দেশের পর্যটনখাত নিয়ে সম্প্রতি বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্টাফ করেসপন্ডেন্ট তামিম মজিদ।
বাংলানিউজ: আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের কাজে কতটুকু গতিশীলতা এসেছে?
মাহবুব আলী: সেটা আপনারাই বিবেচনা করবেন।
বাংলানিউজ: যতদূর জানা গেছে, আপনি দায়িত্ব নেওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স মুনাফা করেছে…।
মাহবুব আলী: আপনি ঠিকই বলেছেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরই বিমানকে লাভজনক করতে কাজ শুরু করি। দায়িত্ব নেওয়ার আগে বিমান সম্পর্কে নেতিবাচক সংবাদ শুনি, নেওয়ার পরও শুনেছি। সেই সংবাদগুলো পজিটিভলি নিয়ে কাজ শুরু করি। আপনাদের হৃদয়েও রক্তক্ষরণ হয়, যখন বিমানের দুরবস্থা দেখেন। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমি তখনই চিন্তা করেছি, বিমানের জন্য কিছু একটা করা দরকার। বঙ্গববন্ধুর হাতে গড়া এই বিমান যেন তার গৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারে, সেই লক্ষ্য রেখেই কাজ শুরু করি। বিমানের বিশেষ দূর্বলতা ছিল টিকেট পাওয়া যায় না, অথচ বিমানে সিট খালি যায়। যুক্তরাজ্য থেকে আসার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেখলেন, ৭৭৭ উড়োজাহাজের ৪১৯ সিটের মধ্যে ২ শতাধিকেরও বেশি সিট খালি। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি ডিও লেটার (চাহিদাপত্র) দেন।
পরে আমরা অনেক গবেষণা করে পারস্পরিক মতবিনিময় ও বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সমস্যা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিই। ব্যবস্থা নেওয়ার পর থেকে এপ্রিল মে জুন- এ তিন মাসে দেনা পরিশোধ করে ২৭৩ কোটি টাকা নিট মুনাফা করি। এটা অনেকটা আশাব্যঞ্জক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বিমানের পেছনে অনেক শ্রম দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বরাবরই বিমানের খোঁজ নিয়েছেন। তার আন্তরিকতায় মূলত এটি সম্ভব হয়েছে। বিমান মুনাফায় ফেরানোর এই কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রীর। তার কারণেই বিমানের অগ্রগতি হয়েছে।
বাংলানিউজ: বিমান নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মাহবুব আলী: আমরা বিমান নিয়ে একটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আরও দু’টি ড্রিমলাইনার ৯ সিরিজ বিমান বহরে আগামী ২০-২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে চলে আসবে। তার আগে যখন রাজহংস উদ্বোধন করা হয়, প্রধানমন্ত্রী তখন বলেছিলেন আরও দু’টি কার্গো প্লেন কেনা হবে। যেন ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি পণ্য পরিবহন সহজ হয়। এটিও প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া আরও তিনটি বোম্বারডিয়ার কোম্পানির ড্যাশ ৮ কেনা হচ্ছে। আগামী মার্চের মধ্যে সেগুলো বহরে যুক্ত হবে। সবকিছু রেডি হয়ে গেছে। এটা এলে অভ্যন্তরীণ রুটে সমস্যা হবে না। আর্ন্তজাতিক ফ্লাইটও যথাসময়ে ছাড়বে। সেবার মান বাড়ানো হবে।
অন্য এয়ারলাইন্সে যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তাদের তুলনায় সমপরিমাণ সুবিধা, প্রয়োজনে তার চেয়ে বেশি কিছু দেওয়ার মাধ্যমে বিমানকে বিশ্বের সেরা এয়ারলাইন্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে। আমাদের চিন্তা-ভাবনা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কাতার, এমিরেটস, সিঙ্গাপুরের (এয়ারলাইন্স) সমকক্ষ বা তার চেয়ে ভালো কিছু করা। সে কমিটমেন্ট নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি।
বাংলানিউজ: বিমানে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু পর্যটনে দৃশ্যমান কিছু দেখা যাচ্ছে না...
মাহবুব আলী: আপনি যথার্থই বলেছেন, বিমানে অনেক বেশি সময় দিতে হয়েছে, তাই পর্যটনে সময় দিতে পারিনি। কিন্তু পর্যটনে অক্টোবর মাসে সিলেট থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য পর্যটনে খুব দ্রুতগতিতে দৃশ্যমান কিছু দেখানো। পর্যটনে ইতোমধ্যে বিদেশি কনসালট্যান্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পথে। বিশেষজ্ঞরা দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা ঘুরে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করবেন। সেই মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা অগ্রসর হবো। সেজন্য হয়তো আরও বছর দুয়েক লাগবে। কিন্তু এর আগেই আমরা কিছু করার জন্য চিন্তা-ভাবনা করছি।
বাংলানিউজ: পর্যটনবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা আপনাদের আছে কি-না?
মাহবুব আলী: আমি লন্ডন শহরে সাইটসিয়িং বাস দেখেছি। সেই বাস অন্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। আমি সেখানে দেখেছি, মানুষ কীভাবে বাস থেকে আশপাশের সৌন্দর্য তাকিয়ে উপভোগ করে। আমরাও সেই বাস বাংলাদেশে নিয়ে আসবো। প্রাথমিকভাবে ঢাকায় দুইটি ও সিলেটে দুইটি বাস নামানো হবে। সেগুলো দিয়ে পর্যটকদের সেবা দেওয়া হবে। এই বাসে করে যেন বিদেশিরা ঘুরে বাংলাদেশের অপার সৌন্দর্য দেখতে পারে।
বাংলানিউজ: পর্যটন ব্র্যান্ডিংয়ে কী উদ্যোগ নেবেন?
মাহবুব আলী: আমরা সিলেটের পর্যটন গ্রাম ব্র্যান্ডেড করতে চাই। সিলেটের বিছানাকান্দির পাশে একটি পর্যটন গ্রাম তৈরি করা হবে। এই গ্রামে এসে বিশ্বের যে কোনো দেশের এমনকি সুইজারল্যান্ডের নাগরিকরাও এসে বসবাস করতে পারবেন। অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। সেই সুযোগ করে দেওয়া হবে।
বাংলানিউজ: পর্যটন এলাকায় কী কী সুবিধা থাকবে?
মাহবুব আলী: মাধবকুণ্ড, শ্রীমঙ্গল ও রাতারগুলসহ অন্য পর্যটন এলাকায়
যেন বিদেশি পর্যটক এলে মৌলিক প্রয়োজনীয়তা- যেমন ওয়াশরুম, ব্রেস্টফিডিং সেন্টার, কফি শপ, ওয়াশ ব্লক সুবিধা থাকে তা নিশ্চিত করা হবে। সেগুলো আর্ন্তজাতিক মান বজায় রেখে তৈরি করবো।
বাংলানিউজ: পর্যটকদের জন্য হেল্প ডেস্ক বা তথ্য সেন্টার থাকবে কী-না?
মাহবুব আলী: বিদেশিরা এসে যেন আমাদের পর্যটনের গন্তব্য খুব সহজেই জানতে পারে, সেজন্য দেশে আটটি স্টেশন তৈরি করা হবে। সেখানে পর্যটন পুলিশ থাকবে। এখান থেকে পর্যটক তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে গিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করে সন্ধ্যার মধ্যে ফিরতে পারেন যেন, এ ধরনের ব্যবস্থা তৈরি করবো। মহাপরিকল্পনার ভিত্তিতে সবই করা হবে। যেমন পাহাড়ি এলাকায় যে কোনো পর্যটক যেতে চাইলে বিশেষ করে বিদেশি নাগরিক, তাদের আনুষ্ঠানিকতা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে যেন পর্যটকরা ওয়ানস্টপ সেবা পেতে পারেন, একটি জায়গা থেকেই যেন সব করতে পারেন, সেই সুবিধা থাকবে। একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টিম পর্যটনের বিকাশে কাজ করবে।
বাংলানিউজ: পৃথিবীর অনেক দেশের জিডিপির বড় অংশ আসে পর্যটনখাত থেকে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। আগামীতে পর্যটনখাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কতটুকু ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন।
মাহবুব আলী: অ্যাচিভ অনলি ফর ট্যুরিজম। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মতো দেশে অন্য সবকিছু বাদ দিলে শুধু ট্যুরিজম দিয়ে যে আয় হবে, সেটা দিয়ে দেশ চলতে পারবে। বাংলাদেশ এমন একটি সম্ভাবনাময় দেশ। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা সেটি অর্জন করতে পারবো। জিডিপির সিংহভাগ পর্যটন থেকেই আসবে।
বাংলানিউজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মাহবুব আলী: আপনাকেও ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৯
টিএম/এইচএ/