বান্দরবান: পর্যটনের সম্ভাবনাময় বান্দরবান জেলার থানচির তমা তুঙ্গী সবচেয়ে নবীনতম পর্যটন কেন্দ্র ,তবে আনুষ্ঠানিকভাবে চালুর একমাস না যেতেই তমা তুঙ্গী এখন পর্যটকের সরব উপস্থিতিতে প্রাণচঞ্চলতায় ভরে উঠেছে।
দুটি ভাগে বিভক্ত করে গড়ে তোলা এ পর্যটন কেন্দ্রর চারপাশেই সবুজ পাহাড়ের সমারোহ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম বা দেশের যেকোনো স্থান হতে সড়ক পথে বান্দরবান গিয়ে সেখান থেকে থানচি উপজেলায় যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বান্দরবান সদর থেকে বাস, জিপ, মাইক্রো অথবা মোটর সাইকেল ভাড়া নিয়ে থানচির তমা তুঙ্গী যাওয়া যায়। বান্দরবান সদর থেকে সড়কপথে তিনঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে থানচি সদরে গিয়ে সেখান থেকে মাত্র ১০-১২ মিনিটের পথ গেলেই তমা তুঙ্গী পর্যটনস্পট।
বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় ইতোমধ্যে নাফাখুম জলপ্রপাত,সাদা পাথর, বড় পাথরসহ বিভিন্ন স্পট ইতোমধ্যে জনপ্রিয় হয়েছে পর্যটকদের কাছে। অনেক দূরে ও দুর্গম এলাকা হলেও নতুনকে জানার আগ্রহ থেকেই পর্যটকেরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ছুটছে থানচিতে।
সম্প্রতি থানচি-আলীকদমকে যুক্ত করতে পাহাড়ের উঁচুতে নির্মাণ করা ডিম পাহাড় সড়ক আর এতে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে থানচি। প্রতিদিনই শত শত পর্যটক ছুটছে থানচির বিভিন্ন পর্যটন এলাকায়। পাহাড়ি এলাকায় মোটর বাইক আর চাঁদের গাড়িতে চড়ে অনেকেই উপভোগ করছে প্রকৃতিকে।
সম্প্রতি তমা তুঙ্গী নামে নতুন পর্যটনকেন্দ্র সৃষ্টির পর থানচিকে পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। থানচি উপজেলা সদর থেকে সামান্য দূরে তমা তুঙ্গী পর্যটন কেন্দ্র এর অবস্থান আর বিশাল এলাকা নিয়ে পাহাড়ের ওপর দৃষ্টিনন্দনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে তমা তুঙ্গী পর্যটনকেন্দ্র।
সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাশন ব্রিগেড (ইসিবি) এর উদ্যোগে থানচি উপজেলা সদর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে তমা তুঙ্গী নামে পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। থানচি-রিমাক্রী-মদক-লিকরি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করার সময় তমা তুঙ্গী পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলে সেনাবাহিনীর ইসিবি ব্রিগেড। কয়েকমাস আগে তমা তুঙ্গী পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হলেও ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। ট্যুরিস্ট ভিউ পয়েন্ট ১ এবং ট্যুরিস্ট ভিউ পয়েন্ট ২ নামে পাশাপাশি দুটি স্থান রয়েছে তমা তুঙ্গীতে। এরমধ্যে ট্যুরিস্ট ভিউ পয়েন্ট ১এ গেলে সেখান থেকে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তজিংডং, ২য় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ক্যাওক্রাডং এবং ডিম পাহাড় অবলোকন করা যায়। দিক-নির্ণয়ের জন্য সেখানে তিনটি ভিউ পয়েন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যটকরা সেখানে গেলেই এ তিনটি স্থান দেখার সুযোগ পায়। বসার কয়েকটি বেঞ্চ নির্মাণ করে দেওয়ায় পর্যটকরা সেখানে বসে চারদিকের দৃশ্য দেখতে পারে।
রয়েছে ছোট্ট পরিসরে একটি পানির ফোয়ারা, ঘুরে বেড়ানোর বিশাল পরিসর।
অন্যদিকে ট্যুরিস্ট ভিউ পয়েন্ট ২ এ রয়েছে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার ব্যবস্থা। বিশাল একটি বৃক্ষ ছায়া দিয়ে রাখছে পুরো পর্যটন এলাকাকে। পর্যটকরা সেখানে বেড়াতে গেলে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে অন্যরকম আনন্দ উপভোগ করেন। এই পর্যটনস্পট থেকে পাহাড় আর প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ হচ্ছে সবাই। ঢাকা থেকে তমা তুঙ্গীতে বেড়াতে আসা পর্যটক নাসিব ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, জেলা সদর থেকে অনেক দূরে হলেও যাতায়াতের সুবিধা থাকায় অনায়াসেই জিপ, মাইক্রোবাস বা বাসে চেপে কিংবা মোটরসাইকেলে চড়ে তমা তুঙ্গী যাওয়া যায়, এমন প্রশস্ত রাস্তা বান্দরবানের আর কোনো পর্যটন কেন্দ্রে দেখা যায় না।
তিনি আরো বলেন, তমা তুঙ্গীতে এলে যে কারোর মন ভালো হবেই।
কক্সবাজার থেকে তমা তুঙ্গীতে বেড়াতে আসা হেলালউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, তমা তুঙ্গীতে এসে মন জুড়িয়ে যায়। এখানে দাঁড়ালে একসঙ্গে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অবলোকনের সুযোগ আমাদের মুগ্ধ করছে। এছাড়া সুপ্রশস্ত ঘুরে বেড়ানোর স্থান, ছবি তোলার স্পট আর খোলামেলা পরিবেশ সত্যিই মনকে ভালো করে দেয়।
তিনি বলেন, বান্দরবানের থানচি আসার আগে তমা তুঙ্গীর নাম শুনেছি আর থানচি এসে প্রথম তমা তুঙ্গী ঘুরে বান্দরবানকে আরেকবার উপভোগ করলাম। থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আতাউল গণি ওসমানী বাংলানিউজকে বলেন, বান্দরবানের যে কয়েকটি উপজেলা রয়েছে তার মধ্যে থানচি অপূর্ব কেননা এখানে সব কিছুই রয়েছে। পর্যটকদের বেড়ানো আর উপভোগের জন্য এই উপজেলার পথে প্রান্তরে রয়েছে মেঘ, পাহাড়, নদী আর ঝর্ণাসহ অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্র আর সেসঙ্গে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জীবন ও সংস্কৃতি উপভোগে তাদের আতিথেয়তা যে কারোই মন জুড়াবে।
মো. আতাউল গণি ওসমানী বাংলানিউজকে আরো বলেন, তমা তুঙ্গী পর্যটনস্পট থানচিতে চালু হওয়ায়তে এই উপজেলায় আগের চেয়ে পর্যটকদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে এবং পর্যটকরা যাতে নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারে তার জন্য উপজেলা প্রশাসন সার্বিক তদারকি অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২২
এএটি