ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাণিজ্যমেলা

দেশজ কাঁচামাল নির্ভর রফতানি পণ্য উৎপাদনের আহ্বান

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৯
দেশজ কাঁচামাল নির্ভর রফতানি পণ্য উৎপাদনের আহ্বান ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। ছবি: পিআইডি

ঢাকা: অধিক মূল্যসংযোজিত পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে দেশজ কাঁচামাল নির্ভর রফতানি পণ্য উৎপাদনে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

দেশজ কাঁচামাল নির্ভর রফতানি পণ্য উৎপাদনের আহ্বান

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: অধিক মূল্যসংযোজিত পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে দেশজ কাঁচামাল নির্ভর রফতানি পণ্য উৎপাদনে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

বুধবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে ২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

এ ক্ষেত্রে পাটভিত্তিক বহুমুখী পণ্য, খাদ্যসহ অ্যাগ্রোপ্রসেস পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি, আম, আলু ইত্যাদি পণ্যের রফতানি বাড়াতে তাগিদ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, এ বছর কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যকে ‘প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করা হয়েছে। আমি মনে করি এর ফলে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধি পাবে।

আবদুল হামিদ বলেন, প্রতি বছর হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে বের হচ্ছে। এসব মেধাবী ছেলে-মেয়েদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি আপনাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে সুবিধা আদায় করতে আমাদের জ্ঞানকৌশল ও দক্ষতা বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের আরও বেশি ফলপ্রসূ অবদান রাখতে হবে। নতুন নতুন উদ্ভাবনের ফলে ব্যবসায়ের ধরণ প্রকৃতি দ্রুত পাল্টাচ্ছে। তাই আপনাদেরও নতুন নতুন ধারণা নিয়ে এগিয়ে আসতে তুলনামূলক সুবিধা ও স্থানীয় সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে নতুন শিল্প কারখান গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই কর্মসংস্থান ও উৎপাদনে এগিয়ে যাবে।

দেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে দেশি-বিদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ব্যবসায়ীদের নতুন নতুন ধারণা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন নতুন পণ্যের বাজার সৃষ্টি করতে হবে। তবেই বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত করা সম্ভব।

রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, স্বাধীনতার পর গুটিকয়েক পণ্য নিয়ে সীমিত বাজারে আমাদের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে রফতানি পণ্য ও বাজার অনেক বিস্তৃত। বর্তমানে ৭৫০টি পণ্য বিশ্বের ২০২টি দেশে রফতানি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাজারে টিকে থাকতে হলে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন, পণ্যের ব্র্যান্ডিং ও আকর্ষণীয় করতে উদ্যোগী হতে হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রথমে 'বাংলাদেশ এ ক্যানভাস অব প্রমিজ' নামে গত ১০ বছরের উন্নয়নের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মফিজুল ইসলাম। এছাড়া এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে নতুন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমরা কাজ করছি একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে। আমাদের লক্ষ্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের নীতিগত, পরামর্শগত ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাওয়া। আমরা ২০২১ সালের মধ্যে ৬০ বিলিয়ন ডলারের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছি। এ রফতানির প্রধান খাত হলো তৈরি পোশাক খাত। আমরা তাই নতুন বাজার সৃষ্টির দিকে নজর দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে রাশিয়া উপযুক্ত বাজার হতে পারে। আরো নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে।

ফিতা কেটে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।  ছবি: পিআইডিচলমান শ্রমিক আন্দোলন প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, একটি গোষ্ঠী আমাদের শ্রমিকদের নিয়ে খেলছে। এটা সম্পূর্ণ রাষ্ট্রবিরোধী। এ বিষয়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় বাণিজ্যের সুযোগ ও ঝুঁকি উভয়ই বাড়ছে। যদিও আমরা এখনো এ ঝুঁকি থেকে দূরে রয়েছি। গত অর্থ বছরে আমাদের রফতানি আয় ছিলো ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ বছর তা ৪৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। রফতানির এ ধারাবাহিকতা রক্ষা ও ভবিষ্যত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ঝুঁকি মোকাবেলায় আমাদের নিজস্ব ‘ব্রান্ড’ সৃষ্টি করতে হবে। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা নতুন ব্র্যান্ড তৈরি ও আন্তর্জাতিক পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকার সক্ষমতা বাড়াচ্ছে।

অনুষ্ঠানে এফবিসিসআই সভাপতি শফিউল ইসলাম বলেন, আমরা চাইনা রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আগের মতো কেবল মেলা আয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুক। দেশের রফতানি বাড়াতে তাদের দেশে-বিদেশে সভা-সেমিনারের আয়োজন করতে হবে। আগামী বছর থেকে বাণিজ্যমেলা নিজস্ব ঠিকানায় ফিরবে। পূর্বাচলের ওই স্থানে ২০ একর জমি দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই, এটা কমপক্ষে ৩৬ একরে উন্নীত করা হোক।

তিনি বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যর প্রসারে রাজনৈতিক স্থীতিশীলতা, সরকারের ধারাবাহিকতা ও নীতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক। আমরা চাই আগামী ১০ বছরে দেশের অবকাঠামো ও জ্বালানি বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হোক। মেগা প্রকল্পগুলো মানসম্পন্ন পর্যায়ে যথাসময়ে বাস্তবায়ন হোক এবং যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের ঘোষণা ও বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে, তাও যথাসময়ে শেষ হোক। একই সঙ্গে বিদেশের মিশনগুলোয় কর্মরত বাণিজ্যিক এটাচে বা বাণিজ্যিক কাউন্সিলরদের এখনই জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসার সময় হয়েছে।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য বলেন, মেড ইন বাংলাদেশ ও ‘দেশি ব্রান্ড’ তৈরির মাধ্যমে আমরা নিজেদের একটি উৎপাদনশীল জাতিতে পরিণত হতে পারি। বাংলাদেশি ব্র্যান্ড এরইমধ্যে দেশে-বিদেশে পাখা মেলতে শুরু করেছে। সবার সহযোগিতায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডগুলো বিশ্ব বাজারের দখল নেবে বলে আমার বিশ্বাস।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৯
আরএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।