ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

মালয়েশিয়া ভ্রমণ-শেষ পর্ব

টুইন টাওয়ার, যেনো পৃথিবীর চূড়ায়!

ফারিহা কবির চৈতি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৭ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৫
টুইন টাওয়ার, যেনো পৃথিবীর চূড়ায়!

পূর্ব প্রকাশের পর…

পরদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাই বসে গেলাম ঘুরাফেরার প্ল্যান নিয়ে। ঠিক করলাম টুইন টাওয়ার তো অবশ্যই ঘুরবো, পরে অন্য কিছু।



নাস্তা শেষে মামা আর আমি বের হলাম বিভিন্ন স্পটের খোঁজ নিতে। বের হয়েই দেখলাম ‘হপ-অন-হপ-অফ’ নামে ট্যুরিস্ট বাসের।  

জানা গেল, এই বাসে ২৪ ঘণ্টা ঘুরার জন্য কর্তৃপক্ষ একটা পাস দেয়। যার ম‍ূল্য ৮০ রিঙ্গিত। এটা দিয়ে পুরো কুয়ালালামপুর ঘুরে বেড়ানো যায়।

প্রতি ২০ মিনিট পর পর একটা করে বাস এসে পর্যটকদের নিয়ে যায়। এরপর নগরের প্রতিটা পর্যটন স্পটে থামবে, যারা ইচ্ছুক তারা ওই স্থানে নেমে ঘুরে দেখতে পারেন।

তবে চিন্তার কারণ নাই, এই বাস চলে গেলেও আসছে পরেরটা। যা দিয়ে গন্তব্যে যাওয়া যাবে। আমরাও ১২ জনের পাস কিনে নিলাম। আমাদের বাসের সময় নির্ধারিত ছিল সকাল ১০টায়। ঠিক ১০টায় আমাদের হোটেলের সামনে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়ালাম।

বাসের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। এলেই সবাই বাসে চেপে বসলাম। এরপরই ভেতরে একজন গাইড মাইকে পর্যটন স্পটগুলোর বর্ণনা ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরছেন।

আমরা যেহেতু চায়না টাউন থেকে উঠেছিলাম তাই শুনছিলাম-চায়নিজদের ইতিহাস এবং মালয়েশিয়া এ তাদের যাত্রা সম্পর্কে পুরা বর্ণনা।

এরপর ম্যাপ অনুযায়ী লিটল ইন্ডিয়া, প্রথমে ইচ্ছে না হলেও পরে এই স্ট্যান্ডে নেমে যাই। নেমে বিস্ময় যেন শেষ নেই! কারণ মনেই হয়নি যে আমরা মালয়েশিয়ায় আছি।

মনে হয়েছিল আমরা ভারতের কোনো জায়গায়। চারপাশে বড় বড় পোস্টারে শাহরুখ খানের ছবি, রজনী কান্তের পোস্টার সঙ্গে চলছে হিন্দি গানের সুর! আধিক্যও বেশি হিন্দি ভাষাভাষী লোকজনের।

আবার বাস আসতেই উঠে গেলাম পরের গন্তব্য গ্র্যান্ড প্যালেসের উদ্দেশ্যে। সেখানে নেমে পোজ দিয়ে বেশ কয়েকটি ছবি তুলে নিলাম। ঘুরা তো হলোই! অসাধারণ সুন্দর একটা জায়গা, তারপর গেলাম মিউজিয়ামে।

সেখানে গেলে মালেশিয়ার ইতিহাস জানা যাবে, কোন জায়গা থেকে আজ কোথায় অবস্থান করছে মালয়েশিয়া তা অনায়াশেই জানা যাবে। সঙ্গে ঐতিহ্যও।

এখানে মালয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান এবং বিয়েতে বর ও কনে কী পোশাক পরে তারও একটা ধারণা পাওয়া যায়। মিউজিয়াম দেখতেই লাগলো তিন ঘণ্টা।

সেখান থেকে বের হতে হতে দুপুর ১২টা বেজে গেল। একটু এগোতেই দেখি বাস চলে আসছে। সবাই বাসে উঠে গেলাম। গিয়ে নামলাম পরের গন্তব্য কিং প্যালেসে।

পরে একে একে লেক গার্ডেন, বাটারফ্লাই পার্ক এবং সব শেষে গেলাম বিখ্যাত পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার দেখতে।

কিন্তু দুর্ভাগ্য! দেখি আমাদের ওই দিনের সব টিকেট শেষ। ঘুরতে হলে ফের পরদিন টিকিট কিনতে হবে। তাই টুইন টাওয়ারের বাইরে ঘুরে আর শপিং করে দিনটা কাটিয়ে দিলাম, প্রাথমিক কিছু কেনাকাটা করে ফিরে এলাম হোটেলে।

পরদিন খুব সকালে ছ‍ুটে গেলাম টুইন টাওয়ারের টিকিট সংগ্রহ করতে। কারণ আটটার আগে লাইনে দাঁড়াতে না পারলে ওইদিনের টিকিট টা মিস হবে! 

সকালের শান্ত আর মুগ্ধ করা শহরের কাউন্ট‍ারে গিয়ে পাসপোর্ট ও রিঙ্গিত নিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। বিশাল লম্বা লাইন।

তবে সকাল-সকাল গিয়ে মেয়েদের লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পেয়ে গেলাম। বিকেল ও সন্ধ্যার টিকিট পাওয়ায় বেশ সুবিধে হলো-টুইন টাওয়ার থেকে দিন এবং রাতের দৃশ্য অবলোকন করা যাবে।

একসঙ্গে ১২ জনের টিকিট কিনতে দেখে কাউন্টারে দায়িত্বরত নারী জিজ্ঞেস করলেন-কোথা থেকে এসেছি?
বাংলাদেশের কথা শুনে সহাস্যে বললো- তুমি কী জানো প্রতিবছর তোমার দেশ থেকে কত মানুষ এখানে আসে? বললাম- সংখ্যা জানি না, তবে এইটুকু জানি অনেক বাংলাদেশি আসে।

সেখানে এক বাংলাদেশি মেয়ে পেছন থেকে ডেকে বললেন- আপনি বাংলাদেশি? আমিও আমার মাকে নিয়ে এসেছি। তার সঙ্গে কথা-বার্তা হলো!

পরে হোটেলে ফিরে সবাইকে নিয়ে বের হলাম টুইন টাওয়ার দেখার উদ্দেশ্যে। প্রথমে লিফটে করে ৪৬তলায় নেওয়া হল, সেখানে থেকে স্কাই ব্রিজে! স্কাই ব্রিজ দিয়ে একটা টাওয়ার থেকে আরেকটা টাওয়ারে যেতে হয়।

সেখান থেকে আবারও লিফটে নেওয়া হল টুইন টাওয়ারের চ‍ূড়ায়। এরপর সেখান থেকে টাওয়ারের চ‍ূড়ায়। উঠে মনে হল যেনো পৃথিবীর চূড়ায় আছি আমরা!

কিছুক্ষণ অবস্থানের পর সেখানে থেকে টুইন টাওয়ারের নিচে। ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা খাওয়া আর ছবি তোলা তো ছিলই।

উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই ফিরে গেলাম হোটেলে। পরদিন প্ল্যান ছিল বাঁটু কেভস যাওয়ার।

বাঁটু কেভস থেকে ‍ফিরে ঘুরে দেখলাম মনোরম কুয়ালামপুরে। যেনো বারবার দেখতে ইচ্ছে করে মায়াবী শহরটিকে! তবে যেতে হতো হবেই... আর এভাবেই ইতি টানতে হলো এশিয়ার ‘ইউরোপ’ মালয়েশিয়া ভ্রমণের।

প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।

আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।  

প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন- 
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৬ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৫
এমএ

** কুয়ালালামপুর, যেন ফুটন্ত পদ্মফুল!
** লাংকাউইয়ের পথে প্রান্তরে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।