বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯৬৬ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিলো দেশের প্রথম পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের।
২০১২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি হোটেলটির মালিক কোম্পানি বাংলাদেশ সার্ভিস লিমিটেড ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলস গ্রুপ (এশিয়া প্যাসিফিক) প্রাইভেট লিমিটেডের (আইএইজি) সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বন্ধের পর ২০১৫ সালের মার্চে সংস্কার কাজ শুরু হয়।
রূপসী বাংলা হোটেলে কক্ষ ছিলো ছোট-বড় মিলে ২৭২টি। সংস্কারের পর সংখ্যা কমে ২৩১টিতে দাঁড়িয়েছে। আয়তনের দিক থেকে কক্ষের আকার দাঁড়িয়েছে ২৬ থেকে ৪০ স্কয়ার মিটার। বিশ্বমানের অতিথি সেবা নিশ্চিত করতে পরিবর্তন করা হয়েছে সুইমিং পুল ও ডাইনিং হলের স্থান। এর আগে হোটেলটির বলরুম ছিল একদিকে, উইন্টার গার্ডেন নামে সবচেয়ে বড় হলরুমের অবস্থান ছিল আরেক দিকে। এখন দু’টি এক করে দেওয়া হয়েছে। হোটেলটির মূল ফটকও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভেতরের সুইমিং পুলটিও স্থানান্তর করে সাজানো হয়েছে নতুন করে। গ্রাহকদের চাহিদার কথা মাথায় নিয়ে বাড়ানো হয়েছে সুযোগ-সুবিধা। সংস্কার কাজে প্রায় ৬২০ কোটি টাকা ব্যায় হয়েছে।
১৯৭১’র ২৫ মার্চের কালোরাতে জীবন বাজি রেখে ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যার ছবি ধারণ করেছিলেন হোটেলে অবস্থানরত বিবিসির বিখ্যাত সাংবাদিক মার্ক টালি ও সাইমন ড্রিং, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) পাকিস্তান ব্যুরোর প্রধান আর্নল্ড জেইটলিন, ক্লেয়ার হলিংওর্থ, ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদক ডেভিড গ্রিনওয়ে। এসব ছবির মাধ্যমে বিশ্ব জানতে পেরেছিলো বাংলাদেশ কী নৃশংসতার স্বীকার হয়েছে।
বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, এতো বড় একটা বিশাল কর্মযজ্ঞ হয়েছে, কোথায় বেল দিলে ডোরম্যান কোথায় যাবে, এ বিষয়গুলো তাদের চেনা-জানা দরকার। এজন্য সময় লাগে। যে কোন ফাইভ স্টার হোটেল ওপেন করলেও বাণিজ্যিকভাবে যেতে সময় লাগবে, এটা যৌক্তিকভাবেই প্রয়োজন। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে হোটেলটির।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে আরো অনেকগুলো ফাইভ স্টার হোটেল হয়েছে, কিন্তু হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের মতো আর খুঁজে পাবেন না। আগে যে বলরুম ছিল তার আয়তন বাড়ানো হয়েছে। এখন রূপসী বাংলা যে গ্র্যান্ড বলরুম সেখানে এক হাজার অতিথিকে নিয়ে যে কোন সভা করা যাবে।
‘সত্যিকার অর্থে এখানে একটা নান্দনিকতার ছাপ রয়ে গেছে। এ হোটেল আগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ছিল, এদেশের মানসপটে এখনও কিন্তু সেই হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ভেসে আসে। যারা প্রবীণ তারা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল শুনতেই অভ্যস্ত, কিন্তু হঠাৎ করে শেরাটন আসায় একটু বিব্রতকর হয়েছেন। আমরা সেই আমেজটা ফিরিয়ে দিতে চাই’।
বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হলে যে টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে তা উঠে আসবে জানিয়ে সচিব বলেন, হোটেল কোনো মাসেই লসে চলে না, সোনারগাঁও লসে চলছে না।
তিনি জানান, হোটেলের মালিক বাংলাদেশ সরকার, মাত্র দশমিক ২৮ শতাংশ ব্যক্তি মালিকানায়। ফাইভ স্টার হোটেল ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালনা হয় না। রুমের ভাড়া তারাই নির্ধারণ করেন। তারা ভাড়া এখনও ঠিক করেনি, ওয়েবসাইটে দিয়ে দেবে।
লভ্যাংশ ভাগাভাগি নিয়ে সচিব বলেন, ৪০-৫০ শতাংশ রাজস্ব আয় হলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ৯ শতাংশ, ৫০ শতাংশের উপরে রাজস্ব হলে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ নেবে। এভাবে সারা পৃথিবীতে চলছে, আমরাও চুক্তিবদ্ধ হয়েছি।
তিনি বলেন, হোটেলের দেওয়াল আর ছাদ ছাড়া সবকিছু নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। পৃথিবীর সব চাইতে ভালো ভালো উপাদান এখানে সন্নিবেশ করা হয়েছে। সংস্কারে সর্বমোট ৬২০ কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিমান ও পর্যটন সচিব মো. মহিবুল হক, বিএসএল (বাংলাদেশ সার্ভিস লি.) এর এমডি মোকাব্বের হোসেন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮
এমআইএইচ/জেডএস