মুম্বাই থেকে ফিরে: এশীয় অঞ্চলে ডায়মন্ড ব্যবসার জন্য পরিচিত নাম মুম্বাই। আর এসব ব্যবসায়ীদের পছন্দের আবাস অভিজাত মালাবার হিলে।
প্রায় গোটা মুম্বাই শহরের মতো মালাবার হিলও আরব সাগরের কোলঘেঁষে। পুরো শহরটিই যেন গড়ে উঠেছে পাহাড় কেটে। রাস্তাও উঁচু-নিচু। এর মধ্যেই বড় বড় বিল্ডিং, আর দামি দামি গাড়ির ছুটে চলা।
আমরা ট্যাক্সিতে। মেরিন ড্রাইভ থেকে রওয়ানা করার কিছুক্ষণ পরেই চালক একটি বাড়ির সামনে এসে একটু স্লো করলেন। পাশের একটি ৬-৭ তলা বাড়ি দেখিয়ে বললেন, এটা পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর বাড়ি। আমরা ছবি তুলতে গেলাম। অমনি দূর থেকেই তেড়ে এলেন দু’তিনজন রক্ষী। তাদের হাতে অস্ত্র। হিন্দিতে কি সব বললেন দ্রুতগতিতে তা বুঝতে পারলাম ন। তবে এটুকু বুঝতে সমস্যা হয়নি যে তারা ছবি তুলতে নিষেধ করছেন। ট্যাক্সিচালকও অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত টানলেন। ততক্ষণে অবশ্য কয়েকটি স্ন্যাপ নেওয়া শেষ।
অবশ্য ছবি তুলতে না দেওয়ার কারণ জানতে পারিনি, পরে জানার চেষ্টাও করিনি। সেটা জানতে চাওয়াটাও হয়তো বিপদ ডেকে আনতে পারে দূর প্রবাসে। ছয়দিনে মুম্বাইয়ে আম্বানির বিখ্যাত বাড়িসহ নামিদামি বলিউড তারকাদের বাড়ির ছবি তুলেও এমন বাধার সম্মুখীন হইনি।
যাইহোক মালাবার হিলের উঁচু-নিচু পাকা সড়কের আশপাশে চোখ রাখতে রাখতে আধাঘণ্টার কিছু বেশি সময়ে পৌঁছে গেলাম হ্যাংঙ্গিং গার্ডেনে। বেশ ছিমছাম, পরিপাটি, গোছানো। সবুজ বাগান। ঠিক ছবিতে দেখা ইউরোপ, আমেরিকার পার্কগুলোর মতো।
মালাবার হিলের সবচেয়ে উঁচু অংশে এ উদ্যান। চারদিকে উঁচু ৫ ফুটের মতো। প্রতিষ্ঠিত প্রায় ১২৫ বছর আগে। ফিরোজশাহ মেহতা গার্ডেন নামেও এর পরিচিতি রয়েছে। এর ঠিক অপর পাশে কমলা নেহেরু পার্ক। এই পার্ক ও উদ্যান থেকে টপ ভিউতে মুম্বাই শহর ও আরব সাগর দেখা যায়।
উদ্যানে ১০-১৫ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠেই চোখ আঁটকে যাবে সবুজ গরু, পাখি, ঘোড়া, ময়ূর, হাতি, জিরাফে। তবে সত্যিকারের নয়, সব ফ্রেম করে কাটা গাছের। যেন মনে হয় প্রাণীগুলো সব জন্মেছে গাছ হয়ে।
সবুজ লনের মাঝ দিয়ে রাস্তা। পুরোটাই খোলামেলা। রয়েছে পর্যাপ্ত বসার বেঞ্চ। শিশু-কিশোরদের সময় কাটানোর জন্য দারুণ একটি জায়গা। মর্নিং কিংবা ইভনিং ওয়ার্কে বেরিয়ে এখানে হাঁটতে আসেন অনেকে।
প্রচণ্ড রোদে আমরা তিনজন হাঁটাহাঁটির খুব সাহস পেলাম না। তবে সবুজ গরুর গাড়ির সামনে ছবি তুলে যেন মন জুড়ালো।
উদ্যানে ঢোকার আগে ধারণা ছিলো ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান টাইপের কোনো বাগান হয়তো দেখবো। কিন্তু সেদিক দিয়ে কিছুটা হতাশ হতে হলো। চারদিকে উঁচু এবং পাহাড়ি এলাকার সবচেয়ে উঁচু জায়গায় অবস্থিত হওয়ায় হয়তো একে বলা হয় হ্যাংঙ্গিং গার্ডেন।
ঠিক রাস্তার অপরপাশে কমলা নেহেরু পার্ক। গাছগাছালিতে ভরা। রয়েছে বিশাল একটি জুতা। বলা যায় জুতার ঘর। শিশুদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় এটি। এখান থেকে সবচেয়ে ভালোভাবে টপ ভিউ থেকে দেখা যায় আরব সাগর ও মুম্বাই শহরের সৌন্দর্য। তখন বোঝা যায় আমরা বেশ উঁচু জায়গায় আছি। গোটা শহর আমাদের নিচে। তাই মুম্বাইয়ের এ দৃশ্য উপভোগ করার জন্য হলেও একবার ঢুঁ মারতে পারেন এখানে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০১ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৫
এএ
** এটাই তো বলিউডি মুম্বাই!
** মুম্বাইয়ের ‘বাজু’তে দিনভর ঘোরাঘুরি
** সাগরকোলে হাজি আলী দরগা
** বলিউড তারকাদের বেহাল জুহু বিচ!
** প্রথম দর্শনেই মুম্বাইপ্রেম, চিকিৎসায় মন ভালো
** মনভোলানো খানাপিনায় ২৬ ঘণ্টায় মুম্বাই
** সোনার হরিণ ট্রেন টিকিট, অতঃপর হাওড়া স্টেশন
** ৫৫২ টাকায় ঢাকা থেকে কলকাতা