মধ্যবিত্ত পরিবারে সাধারণত যা, হয় ভাব এসে যায় বিদেশ যাব কেন? পুরো দেশটিই এখনও দেখা হয়নি। দেশের মধ্যে অনেক সুন্দর শহর রয়েছে তা আগে দেখে নিই।
অন্য একটি বড় বিষয়, আমার মধ্যে সবসময় কাজ করতো- আমার মা চাইতেন না আমি বিদেশ যাই। মা তার ছোটছেলেকে কখনও হাতছাড়া করতে চাননি। আমি ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। এখনও বড় হতে পারিনি! চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বিদেশে গিয়ে পড়ালেখা করার কথাও চিন্তা করিনি। এজন্য আমার দুলাভাই ডা. মাহবুব আহমদ ও আপা সৈয়দা তাহেরা খায়রুন্নেছা দীর্ঘদিন ইরানে থাকা সত্ত্বেও বেড়ানো হয়নি। দুলাভাই এর কথা, ‘খুব সুন্দর দেশ ইরান চলে আয়। অনেকদিন থাকবে ও ঘুরে দেখবে’। তখন আমার বিয়ে হয়নি। একা থাকি, তাও যাইনি।
আমার স্ত্রী চুনির বোন ডা. পান্না আপা ও দুলাভাই ডা. ইসকান্দর জুলকারনাইন কার্ডিয়াক সার্জারির কনফারেন্সে কলকাতা যাবেন। মনের মধ্যে খুব একটা ইচ্ছা ছিলো না, তারপরও চুনীকে খুশি করার জন্য কলকাতা যাওয়ার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই। এভাবে ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতা বেড়াতে যাওয়া। আমার জীবনের প্রথম বিদেশ সফর। আমরা ঢাকা থেকে বাসে যশোরের বেনাপোল গেলাম। তারপর ওপারে গিয়ে জিপ গাড়ি চড়ে কলকাতা গমন। দীর্ঘ যাত্রাপথে আমরা সবাই খুবই ক্লান্ত তবুও কোনোভাবে সাদার স্ট্রিট এর পাশে একটি হোটেলে ১৫০ রুপি করে দু’টি রুম নিয়ে থাকার ব্যবস্থা হলো। কিন্তু বিধিবাম। হোটেলটি বাইরে থেকে ফিটফাট দেখা গেলেও ভেতরের অবস্থা সদরঘাট। যাক কোনোভাবে রাত কাটিয়ে পরেরদিন প্লাজা হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করি। ৫০০ রুপি করে প্রতি রুম। থাকার সুন্দর ব্যবস্থা, ভালো লাগলো। এবার শুরু হলো শহর দেখার পালা। ঘুরে ঘুরে অনেক কিছু দেখলাম। ট্রাফিক সিস্টেম ভালো। রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটতেও মজা।
সকাল-বিকেল ঘুরে বেড়াতেও ভালো লাগলো। খাবার নিয়ে কলকাতার মানুষ খুব সচেতেন মনে হলো। সাদার স্ট্রিটের আশেপাশে দু’দিকে অনেকগুলো খাবারের দোকান দেখি। সবই আমার কাছে মানসম্মত মনে হলো। খেয়াল করলাম প্রায় সব দোকানেই ডাব আর ডাব। অনেকেই ডাব খেতে দেখি। এক পর্যায়ে আমিও তা খেলাম। কোক-ফান্টা তেমন কাউকে খেতে দেখিনি। বোঝা গেলো, ভারতীয়রা খুব স্বাস্থ্য সচেতন।
কলকাতা শহরের রাস্তার মোড়ে মোড়ে টেলিফোনের বুথ দেখি। এটা স্বাভাবিক বিষয় কিন্তু আসল ঘটনা অন্য জায়গায়। প্রতিটি বুথ স্বচ্ছ গ্লাস দ্বারা আবৃত। বাইরে থেকে কেউ কথা বলতে ভেতরে ঢুকলে তা সুন্দর ভাবে দেখা যায়। মনে হয়, যেনো প্রত্যেকের মধ্যে অন্যরকম শৈল্পিক ভাব রয়েছে। এখন মোবাইলের যুগ, এ সুন্দর দৃশ্য আর দেখা যাবে না।
আপা-দুলাভাইয়ের সঙ্গে সায়েন্স সিটিতে গেলাম। কনফারেন্স উপলক্ষে জমকালো গান, খাওয়া-দাওয়া হলো। প্রায় দশদিন কলকাতা থাকি। এক পর্যায়ে জাদুঘর দেখতে যাই। এর মধ্যে টুকটাক হিন্দি কথা শিখে ফেলেছি। জাদুঘর দেখার জন্য ১৫০ রুপি দিতে হলো, ভারতীয়দের জন্য তা আবার ১০ রুপি।
এবার দেশে ফেরত আসার পালা। পুনরায় জিপ গাড়ি চড়ে বেনাপোল এলাম। নজরে আসে, রাস্তার দু’ধারে ভারতীয় অংশে বড় বড় গাছ। আমাদের যশোর জেলার অংশে গাছগুলো ছোট ছোট। প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার্থে তারা সচেষ্ট।
যাক, ১০ দিনের ভারত সফরে তাদের দেশপ্রেম, অতিথি সমাদর, পর্যটন শিল্প— সবকিছু চোখে পড়ার মতো। আরও একটি ভালো বিষয় যা না বললেই নয়, যেকোনো দোকানে কেনাকাটা করলে সঙ্গে সঙ্গে ক্যাশমেমো মেলে।
সবমিলে আমার প্রথম কলকাতা ভ্রমণ বেশ ভালো লেগেছিল। যাদের সামর্থ রয়েছে তাদের মাঝে মধ্যে বিদেশে বেড়ানো উচিত। অনেক কিছু জানা ও শেখা যায়। তবে নিজের দেশকেও ভালোভাবে ঘুরে দেখা প্রয়োজন।
সৈয়দ ছলিম মো. আব্দুল কাদির
অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৭
এসএনএস