(পূর্ব প্রকাশের পর)
বৃষ্টি থেমে গেছে। গোমড়ামুখো আকাশের নীচে ভাটির বাড়ন্ত জলরাশি কেটে নৌকা ছুটেছে লক্ষ্মণ ছড়ার দিকে।
দূর থেকে উঁকি মেরে মেটাতে হলো দর্শন তৃষ্ণা। এযাত্রা অনেকটা যেন সাফারি পার্ক প্রদক্ষিণের মতো। নির্ধারিত গাড়ি দর্শনার্থীদের যেমন নিয়ে যায় একেকটি আবেষ্টনীতে, তেমনি আমাদের নিয়েও নৌকা ছুটেছে মন ভোলানো একেকটি স্পটে। বোনাস সীমান্তের ওপারের খাসিয়া জয়ন্তিয়া পাহাড় সারির।
মেঘের আড়ালে কখনো কখনো ঢেকে যাচ্ছে বাঁকগুলো, কখনো আবার দৃশ্যপটে হাজির পাহাড় সারির বুক বেয়ে নেমে আসা দুধ সাদা জলরাশির ঝরনা ধারা। আকাশ এখন গাঢ় নীল না। কালো মেঘে ছেয়ে গেছে দিগন্তের নীলিমা। এখানকার সবুজের এক ধরনের নেশা ধরানো মাদকতা আছে। সঙ্গে অবিশ্রান্ত বৃষ্টির রিনিঝিনি এমন এক দৃশ্য কল্প হাজির করছিলো, মনে হলো আমরা কি ভিনগ্রহে হাজির হয়েছি?
চোখে বিস্ময়ের বিরতি পড়তে দিলো না পানতুমাই। কিছুক্ষণ আগে কুলুম ছড়ার যে রূপ দেখে এসেছি এর সৌন্দর্য তার চেয়েও ভয়ংকর! নিয়মের বেড়াজালে খুব কাছে যাওয়ার উপায় নেই। দূর থেকেই শোনা যাচ্ছিলো জলরাশির গর্জন। এর এমনই শক্তি যে জলকণা পাথুরে শিলাখণ্ডের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে উঠে যাচ্ছে আকাশ পানে মেঘ হওয়ার বাসনায়।
এবার বাঁধনহারা ফটোসেশনের পালা। এমন সুযোগ কি প্রতিদিন আসে? জলধারাকে পেছনে পেছনে রেখে একেকজন দাঁড়াচ্ছি আর মিতুর ক্যামেরা চলছে ফটাফট।
প্রকৃতিদেব ঠিক করেছেন এ গল্পের ব্যাপ্তি আরও বাড়াবেন। বিছানাকান্দি এখনও বাকি আছে। কুলুম ছড়া, লক্ষ্মণ ছড়া,পানতুমাই হয়ে এলে বিছানাকান্দি পড়বে সবশেষে। দিনভর বৃষ্টিতে ভিজে ঠাণ্ডায় হি হি করে কাঁপতে কাঁপতে সবার কাহিল অবস্থা। একটু উষ্ণতা চাই। ঠিক হলো বিছানাকান্দির পাথুরে বিছানায় লম্ফ ঝম্প মেরে চাঙা হয়ে নেবো।
পাথরের দুর্ভেদ্য সারি উপেক্ষা করে বয়ে যাচ্ছে পানির স্রোত। গা ভাসালাম সেখানে। দূরে খাসিয়া জয়িন্তা পাহাড়ের ফাঁক গলে মেঘ বৃষ্টি হয়ে হানা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্রোতস্বিণী জলের আয়নায় তার ঘোরলাগা প্রতিবিম্ব। সমুদ্রসৈকতের চেয়ে কম কি বিছাকানাকান্দি?
৭
দূরের আকাশ ছুঁতে চাওয়া পাহাড়সারির পটভূমিতে দাঁড়িয়ে বিছানাকান্দি শহুরের মানুষের কাছে হতে পারে ভূস্বর্গ বাংলাদেশের আরেকটি প্রতিচ্ছবি। সময়ের স্রোতে গা ভাসালে কিন্তু চলবে না। সে ধর্ম মেনে ফিরে যাওয়ার পালা যে এবার। দিনব্যাপী এতো প্রাপ্তির মাঝে একমাত্র অপূর্ণতা কাছের সীমান্ত হাট মিস করা।
[শেষ]
মনোযোগ
সিলেট শহরের আম্বরখানা থেকে হাদারপার যাওয়ার সিএনজি পাওয়া যায়। জনপ্রতি ভাড়া ৮০ টাকা। সারা দিনের জন্য ভাড়া করলে খরচ পড়বে ১৪শ থেকে ১৫শ টাকা। তবে দলে ভারী হলে সারা দিনের জন্য লেগুনা ভাড়া করাই বুদ্ধিমানের কাজ। খরচ পড়বে ২২শ থেকে ২৫শ টাকা। হাদার পাড় থেকে বিছানাকান্দি যাওয়ার নৌকা পাওয়া যাবে। দিন ভেদে ভাড়াও কম বেশি করে। তবে উচিত হবে কুলুম ছড়া, লক্ষ্মণ ছড়া ,পানতুমাই এবং বিছানাকান্দির যাওয়ার জন্য একেবারে দিন চুক্তিতে নৌকা ভাড়া করা। খরচ ২২শ থেকে ২৫শ’র মতো। বর্ষায় এখানকার সৌন্দর্য ভুবন ভোলানো। তবে এ মৌসুমে গেলে যারা সাঁতার জানেন না তারা অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট নিয়ে যাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৫
এএ
** মেঘ পাহাড় আর জলের গানে (পর্ব-১)