ক’সপ্তাহ আগে ঘুরে এলেও এই হাতছানির মায়ায় গত শনিবার (২৫ আগস্ট) ফের ছুটে যাই পূর্ণ যৌবনা রূপসী এ সৈকতে। ঈদুল আজহার ছুটি থাকায় সৈকত সেদিন ছিল লোকে লোকারণ্য।
সীতাকুণ্ড বাজার থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে দীর্ঘ যানজট পেরিয়ে সৈকতের অদূরে বেড়িবাঁধের ওপর দাঁড়াতেই চোখ পড়লো কেওড়া বনের ওপরে শরতের মায়াবী আকাশ। বেড়িবাঁধ পেরিয়ে জুতোজোড়া হাতে নিয়ে কাঁদা মাটির ওপর দিয়ে কিছুটা পথ হাটার পর কানে ভেসে আসছিল সমুদ্রের গর্জন।
দেখতে কাছে মনে হলেও সৈকত তখনও প্রায় আধ মাইল দূরে। সৈকতে যাওয়ার আগে কেওড়া বনে ঘাসের বিছানা আর ঝিরঝিরি বাতাস যেন গা এলিয়ে দিচ্ছিলো- প্রশান্তির ঘুমের জন্য। সাগরের জলে পা ভেজাতে সৈকতের দিকে এগোতেই দর্শনার্থীদের কোলাহল। দলবল নিয়ে কেউ ফুটবল খেলেছে, কেউ গা ভেজাচ্ছে, অনেকেই আবার ব্যস্ত ছবি তুলতে। এরমধ্যেই প্রকৃতির রূপে বদল। শরতের আকাশে কালো মেঘের ছোটাছুটি, হঠাৎ রঙধনুর আগমন, তাও একটি নয়, পাশাপাশি যেন দুই বোন।
কক্সবাজার, কুয়াকাটা বা পতেঙ্গার মতো বেশ পরিচিত না হলেও সাম্প্রতিক সময়ে গুলিয়াখালী সৈকতে ব্যাপকহারে আনাগোনা বাড়ছে পর্যটকদের। সৈকতটির জীবপ্রকৃতির বৈচিত্রের অনিন্দ্যরূপই এর কারণ। চারদিকে সবুজ আর সবুজ, মাথার ওপর বিশাল আকাশ, মাটিতে একপাশে কেওড়ার বন, তার মাঝ দিয়ে খাল, খালের এদিক-ওদিক চারদিকে ছড়িয়ে আছে কেওড়ার শ্বাসমূল, যেন ম্যানগ্রোভ বনের মতো। আর সামনে বিশাল জলরাশি। ।
বিকেলের গুলিয়াখালী যতোটা না সুন্দর, তারচেয়ে মনকাড়া রূপ সন্ধ্যের। একটু সন্ধ্যে গড়াতেই চারদিক থেকে শোনা যায় শিয়ালের ডাক এবং ঝিঁ ঝিঁ পোকার গান। আর জোয়ার এলে জেলেদের ব্যস্ততা।
ভোগান্তি সড়কে
দিনে দিনে পরিচিতি বাড়তে থাকায় এই সৈকতে দর্শনার্থীদের ভিড় ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হলেও চোখে পড়ছে না অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম, বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থায়। সেদিন ঈদের ছুটির দর্শনার্থীদের সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছিল সীতাকুণ্ড-গুলিয়াখালী গ্রামের রাস্তাটি। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে সৈকতের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। সাধারণত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় এই পথটা ১৫-২০ মিনিটে চলে যাওয়ার হলেও দুই ঈদ, পুজো, অন্যান্য ছুটি ও প্রতি শুক্রবারে এই অল্প রাস্তায়ই লেগে যায় যানজট। যাতে ঘণ্টারও বেশি সময় ধরেও বসে থাকতে হয়। রাস্তা এতো সরু যে, একটি মাইক্রোবাস এবং একটি সিএনজি একসঙ্গে ক্রস করতে পারে না। যার জন্য দর্শনার্থীদের পাশাপাশি ভুগতে হয় স্থানীয়দেরও।
যেমন সেদিন স্থানীয় এক বৃদ্ধা জ্যামে পড়ে গাড়ি থেকে নেমে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ক্ষোভ ঝাড়ছিলেন, ‘কোন হতিনে এই সিবিচ নাম দিছিল..., এখন আমগোর সিজ্জতের শেষ নাই’ (কে যে এ সৈকত দেখিয়ে দিয়েছিল, এখন এর কারণে আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই)।
সরু রাস্তাটির কিছু অংশ ইট আর বিটুমিনের হলেও কিছু অংশ এখনও কাচা বলা যায়। বর্ষায় এ রাস্তায় খানাখন্দ তৈরি হয়ে আটকে যায় গাড়ি।
উদ্বেগ নিরাপত্তা নিয়ে
গুলিয়াখালীতে পর্যটকের আনাগোনা বাড়লেও নিরাপত্তার জন্য দেখা যায় না কোনো তৎপরতা। তাছাড়া সৈকতেও কোনো ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেই। যদিও এ ধরনের নবপরিচিত সৈকতে চোরাবালিসহ নানা শঙ্কা থেকে যায়।
এ ব্যাপারে কথা হয় সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম আল মামুনের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে জানান, গুলিয়াখালিকে সরকার এখনো সৈকত হিসেবে ঘোষণা দেয়নি। যার কারণে এখানে যাওয়ার জন্য কোনো ধরনের অবকাঠামো তৈরি হয়নি। সরকার যদি সৈকত হিসেবে ঘোষণা করতো তাহলে রাস্তাঘাট, আবাসিক ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতো পর্যটন কর্পোরেশন। এখন এ সৈকতকে কেন্দ্র করে আলাদাভাবে কিছু করার সুযোগ নেই উপজেলা পরিষদের।
যেভাবে যেতে হয়
স্থানীয়রা গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতকে মুরাদপুর বিচ নামে চেনেন। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে চট্টগ্রামগামী যে কোনো বাসে উঠে নামতে হবে সীতাকুণ্ড বাজারে। সেখান থেকে সিএনজি, অটোরিকশা নিয়ে যাওয়া যাবে গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকতে। ভাড়া লাগবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। সৈকতে কোনো গাড়ির স্ট্যান্ড নেই বিধায় আগেই ফেরার গাড়ির বন্দোবস্ত করে নেওয়া ভালো, এক্ষেত্রে রিজার্ভ করে ফেলা অথবা যাওয়ার গাড়ির সঙ্গেই নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত থাকার চুক্তি করা যেতে পারে।
থাকা ও খাওয়া
গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকতের আশ-পাশে থাকা ও খাওয়ার কোনো ভাল ব্যবস্থা নেই। খেতে হলে সীতাকুণ্ড বাজারে যেতে হবে। বাজারে মোটামুটি দেশীয় খাবার পাওয়া যায়। বাজারেই রয়েছে সৌদিয়া আবাসিক হোটেলসহ কয়েকটি থাকার হোটেল।
বাংলাদেশ সময়: ০৫০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৮
এসএইচডি/এইচএ/