এতো পরিবর্তন! সম্প্রতি আহমেদাবাদ সফরে গান্ধী আশ্রম থেকে সবরমতীর বাঁধানো তীর দেখে অনেকটা বিস্মিত হয়েছিলাম। এবার গঙ্গা দেখে।
এই গঙ্গা, সেই গঙ্গা! মেলানো সত্যি কঠিন। বর্জ্যের আবাস, দুর্গন্ধ নেই। পুরো পাড় বাঁধানো। প্রিন্সেপ ঘাটের পাশ দিয়ে নয়নাভিরাম বিদ্যাসাগর সেতু যুক্ত করেছে কলকাতার সঙ্গে হুগলিকে।
সুন্দর, পরিপাটি, সাজানো, গোছালো বাঁধানো পাড়ে বিশুদ্ধ বাতাসে নিশ্বাস নেওয়ার মতো সব ব্যবস্থাই রয়েছে। বাইরের সারিবদ্ধ গাড়ির লোকগুলো যে সব এখানে সেটা বুঝতে বাকি রইলো না। বিদেশি পর্যটকও কম নেই।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়ের একটি নামফলক থেকে জানা যায় এ সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ উদ্বোধন হয় ২০১২ সালে। প্রায় ৮ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হলেও বাকি অনেক। এতেই লোকে লোকারণ্য।
মানুষ সময় কাটাতে এখানে আসবেই বা না কেন। নির্ভেজাল পরিবেশে ঘুরতে এসে যা চায় তার সবই আছে এখানে। যতদূর হাঁটবেন সঙ্গ দেবে রবীন্দ্রনাথের ভুবনভোলানো সব লিরিক্যাল গান। সাউন্ড সিস্টেমটাও এমন যে কানে লাগে না। মনে হয় প্রকৃতিকে উদ্ভাসিত হয়ে কানে লাগছে সুরেলা কথাগুলো।
গঙ্গাপাড়ের বড় বড় গাছগুলো কাটা হয়নি। বাংলাদেশের উন্নয়ন কাজের শুরুতেই গাছ কাটার যে প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, এখানে ঠিক তার বিপরীত বলেই মনে হলো। সৌন্দর্যবর্ধনের মৌলিক কাজের জন্য যেগুলো কাটা পড়েছে সেগুলোর ক্ষতি পোষানোর জন্য যে নতুন গাছ কয়েকগুণ বেশি বসেছে সেটাও টের পাওয়া গেলো।
বিদেশি বিভিন্ন পার্কে দেখতে পাওয়া নান্দনিক বেঞ্চের মতো বেঞ্চও বসেছে এখানে। ডাস্টবিনগুলোর ডিজাইনেও রয়েছে ভিন্নতা। ময়লা গিলে ফেলে আনন্দে হাসছে প্রত্যেকে। সে কুমিরই হোক অথবা পান্ডা। সব বয়সী মানুষ দেখা মিললো টেমস তীরের আদলে গড়ে তোলা এ তীরে। কেউ এসেছেন প্রিয়জন নিয়ে, কেউ পরিবার, কেউ জগিংয়ে, কেউ বৈকালিক হাঁটায়। সবাই সবার মতো করে উপভোগ করছেন। ভিতরে প্রশস্ত ওয়াকওয়ের একটু পরপরই রয়েছে নিরাপত্তারক্ষী। পুলিশ রয়েছে সেখানে। খাবারের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত দোকান। বিনোদনের জন্য ৪-৫শ টাকায় নৌকা ভ্রমণও বাদ নেই। ঐতিহাসিক প্রিন্সেপঘাট, বাবুঘাটের মতো ঘাট রয়েছে কয়েকটি। ঘাটগুলো দিয়ে স্টিমারে পার হয়ে যাওয়া যায় হাওড়া ব্রিজ।
আলো কমতে শুরু হলেই সৌন্দর্য যেনো পেখম মেলে বসে গঙ্গাপাড়ে। পাড়ের বিশালকায় বৃক্ষ আর বিদ্যাসাগর সেতুর ফাঁকগলে লাল সূর্যটা আস্তে আস্তে হারিয়ে যায় সন্ধ্যার অতলে। শুরু হয় মমতার নীল-সাদার কারসাজি। বিলাতি বাতি জ্বলে উঠলে রূপ বদলায় গঙ্গাপাড়। একটু পর চঞ্চলতা শুরু হয় ঝরনাগুলোর। বিদ্যাসাগর সেতু ও হাওড়া ব্রিজের আলোগুলো জ্বলে ওঠে একই সঙ্গে। নদীর পানিতে সে আলোর ঝলকানি তৈরি করে নতুন সিম্ফনি।
কোটি মানুষের কলকাতায় যেটি সম্ভব হয়েছে ঢাকায় সেটি কেন নয়। বুকভরা নিশ্বাস নেওয়ার মতো এমন করে দূষিত বুড়িগঙ্গাকে তো সাজিয়ে তোলাই যায়। পরিকল্পনাগুলো বাস্তবতায় রূপ পাক।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৭
এএ