফল নষ্ট করার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতারণা একটা অপরাধ। ইথোফেন দিয়ে অপরিপক্ক আম পাকানোয় সাধারণ মানুষ বেশি দাম দিয়ে কিনে ঠকছেন। খাবার খাচ্ছেন ঠিকই, পুষ্টি পাচ্ছেন কম। মৌসুমের আগেই ফল এনে বাজারে ছাড়া হয়েছে। আর দাম রাখা হচ্ছে বেশি। কাজেই এটি অন্যায়।
অন্যদিকে ভাল চাষিরা লোকসানে পড়ছেন। তাই এসকল অন্যায় রোধ করতে, পরিপক্ক আমের পুষ্টি পেতে এবং চাষিদের স্বার্থ রক্ষায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া শাস্তি ঠিক আছে। কেউ কেউ এমন হয়তো বলছেন, অনেক টাকার আম নষ্ট করা হয়েছে। এতে অনেক অর্থের ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এই শাস্তি না দিলে এটা চলতেথাকবে। আর একসময় এটা সবাই করবে। জাতি পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হবে। আর কমে যাবে আমের গুণগত মান।
রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে আম পাকানোর অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম কয়েক হাজার মণ অপরিপক্ক আম ইতিমধ্যে রাজধানীতে নষ্ট করেছেন। একইসঙ্গে দায়ীদের বিভিন্ন মেয়াদে জেল এবং জরিমানাও করেছেন। তিনি বলেন, মানুষকে ঠকানো একটি অপরাধ। এই অপরাধের কারণেই কেবল শাস্তি দেওয়া যায়। তারওপর অনেকে বিষাক্ত পদার্থ দিয়েও আম পাকিয়েছে বলে প্রমাণ মিলেছে। অপরাধকে নিরুৎসাহিত করতেই সাজা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৬ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৮
ইইউডি/এইচএ/