দার্জিলিং ঘুরে: পাহাড় থেকে পাহাড় পেরিয়ে তবেই যেতে হবে লাভা। রাজুর হিসাব অনুযায়ী সাত পাহাড় পার হতে হবে।
মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে উচ্চতা পরখ করতে করতে একসময় উঠে গেলাম প্রায় ৭ হাজার ফুটের কাছাকাছি। নিচের পাহাড়ের গায়ে প্রদীপের মতো ঝুলতে থাকা বাড়িগুলো তখন দূর আকাশের তারার মতো মিট মিট জ্বলছে। পাহাড়ে সন্ধ্যা নামলে ঠান্ডাও বাড়তে থাকে। আমাদের গাড়ির গ্লাসও বন্ধ হলো ক্রমে। একটু এগিয়ে উঁচু পাহাড়ে দেখা মিললো আরেক তারার রাজ্য। রাজু বললো ওটাই লাভা শহর।
গরুবাথান থেকে ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে পৌঁছালাম লাভা। এটি মূলত লেপচা ও ভুটিয়া অধ্যুষিত এলাকা। কিছু হোটেল আছে বাঙালি। শহরটি উঠে গেছে খাঁড়া নিচু থেকে উঁচুতে। লাভা মনেস্ট্রিকে যদি নিচ ধরা হয় তাহলে জাদুঘরটি উঁচুতে। যাইহোক পাহাড়ের গায়ে ক্লাসিক নামে একটি হোটেলে হলো আমাদের আবাস।
পানির সংকট এখানে প্রকট। পানি আসে নিওরা ভ্যালি থেকে। সরু চিকন পাইপে পৌঁছে যায় সবার ঘরে। খরচও করতে হয় বেশ। এটা টের পেলাম হোটেলে উঠে। কাপড় ধোয়া নিষেধ। আর বিছানা চাদর, কম্বল কোনোকিছুই খুব পরিষ্কার বলে মনে হলো না। কারণ এখানে প্রতিদিন কাচা সম্ভবও নয়। এটা মেনে নিয়েই থাকতে হবে বুঝলাম। যদিও হোটেলটির আসবাব থেকে শুরু করে অন্য সবই ভালো। এখানে খাবারের দামও বেশি। দুর্গম এলাকা হিসেবেই পরিচিতি এটি। তাই সব জিনিস একটু বেশি দামেই কিনতে হয়।
জীবনযাপন অতি কষ্টের। রাতে আশপাশের দোকানপাট ঘুরে দেখলাম সবাই মিলে। কিছু নেপালি আর চীনা জিনিস মেলে এখানে। তবে দার্জিলিংয়েও পাওয়া যাবে ভেবে সেগুলো আর কেনা হলো না। রাতের খাবার হিসেবে এলো রুই মাছ, সবজি আর ডাল। সঙ্গে পাপড়। খাবার মন্দ নয়।
এপ্রিল-মে মাসের ঠান্ডা বেশ গা-সওয়া। পাতলা সোয়েটার পরলেই চলে সন্ধ্যায়। সকালেও তাই। লাভা মনেস্ট্রি এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। বেশ বড় ও সুন্দর। বড় বড় চক্র আছে ওখানে। চক্রগুলো ঘুরিয়ে মানত করতে হয়। মনেস্ট্রির চারপাশের পাহাড়টিও চমৎকার। লম্বা লম্বা পাইন আর ফাঁকে ফাঁকে মেঘের খেলা।
শহরটি বিল্ডিংয়ের পর বিল্ডিংয়ে ঠাসা। পর্যটন থেকে এখানকার অন্যতম আয় আসে। এছাড়া রয়েছে এলাচ চাষ। সবকিছু কিনে খেতে হয় গায়ে লেখা দাম থেকে বেশি দামে। শহরে উপর-নিচ ওঠা-নামা বেশ কষ্টকর। হাঁপিয়ে উঠতে হয় অল্পতেই। বন্ধ থাকায় শহরের উপরের জাদুঘরটি আর দেখা হলো না। পরবর্তী গন্তব্য পাহাড়ি বন, ক্যানোপি, পার্ক আর কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউয়ের লোলেগাঁও। সকালে লেপের ওম ভেঙে উঠতে হবে সাতটায়।
চলবে......
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৬
এএ