ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

মেঘের রাজ্য সাজেকে

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৬
মেঘের রাজ্য সাজেকে

সাজেক (বাঘাইছড়ি, রাঙ্গামাটি) থেকে: ভোরের আলো ফোটার আগে অথবা সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহূর্তে পাহাড়ের উপর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেই মেঘ ভেসে যাবে আপনার চারপাশ দিয়ে। আর এসময় যদি বৃষ্টি হয় তাহলে দেখা যাবে, বৃষ্টির মধ্যে মেঘ ভেসে যাওয়ার দৃশ্য।

আর এ সময় মেঘ-সূর্যের লুকোচুরিতে সবুজ পাহাড়গুলো হয়ে উঠে আরও আকর্ষণীয়।
 
এমন দৃশ্য প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযের অপরূপ লীলাভূমি পাহাড়-টিলার রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকের। সেখানে গেলে দেখা যাবে, পাহাড়ের গায়ে সব সময় চলে মেঘের নাচন। আবার দূর থেকে দেখলে মনে হয়, পাহাড়ের গায়ে ডানা মেলেছে মেঘ।
 
রুইলুই পাড়া ও কংলাক পাড়া নিয়ে গঠিত ‘সাজেক’ এর সবুজ পাহাড়ের চূড়া ঘিরে রয়েছে সাদা মেঘের আবরণ। দিগন্ত বিস্তৃত উপত্যকা মিশে গেছে মিজোরামের নীল পাহাড়ে (ব্লু মাউনটেইন)। বর্ষায় সাদা তুলোর মতো ছোট ছোট মেঘের স্তুপ ভেসে বেড়ায় পাহাড়ের বুকে। উপত্যকার সামনে দাঁড়িয়ে মনে হবে এই কি অপার্থিব সৌন্দর্য! সাজেকের এই অসাধারণ দৃশ্য এই দুটি পাড়া থেকেই উপভোগ করা হয়।
 
সাদা মেঘে ঢেকে যাওয়া রুইলুই পাড়া, কংলাক পাড়া ও সাজেক ভ্যালির পাহাড় চূড়া। সেখানে গেলে বর্ষায় মেঘের দল আপনাকেও ভিজিয়ে দেবে। পাহাড়ের আকাশে মেঘের পেখম থেকে অঝোর ধারায় নামে বৃষ্টির ধারা।
 
রুইলুই পাড়ার সাজেক পয়েন্টে একটি হেলিপ্যাড রয়েছে। হেলিপ্যাডের সামনেই ‘সাজেক পয়েন্ট’ ফলক উদ্বোধন করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এছাড়াও এখানে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) শেষ বর্ডার আউট পোস্ট।
 
রুইলুই পাড়ায় সাজেক রিসোর্ট ও রুনময় রিসোর্ট নামে দুটি রির্সোট আছে সেনাবাহিনী পরিচালিত। এনজিও সংস্থা আলো পরিচালিত আলো রিসোর্ট ছাড়াও সেখানকার বাসিন্দাদের পরিচালনায় আরও ১৫-২০টি রিসোর্ট রয়েছে। এখানে হরাইজোন গার্ডেন, স্টোন গার্ডেন ও ঝাড়ভোজ পিকনিক স্পট নামে তিনটি গার্ডেন আছে। প্রতিটি গার্ডেনের প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা।
 
সাজেকের শেষ গ্রাম রুইলুই পাড়া থেকে ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের হাঁটা পথে দুই কিলোমিটার দূরের কংলাক চূড়া। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ২শ’ ফুট উপরে সাজেকের এই গ্রামটি। কংলাক পাড়া থেকে দেখা যাবে পুরো মেঘের রাজ্যটিকে। লুসাইদের মতে, কংলাক পাহাড়ই দেশের সবচেয়ে সবচেয়ে উঁচু চুড়া।
 
পাহাড় দেখার উপযোগী সময় বর্ষাকালেই এ দৃশ্য সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায়। কারণ এই সময়ে কম-বেশি বৃষ্টি হয় পাহাড়ে। কচকচে সবুজের বেষ্টনিতে কেবলি বৃষ্টির বড় বড় ফোটা! বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর রূপ ফুটে বের হয় তার। সাদা মেঘের কুণ্ডলী বিস্তৃত গভীর উপত্যকা বেয়ে ওঠে। সাদা মেঘে ঢেকে যায় পুরো ভ্যালি, এ যেন মেঘের উপত্যকা।
 
বিশাল পাথর খণ্ডের কোল ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকা রুইলুই পাড়ায় আদিবাসী লুসাইদের বসবাস। এদের নেতৃত্বে রয়েছেন হেডম্যান লাল থাংগা লুসাই।
 
সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে রাঙ্গামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম ও পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দিঘীনালা উপজেলা। সাজেকের রুইলুই পাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ৮শ’ ফুট উঁচুতে। এখানে লুসাই, পাংখোয়া ও ত্রিপুরাদের বসবাস।
 
১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সাজেকের প্রথম বসতি ‘রুইলুই পাড়া’। ২০১৪ সালের তথ্যানুযায়ী ৬০৭ বর্গমাইল এলাকার জনসংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। সাজেক থেকে ভারতের মিজোরাম সীমান্তের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৬
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।