মুম্বাই থেকে ফিরে: মুম্বাই পা রাখার আগে খাবার-দাবার নিয়ে ছিলাম বেশ চিন্তায়। তাতে সঙ্গে আবার রোগী।
তখনো ডাক্তার দেখানো শেষ হয়নি। সবে শুরু। তাই খাবার-দাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে দাম, খেতে পারা না পারা সবই ভাবতে হচ্ছিলো। প্রথম খাবার খেতে হলো নানাবতী হসপিটালের ক্যানটিনে। অধিকাংশ মানুষকে দেখলাম দোসা খেতে। প্রথমদিন, তাই দোসায় সাহস হলো না। তাছাড়া সঙ্গে অসুস্থ খালা। ভয়ে ভয়ে মেন্যুবুক দেখে অর্ডার করলাম এগ বিরিয়ানি। পরিবেশন, কালার দেখেই মনে হলো খেতে ভালো হবে। ঠিক তাই। প্রতি প্লেটে দু’তিনটি করে ডিম কেটে দেওয়া। স্বাদও অসাধারণ। সঙ্গে টক দই আর অন্থনজাতীয় এক ধরনের খাবার। হজমের জন্য এ ব্যবস্থা। দাম মাত্র ৯০ রুপি।
এবার রাতের খাবারের পালা। মুম্বাইজুড়ে যে খাবারটি সবচেয়ে বেশি মানুষ খায় সেটি সম্ভবত পাউভাজি। কিন্তু রাতে আমরা খাওয়ার সাহস করলাম না এই যে না জানি কেমন লাগে! গেলাম হোটেলের পাশে সান্টাক্রজে। সবাই পরামর্শ দিলো পুরোপুরি ভেজ রেস্টুরেন্ট সাবরিতে যেতে।
প্লেন ডাল ভাত, ডাল খিঁচুড়ি, লেমন রাইস ফ্রাই, ভেজিটেবল রাইসসহ বিভিন্ন মেন্যু দেখে খিঁচুড়ি আর ভেজিটেবল রাইস নিলাম পারসেল। দামও খুব বেশি না। ৯৫ রুপি প্রতি প্যাকেট। তিনটি নিলে চারজনে ভালো মতো খাওয়া যাবে। খিঁচুড়ি আমার খুব বেশি পছন্দের খাবার নয়। কিন্তু এতো মজার খিঁচুড়ি আমি কখনো খাইনি। যে কদিন ছিলাম সুযোগ পেলেই খেয়েছি গো-গ্রাসে।
শুধু নানা ধরনের সবজি দিয়ে ফ্রাইড রাইসও ছিলো চমৎকার। মুম্বাইয়ের মানুষ মাছ মাংস খায় না বললেই চলে। তেমন হোটেলও চোখে পড়েনি। ছয়দিনে আমরা সত্যি মাছ মাংস খাওয়ার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। হয়ে গিয়েছিলাম পুরো সবজিভোজী। তার জন্য একটুও খারাপ লাগা ছিলো না।
সকালে হোটেলে বুফে খাবার ছিলো। আলু পরাটা আর ডিম মামলেট ছিলো আমাদের পছন্দের। তাছাড়া জেলি, জ্যাম পাউরুটি তো ছিলোই। আর সঙ্গে আম, জলপাইয়ের আচার।
সকাল হলেই দেখতাম হোটেলের কোনায় ভিড় জমে থাকে। আর সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাউরুটি খায়। আগ্রহভরে একদিন জানলাম এটাই পাউভাজি। বিশেষ এক ধরনের কড়া মশলাযুক্ত তরকারিজাতীয় ঝোলের সঙ্গে গরম করা পাউরুটিই হলো মুম্বাই মাতানো খাবার পাউভাজি। ঝোল না বলে অবশ্য ভাজি বলাই ভালো। কারণ তাদের কাছে এটাই ভাজি। এই খাবার ছাড়া দিন চলে না মুম্বাইবাসীর।
হোটেলগুলোতে চলে চলে মুড়ি মুড়কির মতো। বড় তাওয়ায় একের পর এক মশলা দিয়ে তৈরি হয় পাউভাজির ‘ভাজি’। চৌকো করে কুচো পিঁয়াজ, লেবু থাকবে সঙ্গে। হোটেল সাবরিতে দাঁড়িয়ে দেখলাম পুরো প্রক্রিয়া। কিনলাম ১০৫ টাকার। তা দিয়েই হয়ে গেলো চারজনের। ভয়ে ভয়ে মুখে দিলেও খেতে ভালোই লাগলো। বুঝলাম কেন এত কদর আমাদের কাছের সাধারণ পাউরুটির। মুম্বাই গেলে খেতে ভুলবেন না কিন্তু!
এছাড়া পিঁয়াজু, ডালপুরির সঙ্গে পাবেন ২০ রুপি দামের কচুরি। কচুরিতেও সঙ্গে মশলাটাই বেশি চটকদার। একটিতে সারা হয়ে যাবে নাস্তা।
মুম্বাইয়ের যত্রতত্র আরও যে জিনিসটি পাবেন সেটি হলো ফলের জুস। দোকানের অভাব নেই। রাস্তার পাশে পাবেন মাত্র ৫ রুপির শরীর জুড়ানো লেবুর শরবতও। এটি সত্যি মজাদার। জুসের দোকানে পাবেন আম, আনারস, বেদানা, তরমুজ, মুসম্বি, মাল্টার জুস। দামও খুব বেশি না, ২০ থেকে ৮০ রুপির মধ্যে।
মুম্বাইয়ে এখন প্রচুর আঙুর হয়। তাই আঙুর বেশ সস্তা। ৬০ থেকে ৯০ রুপিতে মানভেদে কিনতে পারবেন ১ কেজি আঙুর। আমরা কদিনে ফল খেতে ভুলিনি।
তাই মুম্বাই গিয়ে খাবার নিয়ে থাকুন নিশ্চিন্ত। আর যেসব খাবারের কথা বললাম সুযোগ হলে খেয়ে দেখতে পারেন। খরচ কিন্তু একেবারেই কম!
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৫
এএ
** মুম্বাই-কলকাতার কড়চা-১১
** চোখের সামনে আম্বানির বিলিয়ন ডলারের বাড়ি!
** ডায়মন্ড ব্যবসায়ীদের মালাবার হিলে ‘ঝুলন্ত উদ্যান’
** এটাই তো বলিউডি মুম্বাই!
** মুম্বাইয়ের ‘বাজু’তে দিনভর ঘোরাঘুরি
** সাগরকোলে হাজি আলী দরগা
** বলিউড তারকাদের বেহাল জুহু বিচ!
** প্রথম দর্শনেই মুম্বাইপ্রেম, চিকিৎসায় মন ভালো
** মনভোলানো খানাপিনায় ২৬ ঘণ্টায় মুম্বাই
** সোনার হরিণ ট্রেন টিকিট, অতঃপর হাওড়া স্টেশন
** ৫৫২ টাকায় ঢাকা থেকে কলকাতা