ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

সবুজে মোড়ানো ‘জল ও জঙ্গলের কাব্য’ | ফারুক আহমেদ

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৫
সবুজে মোড়ানো ‘জল ও জঙ্গলের কাব্য’ | ফারুক আহমেদ

জ্যোৎস্নায় ভরে গেছে উঠোন। তার ওপর ঝুঁকে আছে একটা পেয়ারা, দুটা বকুল, তিনটা শিউলি।

এরকম নানা বৃক্ষ আর জল, অপার আকাশ আর বয়ে চলা হাওয়ার মাতম—ঘিরে রেখেছে জল ও জঙ্গলের কাব্য নামক একটি প্রশান্তিকে।



একটু বিমূর্ত—জল ও জঙ্গলের কাব্য। মনে হয়, কবিতা থেকে টেনে আনা পঙক্তি, প্রশান্তি দেয়, কিন্তু দৃশ্যে আসে না। মানবীর মতো, রহস্য করে, দেখার বাসনা নিয়ে অদেখার ভেতর থাকে। তবে জল ও জঙ্গলের কাব্য বিমূর্ত কিছু নয়। ঢাকার অদূরে পুবাইলে এর উপস্থিতি। মহাসড়ক থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট একটা রাস্তায় নেমে যেতে হবে। সে রাস্তা দিয়ে কিছুদূর এগুলে সকালের রোদে এলিয়ে থাকা ঘাসে মোড়ানো উঠোন, সবুজের সমারোহ, পুকুর—এসবের একটা আখ্যান পাওয়া যাবে।

আসলে জল ও জঙ্গলের কাব্য নামটা শুনেই মনে হলো একবার যাওয়া দরকার। এ নাম তো অন্য দশটার মতো না। নিশ্চয়ই আলাদা কিছু হবে। এসব ভাবনা মাথায় ছিল। এ পার্কের কারিগর কামাল মাহমুদ, বিমান চালাতেন, এখন সবুজ নিয়ে চলেন। নাম্বার পেয়ে ফোন করি। তিনি বলেন, একদিন চলে আসেন।

একা কিভাবে যাই, এরই মধ্যে বউও যে জেনে গেছে জল ও জঙ্গলের কাব্যের কথা। রওনা করে খুব বেশিক্ষণ নয়। পুবাইলে ঢাকা-সিলেটগামী মহাসড়ক থেকে বাঁ দিকে নেমে গিয়ে আরো মিনিট পনেরোর পথ। তারপর ঢুকে গেলাম একটা ছোট বেষ্টনীর ভেতর। ঢুকে দেখা গেল, বেশ কিছু গাড়ি পার্ক করা। অতিথির সংখ্যা যে কম নয় তাতে, আন্দাজ করা যায়। সদর গেইট থেকে একজন আমাদের নিয়ে গেল কামাল ভাইয়ের ডেরায়। যেতে যেতে মনে হলো ‌এ ছোট বেষ্টনীর ভেতর বৃহৎ সরোবর।

কামাল ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো। তিনি বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন। বাঁশের মাচা, তার উপর ছনের ছাউনি, নিচে পানি টলোমল। তিনি কটেজ থেকে নেমে এসে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন। জানতে চাইলাম, তার এই সবুজ-শান্তিময় উদ্যোন তৈরির কাহিনী। তিনি জানালেন, তেমন কোনো গল্পই নাই। মূল গল্প আছে পাশের জঙ্গলে। এটাকে বাঁচাতে, এর প্রাণীদের খরপোষের জন্য কিছু ব্যয় তো আছে। আর পুরো জায়গাটাকে অবিকল রাখা, এখানে পাখি-গাছ সব যেন ঠিকঠাক থাকে, তার জন্য প্যাকেজের ব্যবস্থা। কিছু মানুষ আসে। তার থেকে যে আয়, ওটা দিয়ে এখানকার পরিবেশটা অবিকল রাখা যায়। এর বেশি কিছু নয়। তিনি জানালেন, বরং ঘুরে দেখলে, এখানে যারা কাজ করে, তাদের সঙ্গে কথা বললেই প্রকৃত গল্পের সন্ধান পাওয়া যাবে। আসলে তিনি নেপথ্যেই থাকতে চান। গল্পের আড়ালে গিয়ে নিজের জগতে থাকা আর কি।



জল ও জঙ্গলের কাব্য’র ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন জনাব মোতালেব। তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে কামাল ভাই জানালেন, মোতালেবই খুব ভালো বলতে পারবে, এই অর্ধেক রিসোর্ট, অর্ধেক মায়াময় গ্রাম সম্পর্কে। মোতালেব ভাইকে তো সবকিছু সামলাতে হয়, কতজন এলো তার হিসাবে, কী খাওয়াতে হবে, সবাই ঠিকঠাক সেবা পাচ্ছে কী-না—এ সবকিছু। ফলে তার জন্য আমাদের অপেক্ষা একটু করতে হবে। অপেক্ষা মানে একটি আম গাছের নিচে চেয়ারে পেতে বসে গায়ে বাতাস লাগানো। এর সঙ্গে চায়ের কাপে চুমুক। মনে হলো, এ অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হলেও মন্দ কী!


৯০ বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা জল ও জঙ্গলের কাব্যে বেশ কিছু কটেজ রয়েছে। চারদিক খোলা, উপরে ছনের ছাউনি, ভেতরে সোফা, বিছানা, ফ্যান এসব নাগরিক সুবিধা আছে। কিন্তু নগরের তীব্রতা নাই। সবুজ গাছ, সবুজ ঘাস, কটেজ সব মিলেমিশে একাকার। আর বড় উঠোনের পাশে বড় রান্নাঘর। সেখানে মশলা বাটছেন, তরকারি কুটছেন আমাদের গ্রামের চাচী-খালারা। আছে পানির উপর কাঠের মাচা, নৌকা দাঁড়িয়ে আছে বিলের পানিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য। পেয়ারা গাছ থেকে মন চাইল পেয়ারা পেড়ে খেতে, তাও আছে। তবে দুপুরের খাবারটাকে মনে হলো ভিন্নমাত্রার কিছু। ভাত, খুব কম তেলে পোলাও, শাক, সবজি, তিন-চার পদের ভর্তা, মাছ ভাজি, ছোট মাছের তরকারি, মুরগির ঝাল ফ্রাই। আয়োজন অসাধারণ, স্বাদ অপূর্ব।


সারাদিন সবুজ দেখো, মাচায় গা এলিয়ে দাও, পানিতে নেমে সাঁতার কাটো, মন খুলে হাসো, যখন ইচ্ছা চা খাও—সব আছে। আর বিকাল হলে বাউল গান। মন কী এক আচানক আনন্দে নেচে ওঠে। এই বিশাল শহর থেকে আর কতটুকুই বা দূর। এত নিকটে, এত প্রশান্তি! আর জল ও জঙ্গলের কাব্য’র প্রতিটি মানুষের আন্তরিকতা ভোলার মতো নয়। যে সেবা তারা দেন, তা পাঁচ তারকা হোটেলের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সারাদিনের জন্য মাত্র ১,৫০০/= টাকা গুনে সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, বিকালের নাস্তা, অফুরান চা, বাউল গান, ঘাসের ঘ্রাণ—কত কী! মোতালেব ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ জন্য ০১৭৯২৯২৯৭২৭ অথবা ০১৯১৯৭৮২২৪৫ এই দুই নাম্বারে কল করতে হবে। তাতে জানা যাবে যাওয়ার পুরো বিবরণ এ খরচাপাতি।



ফিরে আসতে মন চায় না। কিন্তু আসতে হলো। ওইদিন আসার সময় কামাল ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো না। এমন আপ্যায়নের পর যে ধন্যবাদটা—তা পকেটে করে নিয়ে আসতে হলো। আসলে এটাও একটা অজুহাত, পরেরবার আবার যাওয়ার। ওখানে একবার গেলে অনেকবার না গিয়ে উপায় কী!

বাংলাদেশ সময়: ০২১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।