নৌকায় খালের ওপারের নারিকেলবাড়িয়া এলাকায় পা রাখতেই চোখে পড়লো সবুজ চরের শুভ্রের আস্তরণ, ক্যামরায় ভিউ ফাইন্ডারে তাকিয়ে লেন্সে জুম করে দেখা গেলো সাদা একঝাঁক সাদা বক, যেন সবুজ চরের মাঝে সদ্য ফোটা কাশফুল। কিছু দূর এগুতেও দেখা গেলো খাবারে সন্ধান করছে বালি হাঁসের দল।
শীতের হিমেল হাওয়ায় পাখিদের কিচির-মিচির, দলবেঁধে হেলেদুলে উড়া, কার না ভালো লাগে দেখতে । যে কোনো প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকের কাছে এটি একটি নজরকাড়া দৃশ্য। আর তা যদি হয় বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি, তবে তো কথাই নেই। স্থানীয় একজন জানালেন পাখির সমারোহ দেখতে হলে আমাদের যেতে হবে চর পাতিলায়। সেখানে পাখি দেখার জন্য একটি পর্যবেক্ষন কেন্দ্র রয়েছে। চর পাতিলায় গিয়ে দেখা গেলো, শীত মৌসুমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক, বাইক্কা বিল, টাঙ্গুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাখির মেলা দেখার জন্য ছুটে গেলেও কোন অংশেই কম যায়না কুকরী-মুকরী। নির্বিঘ্নে পাখি দেখতে এখানে রয়েছে সু-ব্যবস্থাও। কুকরী-মুকরীর চর পাতিলা এলাকায় নির্মিত পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকেই দেখা যাচ্ছে সব পরিযায়ী পাখি। দেশি-বিদেশি পাখি দেখার জন্য বন বিভাগ প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক এ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। শীত মৌসুমে বিপুল পরিমাণ পর্যটকের আগামন ঘটছে এখানে। পর্যটকরা দেশি ও বিদেশি পরিযায়ী বিভিন্ন প্রজাতির পাখির বিচরণ দেখতে পাচ্ছেন এখান থেকে। এখানে পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু ছাতা, বসার বেঞ্চ ও একটি ব্যারাকও নির্মাণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কথা হয় চর কুকরী-মুকরীর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে, তিনি জানান শীত মৌসুমে ভোলার বিভিন্ন চরে প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসে। এসব পাখির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিচরণ করে কুকরী-মুকরী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়।
এ চরে জুলফি পানচিল, গাঙচিল, সোনা জিরিয়া, উত্তরীয় লেঞ্জাহাঁস, কালালেজ জৌরালি, ইউরেশিও গুলিন্দা ,ধূসর মাথা টি টি, সিঁতিহাঁস, খুন্তেহাঁস, খয়রা চখাচখি, ছোট পানকৌড়ি, ছোটবগা, বড় বগা, পিয়ঙহাঁস, ধূসরবগা, পাতিহাঁস, কালোমাথা গাঙচিল, ছোট ধলাজিরিয়া, ছোট নর্থজিরিয়া, গো-বগা, মেটেরাজহাঁস, পাতি বাটান, চেগা, পাতিচেগা, পাকড়াকাপাসি, ভুবনচিল, হলদে গাল হট টি টিসহ প্রায় ৬৬ প্রজাতির দেশি-বিদেশী পাখি রয়েছে।
মজিদ মাঝি নামে এক ব্যক্তি জানালেন, চর কুকরী-মুকরীতে সারাবছর পাখি দেখা যায়। এখানে বনাঞ্চলসহ ব্যক্তিগত অনেক বাগান আছে। যেখানে সারা বছরই বক আর পানকৌড়ি বাস করে। এর বাইরে যেসব হাঁস আর পাখি দেখা যায়, সেগুলো পরিযায়ী। কুকরী-মুকরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বাংলানিউজকে বলেন, কুকরীতে পাখি দেখার জন্য পর্যটকরা আসছেন। পাখি সংরক্ষণ করতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্নভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হয়। পাখি শিকার না করার জন্য অনুৎসাহিত করা হয়।
বন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে আসা অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর ভোলার উপকূলীয় অন্যান্য চরাঞ্চলগুলোও। শীতের হিমেল হাওয়া শুরুর সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের অতিরিক্ত শীত থেকে বাচাতে অতিথি পাখির দল ঝাঁক বেঁধে হাজির হয় এ অঞ্চলে। ভোলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা, চর শাহজালাল, চর শাজাহান, চর পিয়াল, আইলউদ্দিন চর, চর নিজাম, দমার চর, ডেগরারচরসহ পাঁচ শতাধিক এমন ডুবোচর রয়েছে। ওইসব চর থেকেই পাখিরা তাদের খাবার সংগ্রহ করে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা পিয়াস নামের শিক্ষার্থী জানান, পাখির আশ্রয়স্থল চরগুলোতে মানুষের বসবাস শুরু হওয়ায় নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে না পাখিরা। একটি বিশেষ শ্রেণীর শিকারি কারেন্ট জালের ফাঁদ পেতে আর বিষ প্রয়োগ করে অতিথি পাখি নিধন করছে।
অবশ্য কুকরী-মুকরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন জানান, পাখি শিকার থেকে বিরত থাকার জন্য এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। নিরুৎসাহিত করা হয় শিকারিদের ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৯
এসএইচডি/এএটি