প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে: মনে ছিলো অনেক স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণে যাযাবরের মতোই এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাড়ি দিচ্ছেন বেশ কিছু তরুণ।
তারা সবাই বাংলাদেশের। কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকার এসব তরুণের সঙ্গে দেখা হলো ফ্রান্সের ব্যস্ত প্যারিসের একটি সড়কে।
তাদের কেউ ছয় মাস থেকে ৫ বা ৬ বছর ধরে ফ্রান্সে থাকলেও এখনো কারো মেলেনি বৈধতার সনদ। নেই ভালো বেতন পাওয়ার নিশ্চয়তাও। আছে কেবল পুলিশের ভয়।
কৃষিশ্রমিকের পরিচয়ে ভাগ্য বদলের অাশায় দেশ থেকে ইতালি পাড়ি দিয়েছিলেন এসব যুবক। তবে কাজ আর বেতন কোনোটাই স্বস্তি দেয়নি। তাই একটু ভালো বেতন আর সুযোগ-সুবিধার জন্যে সেখান থেকে চলে আসেন স্বপ্নের দেশ ফ্রান্সে।
আশা ছিলো, কপাল খুলবে, খোলেনি।
কুমিল্লার তিতাস এলাকার বেলাল হোসেন জানান, দুই বছর ধরে এ দেশে এলেও এখনো বৈধ হতে পারেননি তারা। কাজের জন্যে পথে পথে ঘুরছেন। তেমন ভালো কাজও পাচ্ছেন না। পেলেও বেতন কম। কারণ, বৈধ কাগজপত্র না থাকলে সহসা কেউ কাজ ও দিতে চান না।
একই এলাকার আনিস মিয়া ফ্রান্সে আছেন দুই বছর। তারও একই দশা, কোনো কাগজপত্র নেই।
ইতালি পর্যন্ত এসেছিলেন কৃষিশ্রমিক হিসেবেই। তবে সুবিধা না হওয়ায় এতো পথ পাড়ি দিয়ে এ দেশে এসেও দেখা মেলেনি সোনার হরিণের।
তাদের অনেকে চাকরি নিয়েছেন বাংলাদেশি পরিচিত বা পরিচালিত রেস্টুরেন্টে। অনেকে চাকরি খুঁজছেন।
একই পরিস্থিতি মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুর শরিফুলেরও। কুমিল্লার দাউদকান্দির টিপু সরকার ইতালি হয়ে আজ ৫ বছর ফ্রান্সে। তারও কাগজপত্র মেলেনি। এ অবস্থায় কোনো ভরসা পাচ্ছেন না ছয়মাস আগে এখানে আসা কুমিল্লার লিটনও।
তারা বাংলানিউজকে জানান, দালালদের মোটা অংকের অর্থ দিয়ে তবেই ইউরোপে আসতে পেরেছেন তারা। বলা হয়েছিলো, ইতালি থেকে ফ্রান্সে পাড়ি দিলে কিছুদিন কষ্ট হবে। পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।
তবে পুরনোরাই যেখানে বৈধভাবে থাকার কোনো কাগজপত্র পাননি, সেখানে নবীন অভিবাসীরা কিছুতেই ভরসা পাচ্ছেন না।
আবার ইউরোপ থেকে দেশে ফিরে গেলে অভিবাসন ব্যয়টাই জলে যাবে- এ অাশঙ্কায় দাঁতে কামড় দিয়ে প্রবাসে ‘সুখের দিনের’ আশায় পড়ে রয়েছেন তারা।
এসব প্রবাসী বাংলানিউজকে জানান, এখানে টিকে থাকতে নানাভাবে আশ্রয় চেয়েও ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। দেশে হয়রানি, হুমকি আর নিরাপত্তাহীন- এসব ইস্যুতে আশ্রয় চাইলেও বিস্বাসযোগ্য প্রমাণের অপেক্ষায় মিলছে না রাজনৈতিক আশ্রয়।
এভাবেই স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট নিয়ে প্রবাসে ছুটে বেড়াতে হচ্ছে আশ্রয় প্রত্যাশী এসব প্রবাসীদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৬
জেডআর/ এএসআর