মহেশখালী, কক্সবাজার থেকে: শহর থেকে দু’কিলোমিটার দূরে কস্তুরা ঘাট। স্পিডবোট চেপে গতি আর ঢেউয়ের প্রবল ধাক্কায় আধঘণ্টায় মিষ্টি পানের সবুজ দ্বীপ মহেশখালী।
সাগর-নদীর কোলঘেঁষে সবুজ পাহাড়, মিষ্টি পান, আদিনাথ মন্দির, প্যাগোডার ‘মিষ্টি দ্বীপ’। জেটি থেকে প্রায় চারশ’ গজ হেঁটে পৌঁছে যাবেন ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন আদিনাথ মন্দিরে। মহাদেবের আরাধনায় অসংখ্য পূণ্যার্থীর যাতায়াত এখানে। দর্শনার্থী কম নয়। বঙ্গোপসাগরের বুকের এ দ্বীপটির রূপ-যৌবনের পাশাপাশি ঐশ্বর্য চমকে দিয়েছে আমাদের। কথা বলে ও স্বল্প পরিসরে ঘুরে মানুষের ভালো থাকার ভালোভাবে থাকার প্রমাণও মিললো বেশ।
তুলনামূলক কম দামে পাওয়া টাটকা ডাব আর পাহাড়ি কলা খেয়ে প্রায় ৫০ কদম সিঁড়ি বেয়ে সোজা মন্দির প্রাঙ্গণে। চলছিল শিবপূজা। প্রণাম সেরে পা বাড়ালাম মিষ্টি পানের লোভে। মন্দির থেকে ১০ মিনিট পাহাড়ি সিঁড়ি বেয়ে পৌঁছলাম চূড়ায়।
মন জুড়ানো সৌন্দর্য ঘিরে ধরলো আষ্টেপৃষ্ঠে। সাগর-নদীর মাঝে যেন আরেক সবুজ সাগর ঘিরে ধরলো আমাদের। আরো একটু এগিয়ে দেখা মিললো দেশখ্যাত মিষ্টি পানের বরজের। মনে পড়লো প্লেন থেকে দেখতে পাওয়া সবুজের মাঝের ছনের ছাদের বাড়ির কথা। আমরা প্রতি মুহূর্তে মনে করছিলাম এগুলো বাড়ি। কিন্তু ভ্রম দূর হলো পানের বরজগুলো দেখে।
তখনো মিষ্টি পানের স্বাদ পড়েনি জিহ্বায়। বার বার শুধু আউড়ে চলেছি সেই বিখ্যাত গানের কলি, ‘যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম, মইশাইল্যা পানের খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম...’। ভালো জিনিসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তারপর পেলে ভালো লাগে। আমরাও জিইয়ে রাখলাম সে লোভ।
বরজগুলো পাহাড়ের ফাঁকের সমতলভূমিতে। বরজ দেখতে না এলেও স্থানীয়রা বহুদূর থেকেও এখানে আসেন একটু নিরিবিলি সময় কাটাতে। তবে তরুণ-তরুণীদের জুটি বেধে ঘুরতে দেখা গেলো বেশি। অনেকে এসেছেন বন্ধু-বান্ধব পরিবার নিয়েও।
পাহাড়চূড়ার মন্দিরের এক অংশের স্থাপনায় ছবি তোলার জন্য আকর্ষণীয় স্থান সবার কাছে। সবুজ সাগর চোখের সীমানা থেকে যেখানে হারিয়ে যাবে সেখানে দেখা মিলবে নীল আকাশ আর জলরাশি। এক সাগর থেকে চোখ জুড়ানো আরেক সাগর।
সৌন্দর্য মানুষকে যেমন টেনে রাখে তেমন তাকে একসময় হারাতেও হয়। আমরা একটু একটু করে হারাতে থাকলাম।
নামার পথে রাখাইনদের হাতের তৈরি নানান ধরনের কাপড় ও বার্মিজ কাপড় পাবেন মোটামুটি সাশ্রয়ী দামে। চাইলে কিনে নিতে পারবেন পরিবারের সদস্যদের জন্য।
এবার দুপুরে উদরপূর্তির পালা। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালককে বললাম উপজেলা সদরে নিয়ে যেতে। দূরত্ব অল্প। মাত্র ১৫ মিনিটের পথ। যেতে যেতে মনে হলো শুধু বড় বাস ছাড়া সব আছে এখানে। খাবার-দাবার কক্সবাজার থেকে সস্তা। মোটামুটি ১৩০-১৪০ টাকার মধ্যে রূপচাঁদা, কোরালসহ বিভিন্ন মাছ সবজি ডাল খেতে পারবেন। খেলাম আমরাও। খাওয়া শেষে জিলাপি আর মিষ্টি পান চলে এলো না চাইতেই।
তখন পর্যন্ত ধারণা ছিল মিষ্টি পান মানে জর্দা দিয়ে খাওয়া পানের মতো মিষ্টি হবে বোধহয়। হালকা মসলা দিয়ে সাজানো পান গোটা করে মুখে পুরে চিবিয়ে একটু হতাশ হলাম। মিষ্টি বলতে সে মিষ্টি নয়, তবে ঝাঁঝ নেই এটাই এ পানের অন্যতম বিশেষত্ব। যারা নিয়মিত পান খান এবং পছন্দ করেন তাদের কাছে বেশ উপাদেয়। খারাপ লাগবে না আপনারও। যদি কখনো এই সুদর্শনাকে দেখতে আসেন, পান খেতে কিন্তু ভুলবেন না।
এই মিষ্টি পান দেশের আর কোথাও জন্মে না। দ্বীপটিকে মিষ্টি বলতে হচ্ছে করে এ কারণে যে, এখানকার আবহাওয়াটা এমন যে সমুদ্রের লবণাক্ত হাওয়া আর পাহাড়ি মাটির বিশেষ গুণে ‘গুণান্বিত’ এ পান।
** খাবারের সন্ধানে সাঁতারু গাভী!
** অটল পাহাড়ের বুকে উদ্দাম সাগর
** শারদ মেঘের দেশে, পাখির ডানায় ভেসে
** গরম গরম ফিশ ফ্রাই
** মহাপতঙ্গের পেটে একঘণ্টা!
** রিজেন্টে ফ্রি কক্সবাজার দর্শন
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৪