ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

ঈদে পর্যটক মুখর ‘মিনি কক্সবাজার’ হাকালুকি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৮
ঈদে পর্যটক মুখর ‘মিনি কক্সবাজার’ হাকালুকি প্রমোদতরী, ক্যাপসুল বুট, ট্রলার, স্পিডবোটে করে হাকালুকির সৌন্দর্য অবলোকন করছেন দর্শনার্থীরা। ছবি: বাংলানিউজ

সিলেট: রিমঝিম বাতাসেই ঢেউয়ের গর্জন। যেন সাগরের ধারণ করা উত্তাল রূপ। কখনো শান্ত শীতলপাটির স্বচ্ছ জলরাশিতে সাঁতার কাটতে নামেন পর্যটকরা। প্রমোদতরী, ক্যাপসুল বুট, ট্রলার, স্পিডবোটে হাকালুকির সৌন্দর্য অবলোকনে এবার ঈদুল আজহার ছুটিতে হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসছেন ‘মিনি কক্সবাজার’ খ্যাত হাকালুকিতে।

প্রকৃতি এক অপরূপ সৌন্দর্য চারিদিকে দৃশ্যমান হাওরে। রয়েছে হিজল করচের বাগান।

যেখানে সরিসৃপের আবাস। পুরো হাওরকে দৃষ্টি সীমানার ভেতরে নিয়ে আসতে মাঝ হাওরে ওয়াচটাওয়ারে যেতে হয় পর্যটকদের।

এ কারণে ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠেছে ‘মিনি কক্সবাজার’ হাকালুকি। ঈদের দিন থেকেই পর্যটকরা ভিড় জমিয়েছেন হাকালুকির পশ্চিম তীর সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ঘিলাছড়া বাজার জিরো পয়েন্টে। যেখান থেকে হাকালুকি হাওরকে মিনি কক্সবাজারের মতো দেখায়।

সিলেটসহ ৬ উপজেলা জুড়ে অবস্থিত হাকালুকির সৌন্দর্য। ২০১৫ সালের ২০ জুলাই ঘুরে আসুন ‘মিনি কক্সবাজার’ হাকালুকি’ শিরোনামে প্রথম প্রতিবেদন করে পর্যটকদের পরিচয় করিয়ে দেয় বাংলানিউজ। এরপর থেকে পর্যটকদের মুখে মুখে ছড়িয়ে যায় ‘মিনি কক্সবাজার’ হাকালুকি নামটি। এরপর থেকে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে হাকালুকির পশ্চিম তীর ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্টের। পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়াতে স্থানীয় লোকজনের আয় বেড়েছে। পরিবর্তন হয়েছে জীবন মানের। বেকার যুবকদের অনেকে পর্যটকদের ট্রলার সুবিধা দিয়ে সন্তোষজনক আয়ও করছেন। প্রমোদতরী, ক্যাপসুল বুট, ট্রলার, স্পিডবোটে করে হাকালুকির সৌন্দর্য অবলোকন করছেন দর্শনার্থীরা।  ছবি: বাংলানিউজইতোপূর্বে জেলা পরিষদের উদ্যোগে হাকালুকির তীরবর্তী জিরো পয়েন্টের ঘাটের উন্নয়নের পাশাপাশি পর্যটকদের বসার জন্য টাইলস দিয়ে বেঞ্চ তৈরি করে দেওয়া হয়। ঐতিহ্যের বাহক বটবৃক্ষের চারপাশ জুড়ে করা তৈরিকৃত বেঞ্চের পাশাপাশি টাইলস লাগানো হয়েছে হাঁটাচলার স্থানেও। তবে এখানে পর্যটকদের সুবিধার জন্য তৈরি হয়নি শৌচাগার ও ড্রেসিং রুম।

এখন শুধু ঈদ কেন্দ্রিক নয়, হাকালুকির প্রকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন সময় ছুটিতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা সফরের অন্যতম হাকালুকি হাওর।

স্থানীয় বাসিন্দা ছালিক মিয়া, মানিক মিয়াসহ অনেকে বলেন, এখন প্রতিদিনই পর্যটকরা আসেন হাকালুকির সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তবে ঈদের ছুটিতে পর্যপটকদের ভিড় থাকে খুব বেশি। হাকালুকি হাওর।  ছবি: বাংলানিউজস্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মুহিত বলেন, ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্ট সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হলে রাজস্ব পাবে সরকার।

স্থানীয়রা জানান, এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি বর্ষায় সাগরে পরিণত হয়, হেমন্তে হয় চারণ ভূমি। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ, জীব বৈচিত্র দেখে মুগ্ধ হন পর্যটকরা।

কখনো বাতাসের ক্ষিপ্রগতি উত্তাল হয় হাকালুকি হাওর। ঢেউয়ের সঙ্গে মিতালী করে মাছ ধরেন জেলেরা। আবার কখনো নিরব নিস্তব্ধ জলরাশি শীতলপাটি বিছিয়ে যেন কাছে টানে পর্যটকদের। তাইতো স্বচ্ছ জলের আকৃষ্ট হয়ে সাঁতার কাটতে নামেন অনেকে। পর্যটকদের সচেতনতার জন্য পানিতে নামতে, নৌকায় বা ট্রলারে চড়তে গেলে লাইফ জ্যাকেট পরে নেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়।

তাছাড়া পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন সেজন্য টুরিস্ট পুলিশ না থাকলেও সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন পুলিশ সদস্যরা।

যাতায়াত: সিলেট কোর্ট পয়েন্ট থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদরের দূরত্ব মাত্র ২৩ কিলোমিটার। যাত্রীবাহী বাসে ভাড়া নেয় ২৫ টাকা আর সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ৩০ টাকা। সময় লাগে প্রায় আধাঘণ্টা। আর ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে হাকালুকি জিরো পয়েন্টের দূরত্ব আরও ৯ কিলোমিটার। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ১শ’ টাকা রিজার্ভ ভাড়ায় যেতে পারেন ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্টে। যেখানে মিশে গেছে হাকালুকি হাওরের পশ্চিম তীরের গন্তব্য।

থাকবেন কোথায়: সিলেটে রয়েছে বিভিন্ন মানের হোটেল, মোটেল, কটেজ। পর্যটকরা তাদের পছন্দের যেকোনো জায়গায় অবস্থান করতে পারে। সব মিলিয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে সিলেট ভ্রমণে এলে ‘মিনি কক্সবাজার’ খ্যাত হাকালুকি ঘুরে গেলে ভ্রমণের আনন্দ তৃপ্তিদায়কই হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৮
এনইউ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।