মৌলভীবাজার: পর্যটননির্ভর জেলা মৌলভীবাজার। কিন্তু এবারের ঈদুল আজহার ছুটিতে সেখানে আশানুরূপ পর্যটকের দেখা মেলেনি।
করোনা আক্রান্ত বছরগুলোর আগে ঈদুল আজহায় লোকে-লোকারণ্য থাকতো মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের পর্যটনকেন্দ্রগুলো। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি উপভোগ করার জন্য মোটরবাইক, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশা ও বাস নিয়ে আসা পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠতো। উপজেলার হোটেল, রিসোর্টগুলো বেশিরভাগই ফাঁকা পড়ে আছে। সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা কাঙ্ক্ষিত পর্যটক না আসায় বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
লাউয়াছড়া কো-ম্যানেজমেন্ট কমিটি (সিএমসি) সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন রোববার (১০ জুলাই) মোট ২৩ হাজার ৫৫৩ টাকা। দ্বিতীয় দিন (১১ জুলাই) সোমবার ৭৪ হাজার ৯৫৩ টাকা এবং তৃতীয় দিন মঙ্গলবার (১২ জুলাই) বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার টাকা সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা অন্যান্য বছরের চেয়ে ৬৫ শতাংশ কম।
মৌলভীবাজার জেলার আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে জীববৈচিত্র্যে ভরপুর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, লাউয়াছড়া খাসিপুঞ্জি, মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জি, প্রাকৃতিক জলাভূমি হাইল হাওর, মৎস্য ও জলজ জীববৈচিত্র্যের অভয়ারণ্য বাইক্কা বিল, নয়নাভিরাম পাহাড়ি চা বাগান, মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, সীমান্তবর্তী ধলই চা-বাগানে অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রাজকান্দি বিট, শিল্পকলা সমৃদ্ধ মণিপুরী, ত্রিপুরা, গারো, সাঁওতালসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জীবনধারা ও সংস্কৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই জনপদ পর্যটকদের মন ও দৃষ্টি কেড়ে নেয়।
ঢাকা থেকে দলবেঁধে আসা পর্যটকরা বলেন, ঈদের ছুটিতে ঘুরতে এসেছি লাউয়াছড়ায়। চা-বাগানে ঘুরলাম লোকজন খুবই কম, অনেকটা শান্তিতে ঘুরতে পেরেছি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে পেরে খুবই ভালো লাগল।
শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অবস্থিত নান্দনিক প্রাকৃতিক আবাসন ‘শান্তিবাড়ি’র প্রতিষ্ঠাতা তানভির সরকার লিংকন বাংলানিউজকে বলেন, এবারের সদ্যসমাপ্ত ঈদে আমাদের মৌলভীবাজার জেলায় পর্যটক না আসায় আমরা পুরোপুরি হতাশ। এবার পর্যটকের সংখ্যা যে এত কম হবে, তা আমরা ভাবতেই পারিনি। আশানুরূপ পর্যটক না আসায় আমরা ব্যবসায়ে ক্ষতির মুখোমুখি পড়বো। করোনাকালে আমাদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনো পূরণ করতে পারিনি। তার ওপর এবার এসে যুক্ত হলো ভয়াবহ রকমের পর্যটক স্বল্পতা।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বর্ষাকালের এমনিতেই আমাদের রিসোর্ট-কটেজগুলোতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের বুকিং কম থাকে। তবে ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে প্রায় এক মাস আগ থেকেই বুকিং হয়ে যেতো। কিন্তু এবারের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। বুকিং নেই বললেই চলে। আমাদের গড়ে এবার ৩০/৪০ শতাংশও বুকিং হবে না।
তিনি আরও বলেন, আমার ইকো কটেজে প্রতি বছর ঈদুল আজহার সময় একদল বিদেশি পর্যটক আসেন। তারা এই কোরবানিকে ‘কাউ কিলিং’ বলে। এটা তারা দেখতে আসেন। কিন্তু এবার তারা বন্যার কথা বলে বুকিং বাতিল করেছেন। ঈদের সময় শতভাগ বুকিং হয়ে থাকে কিন্তু এবার অনেক স্থানে অনেকেরই বুকিং হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২২
বিবিবি/এএটি