ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

পর্যটকদের ‘আমন্ত্রণ’ জানাচ্ছে খুলনার রানা রিসোর্ট

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৯
পর্যটকদের ‘আমন্ত্রণ’ জানাচ্ছে খুলনার রানা রিসোর্ট রিসোর্টের প্রধান ফটক

খুলনা: নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা থেকে একটু হাফ ছেড়ে বাঁচতে অনেকেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। ভ্রমণপিয়াসী সেইসব মানুষের সময় এবং চাহিদার কথা মাথায় রেখেই খুলনার পশুর নদের পাড়ে তৈরি করা হয়েছে ‘রানা রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক’। সঙ্গে থাকছে ফাইভ স্টার মানের হোটেল।

বিদেশি পর্যটকরা আকৃষ্ট হওয়ার পাশাপাশি শহরের যান্ত্রিক কোলাহল থেকে সরে এসে স্থানীয়রাও বিনোদন খুঁজে পাবেন এখানে এসে। বিশেষ করে শিশুদের আনন্দের জন্য এপার্ককে বলা যেতে পারে ‘শিশু স্বর্গ’।

কারণ এখানে শিশুদের জন্য সেরকম আয়োজনই রাখা হয়েছে।

প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে চাইলে

খুলনা শহরের কাছেই প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে চাইলে এর চেয়ে আদর্শ আর কোনো জায়গা হতে পারে না। প্রকৃতিরকোলে এই পার্কে প্রবেশ করলে প্রশান্তিতে ভরে যাবে মন। সবকিছুই অত্যন্ত পরিপাটি, সাজানো-গোছানো। ভেতরের আসবাবপত্র রুচিশীল, মূল্যবান এবং আভিজাত্যে পরিপূর্ণ।

২০ ডিসেম্বর উদ্বোধন

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বরণপাড়ায় অবস্থিত রানা রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কটি আগামী ২০ ডিসেম্বর (শুক্রবার)  জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। ব্যস্ততাপূর্ণ জীবন থেকে একটু স্বস্তি এবং পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটি দিন আনন্দঘন পরিবেশে কাটাতে ছুটে যেতে পারেন প্রাকৃতিক আবহে ভরপুর রিসোর্টটিতে। খুলনার যে কেউ একদিনে ঘুরে আসতে পারবেন কিংবা চাইলে রাতে থেকেও পূর্ণিমার আলো উপভোগ করতে পারবেন।

জনপ্রিয় রাইডপিকনিক স্পট

৯ দশমিক ২৫ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা এই অসাধারণ পার্কটির মধ্যে তৈরি হবে পাঁচতারকা মানের হোটেল। জাঁকজমকপূর্ণ এই পার্কটি পরিবেশবান্ধব উপায়ে তৈরি করা হয়েছে। তবে পার্কে রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা। এতে আপনি ও আপনার পরিবার নিয়ে নিশ্চিন্তে বিশ্রাম ও রাত্রীযাপন করতে পারবেন। তাছাড়া পিকনিক স্পটে আপনি আপনার পরিবার পরিজন বা আপনার প্রতিষ্ঠানের সবাইকে নিয়ে পিকনিক করতে পারবেন। পার্কের নিরিবিলি মনোরম পরিবেশ আপনাকে সতেজ করবে। অবশ্যই সুন্দর সময় কাটবে পুরো পার্কের মনোলোভা স্থানগুলোতে।

বিশ্বখ্যাত রোমাঞ্চকর রাইড

অ্যামিউজমেন্ট পার্কটিতে রয়েছে ক্যারোসেল, অক্টোপাস রাইড, নাগরদোলা, বাম্পার কার, সেল্ফ কন্ট্রোল্ড প্লেন, ট্রেন, ফ্লাইং কার, জাম্পিং ফ্রগ, লেডি বাগ, মটর রাইড, কেবল কার, সুনামি পুল, ওয়াটার স্লাইড রাইন্ড।

জনপ্রিয় রাইডনির্মাণের উদ্দেশ্য

ওয়েস্টার্ন গ্রুপের চেয়ারম্যান এ এস এম আলাউদ্দিন ভূঁইয়ার অকাল প্রয়াত একমাত্র ছেলে মো. ইমরান উদ্দিন রানার স্মৃতিতে নির্মিত হয়েছে নয়নাভিরাম ও অপরূপ সুন্দর ‘রানা রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক’টি।

গ্রুপের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমার একমাত্র ছেলে রানার স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি নির্মাণের উদ্দেশ্য হলো আমার ছেলের স্মৃতিকে জড়িয়ে এ অঞ্চলের কর্মসংস্থান ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা। এ প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ৯৫ ভাগই স্থানীয়। এটি খুলনার বটিয়াঘাটার পশুর নদের অববাহিকায় অবস্থিত। এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক কটেজ, আধুনিক ও জনপ্রিয় রাইড সম্বলিত অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও ওয়াটার কিংডম, পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন ভ্রমণ (রিভারক্রুজ) সুবিধা। এই পার্কে বিশেষ আকর্ষণ সুনামিপুল যা বাংলাদেশে প্রথম, যেখানে কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট সাগরের উত্তাল ঢেউ এবং ওয়াটার স্লাইড ও ডিজে মিউজিক এবং বিভিন্ন আকর্ষণীয়  রাইড ও বিনোদনের ব্যবস্থা থাকছে। এর ঢেউ হবে সাড়ে ৪-৫ ফুট। রিসোর্টে প্রবেশ মূল্য ধরা হয়েছে ৩শ’ টাকা। এই প্রজেক্টটি শেষ হলে একসঙ্গে তিন হাজার মানুষ এখানে অবস্থান করতে পারবেন। এছাড়া এ প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ লোকের কর্মসংস্থান হবে।

তিনি আরও বলেন, আমি দেখতে পেয়েছি এ অঞ্চলের মানুষের পিকনিক স্পটের বড় অভাব। সেটি মাথায় রেখে আমি এ পার্কের মধ্যে ৪টি পিকনিক স্পটের ব্যবস্থা রেখেছি। পার্কটির স্থাপত্য শৈলীর নকশা সব আমার নিজের তৈরি। শিশুরা এখানে অনেক বিনোদন পাবে বলে আমি আশা করি।

ওয়েস্টার্ন গ্রুপের চেয়ারম্যানের অকাল প্রয়াত একমাত্র ছেলে মো. ইমরান উদ্দিন রানার ভাস্কর্যর সঙ্গে চেয়ারম্যান দাঁড়িয়েবাড়বে পর্যটক ও রাজস্ব

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী মাসুদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, খুলনাঞ্চল বরাবরই অবহেলিত এলাকা। এখানে মানুষের কথা চিন্তা করে এত বিশাল বিনিয়োগ করায় ওয়েস্টার্ন গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ। রানা রিসোর্টটির মাধ্যমে খুলনাসহ সুন্দরবনে পর্যটকদের যেমন আনাগোনা বাড়বে তেমনি এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এ ধরনের বড় রিসোর্ট হলে বিদেশি পর্যটকদের প্রতি সহজেই সুন্দরবণ ভ্রমণে আকৃষ্ট করা এবং পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক বিরাট অবদান রাখা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে খুলনাঞ্চলে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। রানা রিসোর্টের মতো এমন রিসোর্ট হলে খুলনার পর্যটন শিল্পের আরও বিকাশ ঘটবে।

বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহমেদ জিয়াউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের নৈসর্গিক দৃশ্য দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে যে কয়টি রিসোর্ট গড়ে উঠেছে তাদের মধ্যে রানা রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কটি সর্ববৃহৎ। তাদের যে পরিকল্পনা রয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে নিশ্চিন্ত অবকাশের জন্য এ অঞ্চলে এর চেয়ে ভালো জায়গা আর হতে পারে না। এ উপজেলায় এধরনের অত্যাধুনিক রিসোর্ট হওয়ায় আমরা আনন্দিত।

যেভাবে যাবেন

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বরণপাড়ায় ‘রানা রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক’টি অবস্থিত। খুলনার জিরোপয়েন্ট থেকে বাস, মাইক্রোবাস, ইজিবাইকসহ যেকোনো যানবাহনে সড়ক পথে এখানে আসা যায়। শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার অদূরে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে পরিবার পরিজন কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরে যেতে পারেন এ রিসোর্ট থেকে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৯
এমআরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।