ঢাকা: বাংলাদেশ-নেপালের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার (২ নভেম্বর) নেপালের সময় সকাল ৯টায় ডোলমা খাং পর্বতের চূড়ায় ওঠে বাংলাদেশ দল।
হিমালয়ের ২০,৭৭৪ ফুট উচুঁ পর্বত শিখর ডোলমা খাং আরোহণ করেছেন বাংলাদেশের ৪ এবং নেপালের ২ পর্বতারোহী।
নেপাল দলে ছিলেন কিলু পেম্বা শেরপা এবং নিমা নুরু শেরপা। ডোলমা খাং পর্বতে এটি বাংলাদেশের প্রথম অভিযান এবং সফল আরোহণ।
বাংলাদেশ দলের দলনেতা এম এ মুহিত জানান, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে প্রথমে দোগারি হিমাল নামের একটি অবিজিত শিখরে অভিযানের উদ্দেশ্যে আমরা ৭ অক্টোবর কাঠমান্ডু পৌঁছাই। ১২ অক্টোবর পশ্চিম নেপালের রুকুম জেলার কাংড়ির উদ্দেশ্য যাত্রা করি। কাংড়ি থেকে জিপে তাকসারা পৌঁছে শুরু হয় দোগারি হিমাল বেসক্যাম্পের উদ্দেশ্যে ট্রেকিং। যেহেতু এই দোগারি হিমাল পর্বতে ইতিপূর্বে কখনো কোনো অভিযান হয়নি বলে বেস ক্যাম্পের পথ চেনার জন্য মাইকোট গ্রাম থেকে ভক্ত পুন মাগার নামে স্থানীয় একজনকে গাইড হিসেবে সঙ্গে নেই। মাইকোট থেকে যাত্রা করে ডোলে ও ফেদী নামের জায়গা পার হয়ে আমরা ১৫,০৯২ ফুট উচুঁ নিমকুন্ড ফুলগাড়ি নামের একটি উপত্যকায় ক্যাম্প স্থাপন করি। সাধারণত এ ধরনের জায়গায় ঘাসে আবৃত থাকে। কিন্তু সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের শুরু পর্যন্ত নেপাল হিমালয়ে ভারী তুষারপাতের কারণে তিন থেকে চার ফুট উচুঁ বরফ জমে ছিল। দুই দিন সেখানে অবস্থান কালে প্রতিদিনই আমাদের দুই দলের পর্বতারোহীরা বেসক্যাম্পের খোঁজে আরও ওপরে যাওয়ার চেষ্ট করেছি, কিন্তু পাঁচ হাজার মিটারের কাছাকাছি পৌঁছে সাত থেকে আট ফুট উচুঁ বরফের কারণে আর সামনে আগানো সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে আবার তুষারপাত শুরু হয়। সার্বিক বিষয় নিয়ে নেপাল দলের নেতা কিলু পেম্বা শেরপার সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা হয়। সবদিক বিবেচনা করে আমরা দোগারি হিমাল অভিযান পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে ২৪ অক্টোবর কাঠমান্ডু ফিরে আসি।
অভিযান আয়োজনকারী সংস্থা ইমাজিন নেপালের কর্ণধার বিখ্যাত পর্বতারোহী মিংমা গ্যালজে শেরপার সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ - নেপাল যৌথ অভিযানটি ডোলমা খাং শিখরে আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশের চার জন পর্বতারোহীর সঙ্গে নেপালের দুই জন পর্বতারোহী কিলু পেম্বা শেরপা এবং নিমা নুরু শেরপা যোগ দেন। দলটি ২৮ অক্টোবর সিমিগাওয়ের উদ্দেশ্যে কাঠমান্ডু ত্যাগ করে।
এম এ মুহিত জানান, সিমিগাও থেকে ট্রেকিং করে আমরা ৩০ অক্টোবর ১২,২৭০ ফুট উচ্চতার বেদিং গ্রামে পৌঁছাই, যেটি ছিল এ অভিযানের বেসক্যাম্প। দুই রাত বেদিং-এ থেকে ১ নভেম্বর দুপুর সোয়া একটায় ১৬,০৭৬ ফুট উচ্চতায় হাইক্যাম্পে পৌঁছাই। সেদিন দিবাগত রাত একটায় আমরা হাইক্যাম্প থেকে শিখর জয়ের উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত আরোহণ শুরু করি। প্রথমে পাথরের বোল্ডার পেরিয়ে রাত তিনটার দিকে বরফে মোড়ানো প্রান্তরের কাছে পৌঁছি। সেখান থেকে ক্র্যাম্পনসহ প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল সরঞ্জামাদি পরিধান করে এক দড়িতে নিজেদের বেধে যাত্রা করি। ভোর ছয়টার কাছকাছি সময়ে আমরা প্রায় ৭০ থেকে ৯০ ডিগ্রি খাড়া কয়েকশ মিটার উচ্চতার এক দেয়ালের নিচে আসি।
সেই কঠিন দেয়ালে রোপ ফিক্স করেন নেপালি দলের নেতা কিলু পেম্বা শেরপা ও নিমা নুরু শেরপা। সেই দড়িতে শুরু হয় কষ্টকর জুমার ক্লাইম্বিং। সেটি এতই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল যে ওপরের জনের পায়ের চাপে বরফ ও পাথর খসে পড়ছিল, ফলে যে কোনো সময় ঘটতে পারতো মারাত্বক দুর্ঘটনা। কষ্টকর সেই আরোহণ শেষে প্রায় ২৫ মিটারের ঝুঁকিপূর্ণ এক সরু রিজ লাইন পেরিয়ে আমরা ডোলমা খাং শীর্ষে পৌঁছাই। প্রথম বাংলাদেশি দল হিসেবে অভিযান এবং আরোহণের সাফল্যে আমরা আনন্দিত।
অভিযানটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব ও ইমাজিন নেপাল। পৃষ্টপোষকতা করেছে ইস্পাহানি টি, স্কয়ার টয়লেট্রিজ ও ফার্স্ট সিকিওরিটি ইসলামী ব্যাংক লি.।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০২২
এসআইএস