ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পর্যটনের নতুন দিগন্ত উড়ি ঘাসে মোড়া সবুজ সৈকতে

বিপ্লব পার্থ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৫
পর্যটনের নতুন দিগন্ত উড়ি ঘাসে মোড়া সবুজ সৈকতে ছবি: উজ্জ্বল ধর/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: সবুজ প্রকৃতি।   সমুদ্রের বিশালতা।

  থেমে থেমে গর্জন।   দিগন্ত জুড়ে বর্ণিল আলোকছটা।   দৃষ্টিতে প্রতিনিয়ত আভা ছড়ানো সৌন্দর্য।   আলোয় ভরা বিস্মৃত আঙিনা।   নানা শ্রেণিপেশার মানুষের সমারোহে প্রাণবন্ত।

না, বিদেশি কোন পর্যটন কেন্দ্র নয়।   বলছিলাম, প্রাচ্যের রাণী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কাট্টলী সমুদ্র সৈকতের কথা।   প্রথম দেখাতেই যে কারো মন হরণ করে নিবে এ সমুদ্র সৈকত।  

উড়ি ঘাসের সবুজ সৈকত, ম্যানগ্রোভ বন, আঁকাবাঁকা খাল, পাখির ঝাঁক, ডিঙ্গি নৌকা, জালটানা জেলে, সাগরের বুকে ভাসমান জাহাজ, এ যেন কল্পনার সৌন্দর্য্যকেও হার মানায়।

সন্ধ্যা হলে তারার মতো জ্বলে ওঠে সাগরের বুকে জাহাজগুলো। কাট্টলী সমুদ্র সৈকতের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এর শান্ত সৌম্য সৌন্দর্য্য। নির্জন এ সৈকতে তাই প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড়।

বিপুল সম্ভাবনা থাকা স্বত্তেও প্রচার ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের এ আধারে ঘটেনি পর্যটন শিল্পের বিকাশ। বাংলাদেশ পর্যটন সংরক্ষিত অঞ্চল ও বিশেষ পর্যটন অঞ্চল আইন ২০১০ অনুযায়ী পর্যটন সম্ভাবনাময় যে কোন স্থানকে সরকার পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ও ঘোষণা করতে পারলেও কাট্টলী সমুদ্র সৈকতকে নিয়ে নেই কোন উদ্যোগ।    

চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে পাহাড়তলী থানার সাগরিকা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাশে অবস্থিত এ সৈকত ২০০৫ সাল থেকে জনপ্রিয়তা লাভ করে। বন্দর থেকে ফৌজদারহাট এবং সাগরিকার সঙ্গে এ সৈকতে যাওয়ার সংযোগ সড়ক স্থাপনের পরপরই পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। এর বিশেষত্ব হলো ম্যানগ্রোভ বন যা পতেঙ্গা বা কক্সবাজারে পাওয়া যাবেনা।

এছাড়া অন্যান্য সৈকতের মতো এখানে ভাসমান হকারদের ঝামেলা নেই। পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করতে এখানে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি পার্ক। যেমন- নিঝুম পার্ক, নিরিবিলি নিরুপমা পার্ক ও শুকতারা পার্ক।

কাট্টলী সমুদ্র সৈকতে স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে আসা সদ্যবিবাহিত আজিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘সমুদ্রের বিশালতা কিংবা মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখার জন্য কক্সবাজারের থেকেও অনেক সুন্দর কাট্টলী সমুদ্র সৈকত। এখানে ম্যানগ্রোভ বন, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য সব একসঙ্গে দেখা যায়। আপনজনের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর জন্য এ সৈকতই সেরা।   তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা একটু খারাপ। ’

কাট্টলী সমুদ্র সৈকতকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে পর্যটক সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

কাট্টলী সমুদ্র সৈকতে কোমল পানীয় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রতিদিন এখানে অনেক মানুষ বেড়াতে আসে। শুক্রবার ও শনিবার ভিড় একটু বেশি থাকে।   মূল সড়ক থেকে প্রায় ২০০০ ফুট অংশ কাঁচা রাস্তা হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় দর্শনার্থীদের। রাস্তা ঠিক থাকলে দর্শনার্থীদের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী।

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা) খালেদ বিন মাজিদ বাংলানিউজকে জানান, দেশের প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসকদের সম্ভাবনাময় পর্যটন অঞ্চল নিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক যদি কাট্টলী সমুদ্র সৈকতের বিষয়ে আমাদেরকে চিঠি দেন আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ’

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘কাট্টলী সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে।   এ ব্যাপারে আমি শীঘ্রই পর্যটন কর্পোরেশনের কাছে চিঠি লিখব। ’

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৫
বিপি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।