চট্টগ্রাম থেকে ফিরে: বাস্তব জীবনে ব্যস্ততাই যেন সবার নিত্যদিনের সঙ্গী। প্রতিদিনের কর্মক্লান্ত জীবনে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষ চান একটু প্রশান্তি।
ইদানিং পকেটে একটু বেশি টাকা থাকলেই ভ্রমণবিলাসী মানুষ ঘুরতে যান দেশের বাইরে। সেদিন এক বন্ধু বলছিলো তার স্ত্রীকে নিয়ে ইন্ডিয়া যাবে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে। বাংলাদেশে নাকি দেখার মতো কিছুই নেই। আসলেই কি তাই?
যাই হোক প্রসঙ্গে ফিরি। ক’দিন আগে অফিসের কাজে গিয়েছিলাম চট্টগ্রামে। সেখানকার সুউচ্চ পাহাড় দেখে ভ্রমণ পিপাসুরা মুগ্ধ হতে বাধ্য। এমনই এক অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার, আর সবুজ পাহাড়ে ঘেরা চট্টগ্রামের ফয়'স লেক।
মন মাতানো ফয়'স লেক
এখানে ঘোরার জন্য হাতে কম সময় নিলে মজা পাওয়ার কথা নয়। বরং আফসোস বাড়বে। কারণ পুরো লেকটি ৩৩৬ একর জায়গা নিয়ে তৈরি। যার প্রতিটি স্থান ঘুরে দেখতে বেশ সময় লাগে। তাই যারা ঘুরতে যাবেন তাদের উদ্দেশ্য বলা ফয়'স লেক দেখতে, সময়টা একটু বেশি নেওয়াই ভালো।
আট থেকে নয় জনের একটি গ্রুপ ফয়েজ লেকের ভেতরে ঢুকলাম। মূল ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকলে প্রথমে মনে হবে এ আর নতুন কি? এমন দৃশ্য তো অন্যান্য পার্কেও রয়েছে। ছোটদের খেলা আর বিনোদনের জন্য তৈরি করা হয়েছে মজার মজার সব রাইড। যার মধ্যে রয়েছে ফেরি উইল, অ্যাপোলো ফ্লাইট, ফাইবার সিপ, চেরি বাম্পার, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, বাম্পার কার এবং ভিডিও গেমসহ বিভিন্ন ধরনের রাইড।
এসব দেখতে দেখতে বেশ আনন্দ আর উচ্ছ্বাসেই কাটলো কিছুটা সময়। আমাদের সাহায্যে করলেন ফয়'স লেকের মার্কেটিং ম্যানেজার বিশ্বজিৎ ঘোষ।
একটু ঘুরে যতই ভেতরে যাচ্ছিলাম ততই মুগ্ধ হলাম সবাই। এ যেন ক্রিমে ভরা কেকের মতো। চারপাশে কেক আর মাঝখানে ক্রিম।
হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম বোট স্টেশনে। সেখান থেকে ইঞ্জিন বোট নিয়ে রওনা দিলাম অজানার উদ্দেশে। কিন্তু ভেতরের দৃশ্য দেখে সবাই বাকরুদ্ধ। সবুজ পাহাড় ঘেরা মন ভোলানো সুসজ্জিত লেক।
সবার হাতের স্মার্ট ফোন আর ক্যামেরায় বারবার ছবি তোলার ক্লিক ক্লিক শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। যাবে নাই বা কেন? এমন দৃশ্য দেখার সময় নিজেকে ছবির ফ্রেমে বন্দি করতে কার না মন চায়।
দু-পাশের এই সৌন্দর্য দেখতে দেখতে হঠাৎ বন্ধুটির কথা মনে পড়ে গেলো। এত সুন্দর বাংলাদেশ অথচ ভ্রমণ করতে যায় বিদেশে। বন্ধুর উদ্দেশে কবিতার লাইনগুলি বারবার মনে হচ্ছিল-
‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া,
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া,
একটি ধানের শিষের উপরে,
একটি শিশির বিন্দু’।
লেক পার হয়ে আমরা এলাম ওয়াটার পার্কে, এখানে পানিতে খেলার জন্য তৈরি করা হয়েছে নানারকম রাইড। আর প্রকৃতি-প্রেমীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে রিসোর্ট। কেউ চাইলে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে আরো বেশি আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।
কি কি পাবেন ফয়'স লেকে
পুরো এলাকাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যার একভাগের নাম ফয়'স লেক এমেউসমেন্ট ওয়ার্ল্ড অন্যটি সি ওয়ার্ল্ড (ওয়াটার পার্ক)। এমেউসমেন্ট ওয়াল্ডে খেলাধুলার জন্য পাবেন ফেরি উইল, অ্যাপোলো ফ্লাইট, ফাইবার সিপ, চেরি বাম্পার, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, বাম্পার কার, ড্রাই স্লাইড, সার্কাস এবং ভিডিও গেমসহ নানা ধরনের খেলার রাইড।
এখানে রয়েছে তিনটি রেস্টুরেন্ট। যার একটি লেকভিউ রেস্টুরেন্ট। আরেকটি অ্যাডভেঞ্চার রেস্টুরেন্ট অন্যটি ফ্লোটিং (ভাসমান) রেস্টুরেন্ট।
সিয়া ওয়াল্ডে (ওয়াটার পার্ক) রয়েছে পানিতে খেলার জন্য বেশ কয়েকটি রাইড। যেটা বাংলাদেশের সব থেকে বড় ওয়াটার পার্ক। এখানকার রাইডগুলোর মধ্যে রযেছে, ওয়েভ পুল, টানেল স্লাইড, ফ্যামিলি পুল, টিউব স্লাইড, মাল্টি স্লাইড, চিলড্রেন পুল, ড্রাই স্লাইড। আর নাচের জন্য রয়েছে ড্যান্সিং জোন।
এতসব সৌন্দর্য দেখার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসুরা এখানে এসে ভিড় জমায়।
সময় কম থাকায় পুরো ফয়'স লেকটি ঘুরে দেখা হয়নি। ফেরার সময় লেক ভিউ রেস্টুরেন্টে লেকের পাশে বসে যে যার পছন্দের খাবার খাওয়া ছিল আরেক অ্যাডভেঞ্চার।
সুখের সময় বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। তাই তো ফিরতে হলো লেকের সেই মনোরাভিরাম সৌন্দর্যের মহল থেকে। ফেরার সময় নিজেকে সান্ত্বনা দিলাম এই ভেবে-‘ আবার আসিবো ফিরে ফয়'স লেকে সৌন্দর্যের ভিড়ে’
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৫
জেডএফ/পিসি