কোনো রকমে হাত মুখ ধুয়ে নাস্তার টেবিলে। এখানে চাইলেই যা খুশি পাওয়ার জো নেই।
এর ফাঁকে এক ঝলক দেখে নিলাম মানেভঞ্জন শহরটি। অর্ধেক নেপাল, আর অর্ধেক ভারতীয় এই শহরে নেপালি বংশোদ্ভূত মানুষজনই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারচেয়েও বড় পরিচয় হচ্ছে মানেভঞ্জন সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্কের প্রবেশ দ্বার। যারাই এ পার্কের ভেতর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার অবারিত সৌন্দর্য দেখতে চান তাদের মানেভঞ্জন আসতেই হবে। সব গুছিয়ে যখন পার্কের প্রবেশ দ্বারে পৌঁছালাম ততক্ষণে গাইড নিয়ে এক প্রস্থ নাটক হয়ে গেছে। বদলে গেছে গাইড পোর্টার। পার্কের এন্ট্রি ফি জনপ্রতি ২শ রুপি পরিশোধ করে, সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে যখন ট্রেক শুরুর প্রস্তুতি চলছে তখন আরেক দফা নাটকের পর যিনি আমাদের গাইড হিসেবে শেষ পর্যন্ত নিযুক্ত হলেন তার নাম ডম্বর। ছয় দিন এই ডম্বরই আমাদের পথ দেখিয়েছেন।
ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি মাথায় প্রথম কোনো হিমালয়ান ট্রেকে পা বাড়ালাম। গাড়ি চলাচলের পিচঢালা রাস্তা হলেও একেবারে খাঁড়া উঠে গেছে। ট্রেকের প্রথম দু’এক ঘণ্টা একটু কষ্টের। শরীর এ সময় উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেয়। মানেভঞ্জনের উচ্চতা ১৯শ ৪৩ মিটার। এ উচ্চতায়ই তো এর আগে আসিনি। আর এখান থেকে শুরু হলো কিনা ট্রেক। কিছুক্ষণ আগে যেখানে তীব্র ঠান্ডায় দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছিলো না যেখানে শরীর থেকে কুলকুল ঘাম ঝরতে লাগলো। পাশ দিয়ে ল্যান্ড রোভারে যাওয়া পর্যটকদের ভাগ্যবান মনে হচ্ছিলো। মেঘের চাদর ঢেকে দিয়েছে চারপাশ। সত্যি বলতে কি বান্দরবান ট্রেকিংয়ে অভ্যস্ত শরীর হিমালয়ের এই আবহাওয়ায় মানিয়ে নিতে খাবি খাচ্ছিলো। কিন্তু চলা থামালাম না। শুধু এটুকু মনে ছিলো ট্রেকটা শেষ করতে হবে। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পরে যখন চিত্রে পৌঁছালাম একটু যেন শ্বাস ফেলার ফুসরত পেলাম। চিত্রতে ভারি সুন্দর একটা মনেস্ট্রি রয়েছে। প্রেয়ার হুইল ঘুরিয়ে মনের ইচ্ছের কথা বলে দিলাম। শুধু ভালোভাবে ট্রেক শেষ হোক, আর কিছু চাই না। এর মধ্যে পায়ে হিমালয়ান জোঁকের উপস্থিতি টের পেলাম। বেটা লুকিয়ে রক্ত খেয়ে একেবারে ঢোল হয়ে আছে।
অনেককে দেখলাম চিত্রে পর্যন্ত গাড়ি করে এসে ট্রেক শুরু করলো। মানেভঞ্জন পর্যন্ত এই পথটুকু আসলেই খাঁড়া। ততক্ষণে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে। পাহাড়ের এ পাশ থেকে মেঘ এসে ওপাশে যাওয়ার পথে সঙ্গে আমাকেও উড়িয়ে নিতে চায়। এই বৃষ্টিকে কে বলবে রোমান্টিক! শো শো হাওয়া আর হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় দাঁতের ঠকঠক আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। পথ এখন আগের চেয়ে ভালো। হালকা হালকা চড়াই। কিন্তু মেঘের কারণে চারপাশে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আমাদের থামলে চলবে না। যেতে হবে বহুদূর।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৭
এএ
** পিচঢালা রাস্তার ওপারেই নেপাল
** ভালোয় ভালোয় পার বাংলাবান্ধা সীমান্ত