সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। যেটি বাঙালি জাতির বীরত্বেরও প্রতীক বটে।
একটি জেলার স্বাতন্ত্র্য ও সম্ভাবনাসমূহকে বিকাশিত করার মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নই জেলা-ব্রান্ডিংয়ের মূল অভিলক্ষ। সুজলা-সুফলা বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলা খুলনা। রূপসা নদীর মোহময় রূপের মুগ্ধতার কারণেই হয়তো বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বকুলতলায় বসে রচনা করতে পেরেছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস ‘কপালকুন্ডলা’।
ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যসুন্দরবনের প্রবেশদ্বার খুলনা। শিল্প, ইতিহাস, ঐতিহ্য যেমন সমৃদ্ধ তেমনি মনীষীদের জন্ম ও আগমনে গৌরাবান্বিত। কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার, বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের জন্মস্থান খুলনা। এখানে রয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতৃ-পুরুষের ভিটা ও শ্বশুরবাড়ি। মহাত্মা গান্ধী ও পীর খান জাহান আলী (রহঃ) এর আগমন ঘটেছিল এই খুলনায়।
এছাড়া খুলনা শহরে আছে শত বছরের পুরাতন স্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য স্মৃতিচিহ্ন।
শুধু ইতিহাস ঐতিহ্য নয়, শিল্পনগরী হিসেবেও খুলনা সমভাবে সমাদৃত। জাহাজশিল্প, মৎস্যশিল্প, কেবলশিল্প, পাটকল বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশেরঅর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে পর্যটন খাত। শুধু আমাদের দেশ নয় বিশ্বের অনেক দেশে রাজস্ব আয় এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি বিশেষ খাত হচ্ছে পর্যটন।
খুলনা জেলা ব্র্যান্ডবুকটির মধ্যে বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায় খুলনাকে তুলে ধরা হয়েছে। ভ্রমণ পিয়াসী দেশি-বিদেশি পর্যটকরা বইটি পড়ে অনায়াসে ঘুরে বেড়াতে পারবেন খুলনার আনাচে কানাচে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পর্যটকদের কাছে খুলনা আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
‘সৌন্দর্যে সম্পদে সমৃদ্ধ খুলনা’ বইটির দিক-নির্দশনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবাধনে বইটির পরিকল্পনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন সদ্য বিদায়ী খুলনা জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান। খুলনা জেলা প্রশাসনের প্রকাশনায় বইটির সম্পাদনায় ছিলেন সাবেক অতিরিক্তজেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. নূর-ই-আলম। সম্পাদনা পরিষদে ছিলেন জেলা প্রশাসনের এক ঝাঁক কর্মকর্তা। বইটি ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। বইটির শুভেচ্ছা মূল্য রাখা হয়েছে ১,০০০ টাকা ও ২০ ইউএস ডলার। পর্যটনবান্ধব বইটিতে খুলনা সার্কিট হাউজসহ গুরুত্বপূর্ণ হোটেলের ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে।
মো. আমিন উল আহসান বইটির মুখবন্ধের এক পর্যায়ে লিখেছেন, খুলনার শিল্প, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য তথা সমগ্র খুলনাকে বিশ্বের সকল কৌতূহলী, ভ্রমণপিপাসু, জ্ঞানসন্ধানী মানুষের কাছে তুলে ধরতে জেলা প্রশাসনের এই ব্র্যান্ডবুক প্রণয়ণের ঐকান্তিক চেষ্টা। আমি বিশ্বাস করি খুলনাকে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর করতে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে এই ব্র্যান্ডবুক।
বইটির সম্পাদনা পরিষদ সদস্য খুলনা জেলা প্রশাসনের এনডিসি মো. আরাফাতুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুলনা জেলার ব্র্যান্ডবুক ‘সৌন্দর্যে সম্পদে সমৃদ্ধখুলনা’ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে প্রদান করা হয়েছে। মানে-গুণে-তথ্যে খুলনা জেলা ব্র্যান্ডবুকটির সবাই প্রশংসা করেছেন।
সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা জেলা ব্র্যান্ডবুক সৌন্দর্যে সম্পদে সমৃদ্ধ খুলনা আমি পেয়েছি। আশপাশের কয়েকটি জেলার ব্র্যান্ডবুক আমি দেখেছি। তাদের তুলনায় খুলনার বইটি অনেক ভালো হয়েছে। অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে। বিশেষ করে বইয়ের ছবিগুলো খুব সুন্দর। খুলনার ন্যায় ৬৪ জেলার ব্র্যান্ডবুক করার সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার।
তিনি বলেন, বইটি পড়ে পর্যটকরা মুগ্ধ হবেন। আধুনিক বিশ্বের প্রতিটি দেশেই পর্যটন একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। যেকোনো দেশের অর্থনীতিতে পর্যটনের আয় ব্যাপক অবদান রাখতে পারে। পর্যটনশিল্পকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরতে এ ধরনের বই অবদান রাখবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৮
এমআরএম/এমজেএফ