এলাকার মনোলোভা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো থাকায় সহজেই পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে নান্দাইল দীঘি। শীতে নানা ধরনের পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে দীঘির স্বচ্ছ পানিতে।
নান্দাইল দীঘির নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, করতোয়া নদী খনন করার ফলে এ অঞ্চলের পানি ওই নদীতে নেমে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে অর্থাৎ ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসে মাঠ, ঘাট শুকিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে যেতো এক সময়। চারদিকে পানির অভাবে খাঁ খাঁ করতো এ এলাকা। সে সময়ে প্রজাদের দুঃখের কথা ভেবে রাজা নন্দলাল ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে এ দীঘিটি খনন করান। রাজা নন্দলাল থেকেই নান্দাইল দীঘির নামকরণ হয়েছে।
এ দীঘির আয়তন প্রায় একশত একর অর্থাৎ ৩শ বিঘা। এর মধ্যে প্রায় ১৮০ বিঘা জলকর। স্বচ্ছ পানির দীঘিটি প্রায় ১ কিলোমিটার লম্বাও বটে, আবার গভীরও বেশ। দিঘীর চতুর্দিকে রয়েছে উঁচু-নিচু টিলা এবং সবুজ শ্যামল বৃক্ষে পরিবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা। জনশ্রুতি রয়েছে, এ দীঘিটি এক রাতেই খনন করা হয়েছিল। সেই থেকে আজ পর্যন্ত দীঘির তলদেশে কী আছে তাও বলতে পারে না কেউ।
নান্দাইল দীঘিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি স্পিড বোট। কালভেদে প্রতিদিন অসংখ্য দেশি-বিদেশি পাখি, সাইবেরিয়ান হাঁস, অস্ট্রেলিয়ান হাঁস, বুনো হাঁস, সারস, কাউন পাখি, বকের সারি, রাজহাঁস, চীনা হাঁসসহ নাম না জানা বিভিন্ন প্রজাতির রং বেরংয়ের পাখি এখনও দৃষ্টি কাড়ে। শীত মৌসুমে এদের আগমনে জেগে ওঠা চর ও স্বচ্ছ পানিতে এক অনন্য দৃশ্যের অবতারণা হয়।
এছাড়া দীঘির টিলার ওপর বসে ভোরে সূর্যোদয়ের দৃশ্য খুবই উপভোগ্য। রাতে দীঘিটি হয়ে উঠে আরও আকর্ষণীয় ও মনোরম। চাঁদনি রাতে চাঁদের আলোতে মৃদু বাতাসে দীঘির স্বচ্ছ পানি সোনা-রুপার মতো ঝলমল আলো দিয়ে প্রকৃতি প্রেমিককে আহ্বান জানায়।
শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে অতিথি পাখিদের হাত ধরে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে নান্দাইল দীঘিতে আগমন ঘটে নানা বয়সের পর্যটকদের। বগুড়া-জয়পুরহাট মহাসড়কের উত্তর পাশে দীঘিটি অবস্থিত। বগুড়া থেকে বাসে পুনট বাসট্যান্ডে নেমে অথবা জয়পুরহাট থেকে বাসযোগে কালাই বাসস্ট্যান্ডে নেমে রিকশা বা ভ্যানে নান্দাইল-দীঘিতে যাওয়া যায়। কথা হয় কালাই উপজেলার পুনট গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াহাব, মাত্রাই গ্রামের হাবিবুর রহমান, কালাই পৌরসভার শান্তি নগর মহল্লার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তারা জানান, ঐতিহাসিক নান্দাইল দীঘিকে পর্যটন স্থান হিসেবে গড়ে তোলা দরকার। এজন্য প্রয়োজন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা। এছাড়া পর্যটকদের থাকার জন্য বিশ্রামাগার, রেস্টুরেন্ট, কৃত্রিম চিড়িয়াখানা, পুলিশ বক্স, ফুলের বাগান, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, প্রবেশ পথ, পর্যাপ্ত পরিমাণ স্পিড বোট ও এপার থেকে ওপারে যাতায়াত করার জন্য একটি ওভারব্রিজ স্থাপন করলে ভালো হয়। এতে যেমনই এর সৌন্দর্য ও গুরুত্ব বাড়বে তেমনই এখান থেকে সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ও হবে। কর্মসংস্থান হবে এলাকার যুবকদের।
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোবারক হোসেন বলেন, বর্তমানে নান্দাইল-দীঘিটির মোটামুটি উন্নয়ন করেছি। ইতোমধ্যে পর্যটক থাকার জন্য ১টি মাঝারি ধরনের বিশ্রামাগার, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ১টি ছোট ধরনের গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, পাকা প্রবেশ পথ, ৩টি স্পিড বোট, ২টি নৌকা, বেশ কয়েকটি খাবারের দোকান, বসার জন্য ১টি ছোট ধরনের টিনের গোলঘর এবং বড়-ছোট মিলে ৩টি ঘাট স্থাপন করা হয়েছে। দীঘিটি হতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। সেখানে আমাদের আরও অনেক কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে অন্য ঐতিহাসিক স্থানের মূল্যায়ন হলেও দীর্ঘদিন ধরে নান্দাইল দীঘিটি অবহেলিত। এ ঐতিহাসিক দিঘীকে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সরকারিভাবে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। তবেই উত্তরাঞ্চলের ঐতিহাসিক নান্দাইল দীঘিকে নতুন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৯
এইচএডি/