বালিয়াটি ঘুরে এসে: টানা কর্মব্যস্ততা আর যান্ত্রিক শহরের বিষন্নতায় মন চাইছে কোথাও ছুট লাগাতে। কিন্তু সময়ের অভাবে হয়ে উঠছে না।
মনের অবসাদ দূর করতে ভ্রমণ বা বিনোদনের কোনো বিকল্প নেই। আর তা যদি হয় প্রাচীন পুরাকীর্তি বা রাজ-রাজাদের বাড়ি, তবে তো কথাই নেই।
সীসা-ধূলিময় শহুরে ব্যস্ততার বাইরে ভ্রমণপ্রেমীদের জন্যে এ রকম আদর্শ ভ্রমণ স্থান হতে পারে রাজধানীর অদূরে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি প্রাসাদ। যা বালিয়াটি জমিদারবাড়ি নামে বেশি পরিচিত।
এক ঢিলে কয়েক পাখি শিকারের মতো বালিয়াটিতে গেলে আপনি আরো ঘুরে দেখতে পারেন অল্প দূরত্বের উপজেলা পরিষদের মনোরম নৈসর্গ, পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি, রামকৃঞ্চ মিশনসহ ছোটবড় নানান স্থাপনা।
ইতিহাস-ঐহিত্য সমৃদ্ধ নগরী ঢাকার কাছেই অবস্থিত মানিকগঞ্জ জেলাও সমৃদ্ধ নানা ঐতিহ্য আর পুরাকীর্তিতে।
যান্ত্রিক ঢাকাবাসীর জন্য তাই স্বল্পদূরত্বের মানিকগঞ্জের পুরাকীর্তি ও প্রাচীন স্থাপনাগুলো হতে পারে মনের খোরাক মেটানোর অন্যতম উপায়।
বালিয়াটি জমিদারবাড়ির একাল-সেকাল
১৯৮৭ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর বালিয়াটি জরিদারবাড়িকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করে এর দায়িত্ব নিলেও মূলত এর বর্তমান নিয়ম ও প্রদর্শনী ব্যবস্থার শুরু হয় বছর চারেক আগে। ২০১০ সালের মাঝামাঝি জমিদারবাড়িতে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র মাধ্যমে দেশব্যাপী নজর কাড়ে বালিয়াটি প্রাসাদ।
তবে নিয়ম এবং সরকারি সংরক্ষণ তৎপরতা বৃদ্ধি পেলেও কার্যত প্রাচীন ও ঐতিহ্য রক্ষায় তেমন কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে। এর আগে ২০০৮ সালে যখন প্রচারের আড়ালে ছিল এ জমিদারবাড়ি, তখন বন্ধুরা দলবেঁধে গিয়ে প্রাসাদগুলোর যে ভগ্নদশা দেখেছিলাম এবার ঈদের পর গিয়ে দেখা গেল, প্রায় একই অবস্থা। কিছু প্রাসাদের ওপরাংশে সংস্কারের প্রলেপ পড়লেও তাতে স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
বরং সাতটি প্রাসাদের ছয়টি সম্পূর্ণ ও অপরটির প্রায় অধিকাংশ কক্ষ বন্ধ রেখে কালের এ ঐতিহ্যের ধ্বংসকে ত্বরান্বিত করা হচ্ছে।
তবে উন্নতি হয়েছে জরিদারবাড়িতে যাওয়ার পথের আর প্রাসাদের বাইরের বাজারের বিকিকিনির।
বালিয়াটি প্রাসাদের ইতিহাস
বালিয়াটি প্রাসাদের সাইনবোর্ড ও জেলা তথ্য বাতায়ন থেকে এবং এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে বালিয়াটি প্রাসাদের যে ইতিহাস জানা গেছে তা এমন:
আজকের বালিয়াটি জমিদারবাড়ির সুরম্য প্রাসাদ দেখে কেউ কস্মিনকালেও ভাবতে পারবেন না এ প্রাসাদ প্রতিষ্ঠার পেছনের কষ্টকর কাহিনী এবং এক সাধারণ মানুষের গল্প।
আড়াইশ’ বছর আগের কথা। মহেশ রাম সাহা নামে বৈশ্য বারেন্দ্র গোত্রের ছোট্ট এক কিশোর ভাগ্যান্বেষণে বালিয়াটিতে আসেন। বালিয়াটির এক পান ব্যবসায়ীর বাড়িতে চাকরি জোটে বালক মহেশ রাম সাহার।
বিয়ে করে এখানেই সংসারী হন মহেশ রাম। পরিশ্রমী মহেশ রামের যোগ্য উত্তরসূরি ছেলে গণেশ রাম বাবার উৎসাহে শুরু করেন লবণের ব্যবসা। গণেশ মেধা ও পরিশ্রমে তার ব্যবসাকে বেশ বর্ধিত করেন।
গণেশ রামের চার ছেলের মধ্যে গোবিন্দ রাম পৈত্রিক ব্যবসাকে এগিয়ে নেন আরো অনেকদূর। গোবিন্দ রামও বিয়ে করে আসন গাড়েন বালিয়াটিতে। তার চার ছেলে দাধী রাম, পণ্ডিত রাম, আনন্দ রাম ও গোপাল রাম সবাই বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে পৃথক ব্যবসা শুরু করেন। চার ভাই সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ঝালকাঠি, নলছিটি ইত্যাদি স্থানে লবণ, সুপারি, চালের ব্যবসা করে প্রচুর বিত্ত-বৈভবের মালিক হন।
একপর্যায়ে তারা জমিদারি ও তালুকদারি কিনতে শুরু করেন। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেন সুরম্য ইমারত। ওই চার ভাই থেকেই বালিয়াটি গোলাবাড়ি, পূর্ববাড়ি, পশ্চিম বাড়ি, মধ্যবাড়ি ও উত্তর বাড়ি নামে পাঁচটি জমিদার বাড়ির সৃষ্টি হয়। যা আজকের মানিকগঞ্জের পুরাকীর্তিকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে।
মূলত বালিয়াটির জরিদারির গোড়াপত্তন করেন গোবিন্দ রাম সাহা। প্রাসাদ প্রাঙ্গণে রাখা পরিচিতি সাইনবোর্ডেও তাই লেখা। গোবিন্দ রাম সাহা পরিবারের এই জমিদারি দোর্দণ্ড প্রতাপে টিকে ছিল ১৭৯৩-১৯৪৮ সাল পর্যন্ত। এরপরও বিক্ষিপ্তভাবে কিছুকাল।
বালিয়াটির পাঁচ জমিদারবাড়ি
পূর্ববাড়ি
বালিয়াটি জমিদারাবাড়ি পাঁচ বাড়ির সমষ্টি হলেও লোকে বালিয়াটি বলতে এখন পূর্ববাড়ি নামে পরিচিত সাতটি দক্ষিণমুখী প্রাসাদটিকে বোঝেন।
বাড়িটি প্রায় ৫.৮৮ একর জমির উপর অবিস্থত। বাড়ির সামনে টানা উঁচু প্রাচীর। এতে চারটি সিংহদ্বার। প্রতিটি দরজার ওপরে একটি তেজী সিংহের মূর্তি। সিংহদ্বার পেরিয়ে প্রবেশ করতেই প্রশস্ত আঙিনায় ফুলের বাগান। শুরুতেই বাড়ির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস উল্লেখ করে সাইনবোর্ড পোতা। বা পাশে রয়েছে নাট্যমঞ্চ, যেটি বালিয়াটি পাবলিক ক্লাব ও লাইব্রেরি হিসেবেও ব্যবহৃত হতো।
এখানে দুই সারিতে সাতটি দক্ষিণমুখী প্রাসাদ রয়েছে। যেগুলোতে ২০০টি কক্ষ রয়েছে।
বাড়ির সামনের সারিবদ্ধ চারটি প্রাসাদ ব্যবহৃত হতো ব্যবসায়িক কাজে। এগুলো প্রাসাদ-১, ২, ৩ ও ৪ নামে পরিচিত। প্রাসাদ ১ ও ৪ তিনতলা, এ দুটোর রঙ লাল। তবে কালের আবর্তে রঙ নষ্ট হয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে। প্রাসাদ ২ ও ৩ দ্বিতল, এ দুটোর রঙ দুধসাদা। এসব প্রাসাদের পেছনের সারিবদ্ধভাবে থাকা তিনটি অন্দরমহল যথাক্রমে ১, ২ ও ৩ নামে পরিচিত। ১ অন্দরমহলটি লম্বা ও দৃষ্টিনন্দন হলেও তা প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
এর পর পাশাপাশি অন্দরমহল ২ ও ৩ মোটামুটি ভালো রয়েছে। এ দুই প্রাসাদের সামনের অংশ দ্বিতল ও পেছনের কিছু অংশ তিনতলা। এ দুই প্রাসাদের মাঝঝানের ভেতরবাড়ির ছোট আঙিনা রয়েছে।
এসব প্রাসাদ ছাড়াও অন্দরমহল ১ এর পেছনে ছোট্ট দ্বিতল একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন রয়েছে। তবে এটি কেন এবং কি ভবন তা জানাতে পারেননি এখানকার কর্মচারীরা।
এসব ভবনের পেছনে রয়েছে সুন্দর ও মনোরম একটি দিঘি। এ দিঘির ৬টি ঘাট রয়েছে। এর আগে এসে দিঘির জীর্ণতা দেখলেও তাতে আদি রূপটা ঠাওর করা যেত। এবার সংস্কারের পর দিঘির খোল-নলচেই পালটে গেছে। দিঘির পেছন পাড়ে সারিবদ্ধ যে শৌচাগার ছিল তা সংস্কার করে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর মতো করা হয়েছে। ফলে মূল সৌন্দর্য অনেকটাই বিলীন হয়ে গেছে।
তবু দিঘির ঘাটে বসেই গা টা কেমন ছমছম করে ওঠে। ঘাটগুলোতে দিঘির জলে যেখানে নিজের ছায়া পড়েছে হয়তো সেখানেই টানা দুই শতাব্দী কতোদিন, কতো প্রহর বসে সেখানে নিজের বিমুগ্ধ ছায়ারূপ দেখেছেন জমিদারবাড়ির কতো গৃহবধূ, রাজকন্যারা।
এ বাড়ির জমিদারেরা ধামরাইয়ের বিখ্যাত রথ, ঢাকার কেএল জুবিলী হাইস্কুল, বালিয়াটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যালয়, বালিয়াটি রামকৃষ্ণ মিশন, নহবত খানা, শ্রী শ্রী মাধব গৌড়ের মঠ ঢাকা, নিতাই গৌড়ের আখড়া প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
স্থাপত্যশৈলী
বালিয়াটি জমিদারবাড়িটি স্থাপত্যশৈলী প্রাচীন, উপনিবেশিক ধাঁচের। বাড়ির প্রতিটি প্রাসাদে সূক্ষ্ম কারুকাজ ও নকশা সহজেই পর্যটকের দৃষ্টি কাড়ে। বিশেষ করে সামনের সারির প্রাসাদের থামগুলোর ওপরের দিকে সর্পাকৃতি ও মানুষের মাথার অপূর্ব নকশা সবাইকে মোহিত করে।
প্রতিটি প্রাসাদের সামনে টানা বারান্দা লোহার কারুকাজ শোভিত। তবে ক্ষয়ে ও নষ্ট হয়ে অনেক নকশা ও আর শৈলী এখন ঠিকমতো বোঝা যায় না।
মূল ভবনের দেয়ালগুলো প্রায় ২০ ইঞ্চি পুরু। এসব দেয়াল চুন-সুড়কি ও শক্তিশালী কাঁদা-মাটির মিশেলে তৈরি। বাড়ির ছাদে লোহার রডের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে বেশ শক্তিশালী লোহার পাত। আগেরবার অন্দরমহলের ভেতরে ও ছাদে ওঠার সুযোগ পেলেও এবার তা বন্ধ। তাই ভেতরবাড়ির কি অবস্থা জানা গেলো না। তবে বাইরে থেকে ভেতরে লোহা ও কাঠের কারুকাজের চিহ্ন দেখা যায়।
এক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম অন্দরমহল-১। তিনতলা এ প্রাসাদে কাঠ ও লোহার অপূর্ব কারুকাজ করা। তবে প্রায় ভগ্নদশায় পরিণত এটি।
আয়নাঘর
বাড়ির প্রাসাদ-২ শুধু পর্যটকদের দেখার সুযোগ রয়েছে। নিচতলার একটি কক্ষে রাখা সারিবদ্ধ ১৫টি সিন্দুক। ওই কক্ষ দিয়ে দোতলায় ওঠে তিনটি রুমে রাখা ব্যবহৃত জিনিসপত্র দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে আয়নাঘরটি বেশ চমকপ্রদ। চারপাশে নানা আকারের আয়না লাগানো বড় কক্ষটি নাচঘর হিসেবে ব্যবহৃত হতো বলে জানালেন এক কর্মচারী।
অপর দুইটি কক্ষের বাড়ির ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মধ্যে ঝুলন্ত ল্যাম্প, চিমনি, হারিকেন মার্বেল পাথরের মূর্তি, কাঠের আসবাব, বড় খাট ও আলমিরা দেখা গেল।
গোলাবাড়ি
দ্বিতল ও ১৪ কক্ষের মূল একটি দালানকে কেন্দ্র করে এ বাড়ি। আশপাশে আরও কয়েকটি ভবন থাকলেও এখন আর এসবের অস্তিত্ত্ব নেই।
বাড়িতে লবণ রাখার বড় একটি গোলা ছিল বলেই এ বাড়ির নাম গোলাবাড়ি। গোলাবাড়ির চত্ত্বরে দোল পূর্ণিমার ১২ দিন পর বারুণীর মেলা বসত। সেই মেলা এখন বসে বালিয়াটির পুরান বাজারে।
গোলাবাড়িতে গিয়ে দেখা মিলল এক অশীতিপর ব্যক্তির। সৌম্যদর্শনের খর্বকায় এই ব্যক্তি নিজেকে রমেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী বলে পরিচয় দিয়ে জানালেন বালিয়াটির শেষ প্রতিনিধি তিনিই কেবল টিকে আছেন এখানে। তার স্বজনরা সবাই ভারতে চলে গেছেন।
অন্যান্য বাড়িগুলো সরকার নিয়ে নিলেও তিনি মামলায় জিতে এ বাড়িটি ধরে রেখেছেন। এখানেই মরতে চান।
রমেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী জানান, তার বাবা বীরেন্দ্রনাথ রায়ের মৃত্যুর পর ১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত তিনি জমিদারি করেছেন। মায়ের আদেশে এখানেই টিকে আছেন। বাড়ির অন্যান্য স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেলেও মূল দ্বিতল প্রাসাদটি অবলম্বন করে পড়ে আছেন এ সাবেক জমিদার।
বাড়ির সামনে অকেজো এক পুকুরের ভগ্ন শানবাধানো ঘাটের কিয়দাংশ যেন তার কথারই প্রতিধ্বনি করল।
জমিদার রমেন্দ্রনাথ এ বাড়ির ঐহিত্যমূল্য বোঝেন। তবু তিনি জানালেন দুইশ’ বছরের পুরোনা বাড়িটি তিনি সংস্কার করে বসবাস উপযোগী করবেন।
অথচ সরকারি উদ্যোগে সম্ভব এ বাড়িটি সংরক্ষণ করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ঐতিহাসিক এ পুরাকীর্তিটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
পশ্চিম বাড়ি
বালিয়াটির জমিদারবাড়ির পশ্চিম অংশে অবস্থিত পশ্চিম বাড়ি। গোবিন্দরামের ছেলে দাধীরাম ছিলেন পশ্চিম বাড়ির জমিদারদের পূর্বপুরুষ।
এই বাড়িরই সুযোগ্য উত্তরসূরী জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী ১৮৮৪ সালে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করেন।
পশ্চিম বাড়ি সংলগ্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতল একটি ভবনটি কিনে নিয়ে বসবাস করছেন কয়েকটি পরিবার। এ বাড়ির ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার সম্পর্কে জানতে চাইলে কোনো কিছুই জানাতে পারলেন না এর বর্তমান বাসিন্দারা।
পাশেই প্রায় ধ্বংস হয়ে পরিত্যক্ত ভবনটি রংমহল ছিল বলে জানালেন বাসিন্দারা। এর পাশের সুরম্য ও দৃষ্টিনন্দন প্রবেশ কেল্লা। যে কাউকে মুগ্ধ করার মতো হলেও সংরক্ষণের অভাব ও অবহেলায় ধ্বংস হতে বসেছে এটি। সরকার এখনো উদ্যোগ নিয়ে মূল কাঠামো সংস্কার করে টিকিয়ে রাখতে পারে অনন্যসুন্দর এই প্রাসাদকেল্লাটি।
উত্তর বাড়ি
গোলাবাড়ির কিছু আগেই উত্তর বাড়ির অবস্থাও একইরকম। আধা ধ্বংসপ্রাপ্ত এই দ্বিতল ভবন টিকে রয়েছে কোনোমতে। বাড়ির সামনে রান্না করছিলেন এক গৃহবধূ। এ বাড়ির প্রত্নমূল্য কিংবা ঐতিহ্য সম্পর্কে কিছুই জানেন না তিনি।
মধ্যবাড়ি
পূর্ব বাড়ির সরকারি কর্মচারী ও এলাকার অনেকের সঙ্গে আলাপ করে শুধু জানা গেল মধ্যবাড়ির এখন কোনো অস্তিত্ব নেই। ।
পূর্ব বাড়ির বর্তমান
২০১০ সালে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে দেশব্যাপী পরিচিতি পায় বালিয়াটি জমিদারবাড়ি। এরপর থেকে শুরু হয় পর্যটকদের নিয়মিত আনাগোনা। এখানে ১২ জন কর্মচারী রয়েছেন।
লতিফ নামে এক কর্মচারী জানালেন, তারা ১২ জন ভেতরে প্রাসাদ-২ ও অন্দরমহল-২ এর কয়েকটি রুমে থাকেন। রুমে ঢুকে দেখা গেলো তাদের ব্যবহারে নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্য। তবে সেদিকে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
এসব কর্মচারীরা তেমন শিক্ষিত নন। এছাড়া প্রাসাদ ও ইতিহাস সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানা নেই তাদের। পর্যটকদের কোনো ধারণা দিতে পারেন না তারা। বরং পদে পদে তাদের অসহযোগিতার শিকার হতে হয় পর্যটকদের।
এর বাইরেও বাড়ির দেখভালেও তাদের তেমন আগ্রহ নেই। অনেকেই পর্যটকদের ভিড়ে ঘুরে বেড়ালেও কোনো প্রশ্ন বা তথ্য জানাতে পারছেন না তারা।
কিভাবে যাবেন
মানিকগঞ্জ থেকে সড়ক পথে বাস, টেম্পু বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাওয়া যায় বালিয়াটিতে। মানিকগঞ্জ শহর থেকে এর দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। বাস ভাড়া ১৫ টাকা। তবে এখানে নেই কোনো খাবারের হোটেল ও রাত্রিযাপনের কোনো ব্যবস্থা।
তবে ঢাকার গাবতলী থেকে এসবি লিংক ও জনসেবা বাসে সাটুরিয়া যাওয়া যাবে। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৬০-৭০ টাকা। সাটুরিয়া পৌঁছে সেখান থেকে রিকশা বা ভ্যানে করেও যাওয়া যায়।
সাপ্তাহিক বন্ধ
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি রোববার পূর্ণদিবস আর সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে। অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও বন্ধ থাকে। এছাড়া শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য দুপুর দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে।
প্রবেশ
জমিদার বাড়িতে প্রবেশের জন্য টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা। তবে বিশেষ দিবস ও উপলক্ষে কর্মচারীরা জোরপূর্বক ২০ টাকা করে আদায় করেন । এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় অনেককে।
পর্যটক মত
প্রাসাদ-২ থেকে বেড়িয়ে আসার পথে রাখা মন্তব্য বইতে মন্তব্য করতে গিয়ে বেশ সময় নিয়ে পড়ে নিলাম প্রায় জনাবিশেক পর্যটকের মন্তব্য।
বেশিরভাগ পর্যটক ঢাকা ও আশপাশ থেকে আসা। বেশিরভাগের আক্ষেপ, কালের এ ঐতিহ্য অন্যান্য পুরাকীর্তির মতোই তার স্বকীয়তা হারাতে বসেছে। যে সংস্কার হয়েছে তাতেও আদি নির্মাণশৈলীর পরিবর্তন ঘটেছে।
কেউ কেউ লিখেছেন, এ ঐতিহ্য রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে এবং কর্মচারীদের অহযোগিতা কমাতে শিক্ষিত ও এ বিষয়ে দক্ষদের নিয়োগ দিতে হবে।
এছাড়া এখানে যাতায়াত সহজ হলেও খাবার ও আবাসের সরকারি ব্যবস্থার দাবিও জানিয়েছেন অনেকে।
তবে বেশিরভাগ মন্তব্যের সারকথা যথাযথ ও দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে বালিয়াটি প্রাসাদের পুরাকীর্তি।
প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।
আর একটা কথা, লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে একদম ভুলবেন না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৪