রয়েছে ঢেউয়ের গর্জন আর সূর্যাস্ত। পাখির কিচির-মিচির আর হরিণের ছোটাছুটি তো আছেই।
শহুরে সভ্যতায় হয়তো পেয়েছেন অনেক কিছু। কিন্তু প্রকৃতির মাঝে হারিয়েছেন কী কখনো? শ্রাবণের জলে সর্বাঙ্গ ভিজিয়েছেন কবে সর্বশেষ মনে পড়ে! শরৎ শিশিরে শীতল বালুতে নগ্ন পায়ে হেঁটেছেন কবে সেই স্মৃতি জানি ভুলেই গেছেন! রূপালি জলরাশি ঘেঁষা বলেশ্বরের বুক চিরে ওঠা বিহঙ্গদ্বীপে বসে সুর্যাস্ত আর প্রকৃতি দেখে আপনি শিহরিত হবেনই। এভাবেই পর্যটন পাগলদের আকৃষ্ট করবে বিহঙ্গদ্বীপ। বিহঙ্গদ্বীপে এসে মুগ্ধ হয়েছেন বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।
পরিদর্শনকালে মোস্তাইন বিল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, বিহঙ্গদ্বীপ পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো। কাজেই বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, সূর্যাস্ত আর বিহঙ্গের মিলন মেলা বিহঙ্গদ্বীপে দেখার মতো। জেলা প্রশাসন থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করাসহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিহঙ্গদ্বীপটি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ মালা পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুব শিগগিরই এখানে বেঞ্চ ও ছাতা বসানো হবে। পাশাপাশি বিহঙ্গদ্বীপের সি-বিচের পাশে ঝাউ গাছ লাগানোর জন্য বনবিভাগকে বলা হয়েছে। বরগুনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিহঙ্গদ্বীপকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হলো, যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সরকারের কাছে সুপারিশ মালা পাঠানো হবে।
পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ ও আরিফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ দ্বীপ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে অপরূপে সাজিয়ে রেখেছেন। আমরা উদ্যোক্তা, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।
পাথরঘাটা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিহঙ্গদ্বীপের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে এবং সরকারের কাছেও প্রস্তাব পাঠানো হবে।
পর্যটন বিকাশে উদ্যোগ
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের চলতি বছরের ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কম্পিটিটিভ প্রতিবেদনে ভ্রমণ ও পর্যটনে সেরা দেশগুলোর তালিকায় পাঁচ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১২০-এ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন স্থানের মধ্যে অন্যতম বরগুনা জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা বরগুনাকে প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে পরম যত্নে। এ জেলারই উপজেলা পাথরঘাটা।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, পর্যটন কেন্দ্র হরিণঘাটা ও বিহঙ্গদ্বীপসহ একাধিক পর্যটন স্থান থাকায় পাথরঘাটা উপজেলা ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে হতে পারে পছন্দের। বঙ্গোপসাগর ও বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন ঘেঁষা এই অঞ্চলটি বিপুল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ। যেটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে শুধু প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ। যা পেলে পাথরঘাটা উপজেলার হরিণঘাটা, লালদিয়ার চর, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, বিহঙ্গদ্বীপ-এ স্থানগুলো ঘিরে গড়ে উঠতে পারে দেশের পর্যটনশিল্পের বিরাট সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র।
এখানকার স্থানগুলোকে এক্সক্লুসিভ পর্যটন কেন্দ্র করার প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সোনার চরের ২০ হাজার ২৬ হেক্টর বিস্তৃত বনভূমিসহ ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতজুড়ে গড়ে তোলা হবে এক্সক্লুসিভ পর্যটন কেন্দ্র। এজন্য ‘প্রিপারেশন অব পায়রা-কুয়াকাটা রিজিওনাল প্ল্যান’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার।
বনবিভাগের পটুয়াখালী উপকূলীয় বনকেন্দ্রের ডিএফও আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যেই হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্র উন্নয়নের জন্য এক কোটি টাকার ‘ইকোট্যুরিজম উন্নয়ন’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন বলেশ্বর নদের ওপর বিহঙ্গদ্বীপ নিয়েও আমরা কাজ করছি। লালদিয়া সি-বিচ।
সংসদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য নাদিরা সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্র আরও আকৃষ্ট করতে উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ চলছে। তাছাড়া বিহঙ্গদ্বীপ নিয়েও ডিও লেটার (চাহিদাপত্র) দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন বাংলানিউজকে বলেন, পাথরঘাটার পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে এক্সক্লুসিভ পর্যটন জোনের আওতায় এনে ওই আদলে এখানকার কেন্দ্রগুলোকে সাজালে শুধু দেশি নয়, বিদেশি পর্যটকরাও এখানে আসবে। এ বিষয়ে আমরা সরকারের উচ্চপর্যায়ে জোর তৎপরতা চালাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৯
এনটি