আর্থিক সক্ষমতা বাড়ায় দেশের বাইরেও অনেক লোকজন ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছেন। ৩ জুন থেকে ৭ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কোনো প্লেনের টিকিট নেই।
সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও এবারের ঈদে অন্তত কয়েক লাখ পর্যটক ঘুরে বেড়াবেন দেশ-বিদেশ, এমনটাই মনে করছেন ট্যুর অপারেটর সংশ্লিষ্টরা।
এর মধ্যে প্রায় দু’তিন লাখ বাংলাদেশি বিদেশে ভ্রমণে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও এর সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান খোদ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কাছেও নেই।
এবার দেশের বাইরে বাংলাদেশি পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি সংখ্যকের গন্তব্য থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, নেপাল ও ভারত। তুরস্ক, মিশর, চীন, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশেও যাচ্ছেন অনেকে। ঈদের লম্বা ছুটিতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে হিমালয়কন্যা নেপাল বেড়াতে ঈদের আগের দিনই ঢাকা ছাড়বেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবু সাদ। তিনি বলেন, হিমালয় কন্যা নেপালকে দেখার ইচ্ছে বহুদিনের। এবারের ঈদে লম্বা ছুটি পাওয়ায় স্ত্রী সন্তানকে বেড়াতে যাচ্ছি।
বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে প্রথম মেঘের রাজ্য দার্জিলিং যাচ্ছেন ঢাকার মগবাজার এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক। তিনি বলেন, আগে কখনো দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। আর বিয়ের পর বউ বলেছিল দেশের বাইরে কোথাও যেতে, কিন্তু সুযোগ হয়নি। তাই ঈদকেই বেড়ানোর জন্য বেছে নিলাম।
আর বন্ধুদের নিয়ে সিলেটে বেড়াতে গেছেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবির। তিনি বলেন, যেহেতু বিদেশ যাওয়ার সামর্থ্য নেই, তাই নিজের দেশই ঘুরে দেখবো। বছরের অন্য সময়টাতে বেড়ানোর সুযোগ থাকে না, তাই ঈদের সময়টাকে বেছে নিয়েছি। টোয়াবের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের সব হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট মিলিয়ে দিনে সর্বোচ্চ প্রায় দুই লাখ মানুষের থাকার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারেই তার অর্ধেক। আর বাকিটা কুয়াকাটা, সিলেট ও মৌলভীবাজারে। এছাড়া রাজধানী ঢাকার চারপাশে গড়ে উঠছে শতাধিক রিসোর্ট। সেগুলোয় হাজার দশেক লোকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি পর্যটন ব্যবস্থাপনার জন্য গড়ে উঠছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এখন পর্যটনকেন্দ্রিক অর্থনীতির আকার দ্রুত বাড়ছে।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের হিসাব বলছে, দেশের ভেতরে এখন বছরে অন্তত ১ কোটি লোক ভ্রমণে বের হচ্ছেন। গত ১০ বছরে এই সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে।
ঈদের সপ্তাহে কক্সবাজার, সিলেট, মৌলভীবাজার ও রাঙামাটির কোনো রিসোর্টে রুম খালি নেই বলে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে ৯৫ শতাংশ রুম বুকিং হয়ে গেছে। রিসোর্টভেদে সেটা শতভাগ।
অতর্কী ট্যুর বাংলাদেশের এক্সিকিউটিভ নূরানী শারমিন আফরোজ বলেন, ঈদে লম্বা ছুটি, তাই লোকজন বিভিন্ন প্যাকেজ বুকিং দিচ্ছেন। সুন্দরবন, কক্সবাজার, সিলেট ও মৌলভীবাজারের বুকিং বেশি মিলছে।
তিনি বলেন, দেশের চেয়ে বিদেশেই বেশি পর্যটক যাচ্ছেন। কারণ সেখানে দেশের তুলনায় খুব বেশি খরচ নয়, বিদেশে আনন্দ প্রমোদ ও প্রফেশনাল সার্ভিস পাচ্ছে, যেটা বাংলাদেশে পাচ্ছে না। তাই দেশের টাকা বিদেশেই বেশি চলে যাচ্ছে। সেই তুলনায় বিদেশি পর্যটক আমাদের দেশে আসছে না বললেই চলে। অ্যামাজিং হলিডেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন আশরাফী বাংলানিউজকে বলেন, এবার সবচেয়ে বেশি মানুষ বেড়াতে যাচ্ছেন ভারতের সিকিম। এই পর্যটন গন্তব্য নতুন হওয়ায় লোকজনের আগ্রহ বেশি। এছাড়া ভারতের আগ্রা, দিল্লি, কাশ্মীরও রয়েছে। এর বাইরে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল ও ভুটানে বেশি গন্তব্য। এছাড়াও আমেরিকা, কানাডা, তুরস্ক, রাশিয়া ও মিশরে গেছেন অনেকে। আমরা এসব দেশের অনেক প্যাকেজ সার্ভিস দিয়েছি। লোকজনের ভালো সাড়া ছিল। ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) প্রেসিডেন্ট ও গ্যালাক্সি হলিডেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌফিক উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, কত সংখ্যক লোক ঈদে বেড়াতে যাবেন কারো কাছেই সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে অনেক মানুষ বিদেশ যাচ্ছেন, সেটা বোঝা যায়। ৩০ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কোনো গন্তব্যেই প্লেনের টিকিট নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৬ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৯
টিএম/এএ